• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপন নিয়ে মত-দ্বিমত

   ২৭ জুন ২০২৫, ০৯:৪৯ পি.এম.
ছবি: সংগৃহীত

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কার্যালয় স্থাপন নিয়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে মতভেদ দেখা দিয়েছে। চলতি মাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায়, জাতিসংঘের এ ধরনের কার্যালয় স্থাপন দেশের অভ্যন্তরীণ নীতিতে হস্তক্ষেপের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে একাধিক সংস্থা। অনেকেই জাতিসংঘের কার্যালয় স্থাপনের পরিবর্তে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যক্রম পরিচালিত হয় এর প্রধান সদর দপ্তর সুইজারল্যান্ডের জেনেভা থেকে। তবে সরেজমিন মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ, সুরক্ষা ও কারিগরি সহায়তার লক্ষ্যে সংস্থাটির মানবাধিকার হাইকমিশনার বিশ্বের ১৮টি দেশে নিজস্ব কার্যালয় পরিচালনা করে। বাংলাদেশেও তারা একটি আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপন করতে চায়। অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখালে, প্রাথমিক পর্যায়ে একটি খসড়া চুক্তির ওপর আলোচনা শুরু হয় এবং উভয় পক্ষই এতে একাধিক সংশোধনী আনে।

চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে গত জুনে সদ্য বিদায়ী পররাষ্ট্র সচিবের আহ্বানে আয়োজিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা নিজেদের মতামত উপস্থাপন করেন।

সভায় জাতিসংঘ মিশনের সম্ভাব্য ‘স্ট্যাটাস’ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়- যেসব দেশে জাতিসংঘের কার্যালয় রয়েছে, সেগুলোর মানবাধিকার পরিস্থিতির সঙ্গে বাংলাদেশের বাস্তবতা আদৌ তুলনীয় কিনা।

আইনশৃঙ্খলা সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে জাতিসংঘের কার্যালয় স্থাপনের পরিবর্তে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। এছাড়া, পশ্চিমা ধ্যান-ধারণার আলোকে অভ্যন্তরীণ নীতিতে হস্তক্ষেপের আশঙ্কাও প্রকাশ করা হয়। জননিরাপত্তা বিভাগের প্রতিনিধি বাংলাদেশের বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে এ কার্যালয় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলেও মন্তব্য করেন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এ বিষয়ে একটি জাতীয় সংলাপ আয়োজনের পক্ষে মত দেন।

তবে আইন ও বিচার বিভাগের প্রতিনিধি সভায় উল্লেখ করেন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের রেজ্যুলেশনের মাধ্যমে মানবাধিকার হাইকমিশনারের যে ম্যান্ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে, সেখানে কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, বিষয়টি নিয়ে আরও গভীর ও খোলামেলা আলোচনা প্রয়োজন।

সাবেক রাষ্ট্রদূত ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘মানবাধিকার রক্ষা কিংবা নাগরিক অধিকার সংরক্ষণে আমরা যে খুবই উন্নত অবস্থানে পৌঁছেছি এ দাবি করা কঠিন। জাতিসংঘ তো জুলাইয়ের পর ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের মাধ্যমে আমাদের বলেই দিয়েছে কী কী করা দরকার। প্রশ্ন হলো, আমরা কি নিজেরা এমন কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন তৈরি করে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার সক্ষমতা বা সদিচ্ছা রাখি? সেক্ষেত্রে জাতিসংঘ ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে, এটা আমাদের স্বীকার করা উচিত। তারা কেবল সেখানেই আসে যেখানে সংকট থাকে। এখন প্রশ্ন হলো, আমরা কি মনে করি আমাদের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে সংকট আছে? যদি তা মনে করি, তবে জাতিসংঘের সহায়তা ইতিবাচক হতে পারে। আর যদি মনে করি আমাদের সংকট নেই বা ভবিষ্যতে হবে না, তাহলে বলা যেতে পারে আমরাই নিজেদের সক্ষম।’

এদিকে সদ্য বিদায়ী জার্মান রাষ্ট্রদূতও বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

উল্লেখ্য, বর্তমানে যেসব দেশে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কার্যালয় রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে সুদান, ইয়েমেন, তিউনিসিয়া, বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, মেক্সিকো, কলোম্বিয়া ও ফিলিস্তিন।

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ/ এমপি

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
৩ নির্বাচনের অভিযোগ তদন্ত এবং সুপারিশ প্রণয়ন কমিটি গঠন
৩ নির্বাচনের অভিযোগ তদন্ত এবং সুপারিশ প্রণয়ন কমিটি গঠন
আশুরা ৬ জুলাই
আশুরা ৬ জুলাই
যে কোনো সময় ভোটার তালিকাভুক্তির ক্ষমতা চায় ইসি
যে কোনো সময় ভোটার তালিকাভুক্তির ক্ষমতা চায় ইসি