• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১
টপ নিউজ
প্রগতি লাইফ ইন্সুইরেন্স কোম্পানী গুনাগরী সার্ভিসিং সেল কর্তৃক আয়োজিত সাপ্তাহিক উন্নয়ন সভা শেরপুরে বিজিবির ভারতে পাচারকালে ৬৩ কেজি শিং মাছ জব্দ বাকৃবিতে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার জুলাই ৩৬ হলের ১৫ ছাত্রী ফুলবাড়ীতে  চরাঞ্চলে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে  কিশোরী ও অভিভাবক সমাবেশ গোয়ালন্দে জুয়ার আসর থেকে ৮ জন গ্রেপ্তার বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শিশুদের দায় সরকার এড়াতে পারে না শিবির জাতীয় সংগীত মানে না, তাই ঐক্য অসম্ভব : নাছির দেশকে সুশৃঙ্খল অবস্থানে আনতে একটি কার্যকর নির্বাচন লাগবে মেহেরীন চৌধুরীর সমাধিতে বিমানবাহিনীর শ্রদ্ধা রাজবাড়ীতে ওয়ারেন্টভুক্ত ছয় আসামি গ্রেপ্তার

রাজশাহীতে অবৈধ যানবাহনের দৌরাত্মে বাড়ছে দুর্ঘটনা-প্রাণহানি

   ৪ জুলাই ২০২৫, ০৫:০৪ পি.এম.
অবৈধ যানবাহনের দৌরাত্মে বাড়ছে দুর্ঘটনা-প্রাণহানি

রাজশাহী ব্যুারো

রাজশাহীতে দিন দিন বেড়েই চলেছে অবৈধ যানবাহনের দৌরাত্ম্য। মাত্রাতিরিক্ত ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা, সিএনজি, ভটভটি ও বিভিন্ন অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকের মোটরসাইকেলসহ অসংখ্য যানবাহন শহর ও গ্রামাঞ্চলের সড়কে অবাধে চলাচল করছে। প্রশাসনের কার্যকর নজরদারি না থাকায় এসব অবৈধ যানবাহনের কারণে প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। বাড়ছে প্রাণহানি ও আহতের সংখ্যা। এতে উদ্বেগ বাড়ছে সাধারণ মানুষের মাঝে।

রাজশাহী নগরীর সাহেববাজার, লক্ষ্মীপুর, কাটাখালী, শিরোইল স্টেশন, বিসিক শিল্পনগরী, পবা, গোদাগাড়ী, বাগমারা ও চারঘাটসহ গ্রামীণ রাস্তাগুলোতেও দেখা যাচ্ছে অবৈধ যানবাহনের জটলা। চালকদের অধিকাংশেরই নেই বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স, নেই যানবাহনের বৈধ কাগজপত্রও। ট্রাফিক আইন অমান্য করে বিপজ্জনকভাবে গাড়ি চালানো, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, রাস্তায় যানজট সৃষ্টিসহ নানা অনিয়মের কারণে জনভোগান্তিও পৌঁছেছে চরমে।

সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, বিগত এক বছরে রাজশাহী জেলায় ছোট-বড় সড়ক দুর্ঘটনায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন সহস্রাধিক। যাদের বড় একটি অংশই অনিয়ন্ত্রিত গতি ও অবৈধ যানবাহনের কারণে দুর্ঘটনার শিকার হন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আহতরা মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছেন, যার ফলে তাদের দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার প্রয়োজন হচ্ছে।

এছাড়াও বেপরোয়া রিকশা ও অটোরিকশা চালকদের অনিয়ন্ত্রিত গতির কারণে বাড়ছে মাত্রাতিরিক্ত যানজট। অপেশাদার ও প্রশিক্ষণহীন এসব চালকরা নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই বেপরোয়াভাবে রিকশা ও অটোরিকশা চালাচ্ছেন সড়কে। এতে নগরীর অভ্যন্তরেও বেড়েই চলেছে দুর্ঘটনা। আর অদক্ষ এসব চালকদের কারণে দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে পথচারী, মোটরসাইকেল চালক, প্রাইভেট কার, রিকশা, ভ্যান ও অন্যান্য যানবাহনে থাকা যাত্রী কিংবা পথচারীদেরও।

সাধারণ জনগণ অভিযোগ করে বলেন, নিয়মিত নজরদারি ও আইনের সঠিক প্রয়োগের অভাবেই এমন নাজুক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সংকট নিরসনে প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা পালনেরও অনুরোধ জানান তারা। পাশাপাশি যথাযথ রোড-সেফটি পরিকল্পনা ও জনসচেতনতা বাড়াতে নানাবিধ কর্মসূচি হাতে নেওয়ারও পরামর্শ নগরবাসীর।

জানতে চাইলে মোখলেছুর রহমান নামের এক পথচারী বলেন, রাজশাহী ছোট ও ছিমছাম নগরী হিসেবে দেশব্যাপী প্রশংসীত। নগরীর পাশ দিয়ে বাস চলাচল করায় যানজটও তেমন ছিল না। তবে ক্রমেই অটো বা রিকশার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। অটোর ক্ষেত্রে দুই রং নির্ধারিত করে সকাল-বিকাল ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হচ্ছে না। আবার, রিকশার ক্ষেত্রে এমন নিয়ম নাই। তাই যানজটে নাকাল হচ্ছে নগরবাসী।

আব্দুল লতিফ নামের এক রিকশাচালক বলেন, চালকদের প্রশিক্ষণ ও নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন না থাকলে তো যে যার মতো চালাবেই। দুটো ভাড়া বেশি পাওয়া দিয়ে কথা। এখন যে কেউ ইচ্ছে করলেই রিকশা ও অটোরিকশার চালক হতে পারে। কিছু সিস্টেম চালু করা গেলে আমাদের জন্যও সুবিধা হবে।

পবা হাইওয়ে থানার ইনচার্জ (ওসি) মোজাম্মেল হোসেন বলেন, বেলপুকুর থেকে নাটোরের বেলঘরিয়া বাইপাস পর্যন্ত পবা হাইওয়ের আওতায় পড়ে। এই এলাকায় প্রতিদিন গড়ে দু-একটা করে দুর্ঘটনা ঘটে, যেগুলো কাউন্টেবল। তবে এর বাহিরেও ছোটখাটো ধাক্কা লাগার মত ঘটনাও ঘটে। মূলত অটোরিকশা, টেম্পু, ভটভটি, নছিমন-করিমনসহ থ্রি হুইলার জাতীয় গাড়ির কারণেই দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। তবে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

রাজশাহী জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মুখপাত্র) রফিকুল আলম বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত রাজশাহী জেলায় মোট ৬৭টি সড়ক দুর্ঘটনা সম্পর্কিত মামলা দায়ের হয়েছে। এ সকল সড়ক দুর্ঘটনায় মোট ৬৭ জন মারা গেছেন, আহত হয়েছেন আরও ১২ জন। জেলার বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে ৬৭টি।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার নুর আলম সিদ্দিকী বলেন, বাজার এলাকায় এখন যে পরিমাণে যানজট সেটা আগে আরও বেশি ছিল। অবৈধ রিকশার চলাচল নিয়ন্ত্রণে আমাদের অভিযান প্রতিনিয়তই চলছে। আমি সিটি কর্পোরেশন ও আরডিএ’কে বলেছি, তারা যেন আর নতুন করে অনুমোদন না দেয়।

পাশাপাশি রিকশাগুলোকেও কালারে আনার জন্য শক্তভাবে বলেছি, তারাও চেষ্টা করছেন। রিকশাগুলো দুটো কালারে হয়ে গেলে যানবাহনের পরিমাণ আরও কমে যাবে।
চালকদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনার প্রশ্নে তিনি বলেন, আসলে প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়টা তো আমাদের না। এটা সিটি কর্পোরেশনের দেখার বিষয়, যেহেতু তারা এতো পরিমাণে গাড়ির অনুমোদন দেয়। আবার তাদের যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতো তাহলেও একটা কথা ছিল। আমরা তাদের নিয়ে প্রতিমাসেই কোনো না কোনো প্রোগ্রাম করছি।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান বলেন, কাগজপত্রহীন রিকশা ও অটোরিকশা জব্দের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, অভিযান চলছে। পাশাপাশি চালকদের নির্ধারিত কোনো নিয়মের মধ্যে আনা যায় কি না সে বিষয়ে রাসিকের সাথে কথা বলে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়