আজ পবিত্র আশুরা: শোক ও ত্যাগের মহিমাময় দিন


ধর্মীয় ডেস্ক
আজ হিজরি ১০ মহররম— বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে পবিত্র আশুরা নামে পরিচিত। ‘আশুরা’ শব্দটি এসেছে আরবি ‘আশারা’ থেকে, যার অর্থ ‘দশ’। তাই মহররম মাসের দশম দিনকে বলা হয় ‘আশুরা’। ইতিহাস, শোক, ত্যাগ ও মহান শিক্ষা— এই বহুমাত্রিক তাৎপর্যে আশুরা বিশেষ মর্যাদার অধিকারী।
ইসলামের ইতিহাসে মহররম মাসকে ‘আল্লাহর মাস’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা যে চারটি মাসকে সম্মানিত করেছেন, মহররম তার একটি। এই মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ। বিশেষ করে আশুরার দিনটি রহমত, বরকত, মাগফিরাত এবং বেদনার দিন— যা মুসলিম উম্মাহর কাছে অপরিসীম তাৎপর্যপূর্ণ।
আশুরার ইতিহাস ও বৈশিষ্ট্য
ধর্মীয় বর্ণনা মতে, মানব ইতিহাসের বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে মহররমের এই দশম দিনে—
-
আদম (আ.)-এর সৃষ্টি ও তওবা কবুল।
-
নূহ (আ.)-এর প্লাবনোত্তর জুদি পাহাড়ে নৌকার স্থির হওয়া।
-
ইব্রাহিম (আ.)-এর অগ্নিকুণ্ড থেকে মুক্তি।
-
আইয়ুব (আ.)-এর দীর্ঘ রোগভোগের অবসান।
-
ইউনুস (আ.)-এর মাছের পেট থেকে মুক্তি।
-
মুসা (আ.)-এর নেতৃত্বে বনি ইসরাইলের মুক্তি ও ফেরাউনের ধ্বংস।
-
ঈসা (আ.)-এর আসমানে উত্তোলন।
-
দাউদ (আ.), সুলাইমান (আ.), ইউসুফ (আ.), ইদ্রিস (আ.)— সকল নবীর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এই দিনে সংঘটিত।
কারবালার হৃদয়বিদারক অধ্যায়
তবে আশুরা সবচেয়ে বেশি স্মরণীয় কারবালার নির্মম ট্র্যাজেডির জন্য। হিজরি ৬১ সালের এই দিনে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) ও তার ৭৭ জন সঙ্গী ইয়াজিদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে কারবালার প্রান্তরে শহীদ হন। এই আত্মত্যাগ মুসলিম উম্মাহর কাছে ন্যায়, আত্মদানের ও অবিচারের বিরুদ্ধে অবস্থানের চিরন্তন অনুপ্রেরণা।
আশুরার রোজার গুরুত্ব
আশুরার দিন রোজা পালনের ফজিলত অসীম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আমি আশা করি, আশুরার রোজা বিগত এক বছরের গুনাহর কাফফারা হিসেবে গৃহীত হবে।” (সহিহ মুসলিম)। মদিনায় হিজরতের পর রাসুল (সা.) দেখেন, ইহুদিরা আশুরার রোজা পালন করছে। কারণ, এই দিনে মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইল ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছিল। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমরা তাদের চাইতে মুসা (আ.)-এর অনুসরণে অধিকতর ন্যায্য।’
এজন্য রাসুল (সা.) শুধু দশম নয়, নবম বা একাদশ তারিখে রোজা পালনেরও তাগিদ দিয়েছেন, যাতে ইহুদি-খ্রিষ্টানদের অনুসরণ থেকে আলাদা থাকা যায়।
যুগান্তকারী ঘটনাবলি
মহররমের দশম দিবসের সাথে আরও বহু স্মরণীয় ঘটনা জড়িত:
-
পৃথিবীর আদি সৃষ্টি।
-
আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)-এর পুনর্মিলন।
-
নূহ (আ.)-এর প্লাবনের অবসান।
-
ইব্রাহিম (আ.)-এর মুক্তি।
-
ইউনুস (আ.)-এর মুক্তি।
-
আইয়ুব (আ.)-এর রোগ থেকে আরোগ্য লাভ।
-
সুলাইমান (আ.)-এর রাজ্যপ্রাপ্তি।
-
দাউদ (আ.)-এর সম্মান লাভ।
-
ঈসা (আ.)-এর আসমানে উত্তোলন।
-
কারবালার শাহাদত।
-
হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর হিজরত।
ধর্মীয় ব্যাখ্যা মতে, এমনকি কেয়ামতও আশুরার দিনেই সংঘটিত হবে।
আশুরা কেবল শোক বা স্মৃতিচারণের দিন নয়; এটি সত্য, ন্যায়, ত্যাগ, ধৈর্য ও আল্লাহর প্রতি নির্ভরতার মহান শিক্ষা বহন করে। এই দিনে আল্লাহতায়ালার অসীম রহমত বর্ষিত হয়, অতএব রোজা পালন, নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, গরিব-দুঃখীর পাশে দাঁড়ানো ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা উচিত।
কর্মসূচি ও আয়োজন
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে আজ সারাদেশে সরকারি ছুটি পালিত হচ্ছে। মসজিদ, মাদ্রাসা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে কোরআনখানি, মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠান আয়োজিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতারসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করা হচ্ছে। সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করেছে বিশেষ নিবন্ধ।
আশুরা উপলক্ষে ইসলামী ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সংগঠন আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে। এ উপলক্ষে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ বিশেষ বাণী দিয়েছেন।
ভিওডি বাংলা/ডিআর
ইসলামে গুজব রটানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ
ফিচার ডেস্ক
গুজব মানে হচ্ছে—মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কোনো সংবাদ ছড়িয়ে দেওয়া। …

৩৫ ভাষায় শোনা যাবে মক্কার জুমার খুতবা
ভিওডি বাংলা ডেস্ক
প্রথমবারের মতো মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদে অনুষ্ঠিত শুক্রবারের জুমার …
