• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

বিদ্বেষ নয়, রাজনীতি হোক শালীনতা ও আদর্শের

   ২০ জুলাই ২০২৫, ১২:৩৯ পি.এম.
বিশেষ কলাম। গ্রাফিক্স: ভিওডি বাংলা

আব্দুল আজিজ

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আজকাল কিছু কণ্ঠস্বর ক্রমশ উগ্র, অশালীন ও ঘৃণাপূর্ণ হয়ে উঠছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে চলছে কুৎসা, অপমান ও চরম পর্যায়ের বিদ্বেষ ছড়ানো। এ ধরনের রাজনৈতিক পরিবেশ গণতন্ত্র, মতভিন্নতার প্রতি সহনশীলতা এবং জাতীয় ঐকমত্যের সংস্কৃতিকে চরমভাবে বিপন্ন করে তোলে।

এই প্রেক্ষাপটে একটি নাম বারবার উচ্চারিত হচ্ছে—নাসির পাটোয়ারী। নিজেকে তিনি রাজনৈতিক কর্মী বা নেতা বলে দাবি করলেও তাঁর কথাবার্তা ও আচরণে নেতৃত্বসুলভ কোনও গুণই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বরং তিনি হয়ে উঠেছেন এক ‘রাজনৈতিক ট্রল’-এর প্রতীক; যার কাজ শুধুই বিভ্রান্তি ছড়ানো, গালাগালি করা ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে অবমাননা করা।

নাসির পাটোয়ারীর বক্তব্যে কোনও সুসংহত রাজনৈতিক দর্শন বা জাতীয় সমস্যা নিয়ে চিন্তা নেই। নেই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বা দিকনির্দেশনা। আছে কেবল মিথ্যাচার, কুৎসা ও অশ্লীল আক্রমণ। তাঁর প্রতিটি বক্তব্যের উদ্দেশ্যই যেন অযাচিতভাবে ঘৃণা ছড়ানো।

রাজনীতির নামে এই বিদ্বেষপূর্ণ বাক্যবিন্যাস তরুণ সমাজকে রাজনীতি বিমুখ করবে। এর ফলে রাজনৈতিক মাঠ হয়ে উঠছে বিষাক্ত ও নৈরাজ্যপূর্ণ। ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্য এটি একটি অশনি সঙ্কেত।

সাধারণ মানুষ ও বিশ্লেষক মহলে এখন প্রশ্ন উঠছে—নাসির পাটোয়ারী কি নিজে এসব বলছেন, নাকি তিনি কোনো গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়নের ‘মুখপাত্র’? তাঁর প্রতিক্রিয়া, ভাষা এবং বক্তব্যের ধরণ দেখে মনে হয়, এগুলো একধরনের পরিকল্পিত রাজনীতিক কৌশলের অংশ।

যদি সত্যিই কেউ তাকে ব্যবহার করে থাকেন, তবে তা দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য গভীর উদ্বেগজনক। রাষ্ট্রের সচেতন মহল এবং রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত এখনই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যালোচনা করা।

গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে মতভিন্নতা থাকবেই। কিন্তু ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা ও শালীনতা বজায় রাখাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। একজন নেতা কখনওই ঘৃণার ভাষায় কথা বলতে পারেন না। পাটোয়ারীর মতো আচরণ শুধু রাজনৈতিক পরিবেশকেই কলুষিত করছে না, বরং নেতৃত্বের মানদণ্ডকেও নিচে নামিয়ে দিচ্ছে।

নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি যদি সত্যিই বিকল্প শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চায়, তবে তাদের উচিত এই ধরণের ‘উসকানিমূলক’ নেতৃত্বকে চিহ্নিত করে দলীয় শৃঙ্খলার আওতায় আনা।

বাংলাদেশের রাজনীতি আজ একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। এখান থেকে একটি শালীন, যুক্তিনির্ভর ও আদর্শনির্ভর রাজনৈতিক সংস্কৃতির পথে যাওয়া সম্ভব—তবে তার জন্য প্রয়োজন বিদ্বেষ ছড়ানো কণ্ঠগুলোকে পরিহার করা। রাজনীতি হতে হবে বিতর্কপূর্ণ, কিন্তু তা যেন হয় সৌজন্য ও শিষ্টাচারের আবরণে মোড়ানো।

নাসির পাটোয়ারীর মতো নেতার আচরণ যেন ভবিষ্যতের প্রজন্মের কাছে ‘নেতৃত্ব’ শব্দটিকেই ঘৃণার প্রতীকে পরিণত না করে—এ দায়িত্ব আমাদের সবার।

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষকও কলামিস্ট

ভিওডি বাংলা/ডিআর

[নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। ভিওডি বাংলা সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, ভিওডি বাংলা কর্তৃপক্ষের নয়]

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদের পতন থেকে কি শিক্ষা ও করণীয় নির্ণয় হবে?
৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদের পতন থেকে কি শিক্ষা ও করণীয় নির্ণয় হবে?
তারিখটা বদলায়নি, কিন্তু সকালটা আগের মতো নেই !
তারিখটা বদলায়নি, কিন্তু সকালটা আগের মতো নেই !
দলটি কিসের উত্তরাধিকার বয়ে বেড়ায়? বঙ্গবন্ধুর, নাকি শুধুই ক্ষমতার
দলটি কিসের উত্তরাধিকার বয়ে বেড়ায়? বঙ্গবন্ধুর, নাকি শুধুই ক্ষমতার