• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

আমতলী পৌরসভায় অর্ধশতাধিক সড়কের বেহাল দশা

বরগুনা প্রতিনিধি    ২০ জুলাই ২০২৫, ০১:৫০ পি.এম.
আমতলী পৌসভা সড়কের বেহাল দশা

বরগুনা প্রতিনিধি

বরগুনার আমতলী পৌসভা প্রথম শ্রেণির মর্যাদা পেলেও নাগরিক সুবিধার দিক দিয়ে এখনো পশ্চাদপদ। পৌর এলাকার অন্তত অর্ধশতাধিক সড়ক বছরের পর বছর সংস্কার না হওয়ায় ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছেছে। খানাখন্দে ভরা সড়কগুলোতে সামান্য বৃষ্টিতেই জমছে হাঁটু পানি। ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাব এবং দীর্ঘদিনের অবহেলায় পৌরবাসীর চলাচল এখন চরম দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে।

আমতলী পৌসভা ১৯৯৮ সালে তৃতীয় শ্রেণির পৌসভা হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ২০০৪ সালে দ্বিতীয় এবং ২০১২ সালের ডিসেম্বরে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয়। প্রায় ৩০ হাজার জনসংখ্যার এই পৌরসভার রয়েছে ৯টি ওয়ার্ড এবং দেড় শতাধিক সড়ক। তবে এর মধ্যে অন্তত ৫০টির বেশি সড়কের পিচ ও আরসিসি ঢালাই উঠে গিয়ে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে এসব গর্তে এক থেকে দেড় ফুট পর্যন্ত পানি জমে থাকে।

চার নম্বর ওয়ার্ডের অমল পালের দোকান থেকে পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের ফোরকানের বালির দোকান পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়কের পিচ উঠে গিয়ে গর্তে ভরে গেছে। স্থানীয় মোতাহার হোসেন খা বলেন, রাস্তাটা ভাইঙ্গা এমন হইছে যে রিকশায়ও যাওয়া যায় না, মাজা-কোমর ধইরা যায়।

একই ওয়ার্ডের মরহুম নজির মৃধার বাড়ির সামনের সড়কের ঢালাই উঠে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষার শুরু থেকেই সড়কে জমে আছে পানি। পথচারীরা বাধ্য হয়ে বাড়ির দেয়াল ঘেঁষে লাফিয়ে চলাচল করছেন।

সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের স্থানীয় স্বত্বাধিকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, এমন ভাঙা রাস্তা, এমন পানি আমার জীবনে দেখি নাই।

সরকারি স্কুল সংলগ্ন খাস পুকুরের পাশ দিয়ে যাওয়া প্রায় ২০০ মিটার সড়ক ধসে পাশের লেকে চলে গেছে। স্থানীয় আব্দুল খালেক মাওলানা বলেন, রাস্তাটার অর্ধেক পুকুরে গেছে, আরেকটু গেলেই পুরো যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে।

তিন নম্বর ওয়ার্ডের গ্রামীণ ব্যাংক থেকে খোন্তাকাটা পানির ট্যাঙ্কি পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সড়কের পিচ উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে হাজার হাজার গর্ত। ড্রেন না থাকায় এসব গর্তে পানি জমে থেকে চলাচল পুরোপুরি বিঘ্ন হচ্ছে।

হোমিও চিকিৎসক মো. আলি হোসেন জানান, আমরা এখন পাশের সড়ক দিয়ে চলাচল করি। মূল রাস্তায় পানি আর গর্তে চলাফেরা অসম্ভব।

খোন্তাকাটা হারুর ডাক্তারের বাড়ি থেকে ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম স্বপনের বাড়ি হয়ে পানির ট্যাঙ্কি পর্যন্ত সড়কটি পাঁচ বছর ধরে বেহাল। বর্ষায় এলাকার বাসিন্দারা বালুর বস্তা ফেলে চলাচল করছেন। স্বপন বলেন, এই রাস্তায় ড্রেন না থাকায় বর্ষায় শতাধিক পরিবার হাবুডুবু খায়।

পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের লঞ্চঘাট সংলগ্ন খাস পুকুরের পাড়ের সড়কটি ১০ বছর আগে ভেঙে পানিতে বিলীন হয়েছে। এখন পর্যন্ত তা পুনর্নির্মাণ না হওয়ায় বর্ষায় ১০-১২টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। তারা নিজেদের টাকায় বাঁশের সাঁকো বানিয়ে যাতায়াত করছেন। গৃহকর্তা আশরাফুল হোসেন বলেন, এখন এই পৌরসভা ছাড়ার ছাড়া উপায় নাই।

সরকারি কলেজের পেছনের এক কিলোমিটার সড়ক, আট নম্বর ওয়ার্ডের দেওয়ান মজিবর রহমানের বাড়ির সামনে থেকে কামাল তালুকদারের বাড়ি পর্যন্ত ঢালাই সড়কের অবস্থাও ভয়াবহ। বাসিন্দা মোর্শেদা বলেন, রিকশাও আর এই রাস্তায় ঢুকতে চায় না।

জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুল ইসলাম তালুকদারের বাড়ির সামনের সড়কটি তিন বছর ধরে সংস্কারের অপেক্ষায়। তিনি বলেন, পৌরসভায় বহুবার বলেছি, কোনো লাভ হয়নি।

এ বিষয়ে আমতলী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মজিবুল হায়দার বলেন, সংস্কারের জন্য সময়মতো বরাদ্দ না পাওয়ায় কাজ করা যায়নি।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক মো. রোকনুজ্জামান খান জানান, বেহাল সড়কগুলোর তালিকা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। বরাদ্দ পাওয়া মাত্র সংস্কারকাজ শুরু হবে।

নাগরিকদের ভাষ্য, প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও আমতলীর রাস্তাঘাট এখন পঞ্চম শ্রেণির মতো। পৌরসভায় থেকেও নাগরিক সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের একটাই দাবি দ্রুত সংস্কারকাজ শুরু করে পৌরবাসীকে স্বস্তি দেওয়া হোক।

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বগুড়ায় মুজিব মঞ্চের স্থানে নির্মিত হচ্ছে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’
বগুড়ায় মুজিব মঞ্চের স্থানে নির্মিত হচ্ছে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’
৮ দফা দাবিতে তালা ঝুলিয়ে ধর্মঘটে পাবনা টেক্সটাইল কলেজের শিক্ষার্থীরা
৮ দফা দাবিতে তালা ঝুলিয়ে ধর্মঘটে পাবনা টেক্সটাইল কলেজের শিক্ষার্থীরা
কুষ্টিয়ায় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বিয়ে বাড়িতে ডাকাতি
কুষ্টিয়ায় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বিয়ে বাড়িতে ডাকাতি