নাগরপুর ধুনাইলে
কাঠের পুলে ঝুঁকি, কাদায় হেঁটে জীবন—গ্রামের মানুষ চায় মুক্তি!


টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার দপ্তিয়র ইউনিয়নের ধুনাইল গ্রাম হয়ে টাঙ্গাইল-আরিচা মহাসড়কের সংযোগস্থল পর্যন্ত বিস্তৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা এবং এর মধ্যবর্তী নদীর ওপর এখনো কোনো পাকা সেতু নেই। ফলে দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের পুল ও কাঁচা রাস্তা দিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে আশপাশের আট গ্রামের ৮-১০ হাজার মানুষকে।
ব্রিজটি ভাদ্রা বাজার হতে পশ্চিমে ধুনাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন স্থানে অবস্থিত। এই এলাকাটি দিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ চলাচল করে, যাদের অনেকেই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, কৃষক, ব্যবসায়ী এবং মসজিদগামী মুসল্লি। বিশেষ করে নামাজের সময় শত শত মুসল্লি এই কাঠের পুল পার হয়ে স্থানীয় জামে মসজিদে নামাজ পড়তে আসেন। এতে করে ধর্মীয় কাজেও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এলাকাবাসী।
অঞ্চলটির সারুটিয়াগাজী, পাঁচআড়রা, চাষাভাদ্রা, ধুনাইল ও তিরছাসহ আশপাশের গ্রামগুলোর বাসিন্দারা প্রতিদিন এই সড়ক ও কাঠের পুল ব্যবহার করে স্কুল, কলেজ, হাট-বাজার কিংবা জরুরি প্রয়োজনে যাতায়াত করেন।
জানা যায়, নদী পারাপারের জন্য এক সময় নৌকার ওপর নির্ভর করতেন এলাকাবাসী। পরবর্তীতে নিজেদের অর্থে নির্মাণ করেন প্রায় ১০০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি কাঠের পুল। সেই পুল এখন ব্যবহার করছেন শিশু, নারী, বৃদ্ধসহ সব বয়সী মানুষ। কিন্তু কাঠের এই পুল ব্যবহার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সবসময়ই রয়েছে ভেঙে পড়ার আতঙ্ক।
এছাড়া প্রায় ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি এখনো কাঁচা। বর্ষা মৌসুমে এখানে হাঁটু পর্যন্ত পানি জমে যায়, কাদা মাড়িয়ে চলতে হয় মানুষকে। ফলে পথচারীদের দুর্ভোগ সীমাহীন।
এই অবস্থায় এলাকাবাসী লিখিতভাবে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়—রোড কোড ৩৯৩৭৬৫০১৫ অনুযায়ী এই রাস্তাটি পাকাকরণ এবং নদীর উপর একটি পাকা ব্রিজ নির্মাণ সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় এক স্কুলছাত্রী লাবনী আক্তার বলেন—"বৃষ্টির দিনে স্কুলে যাওয়া যায় না। পুলটা কাঁপে, রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে পড়ে। আমরা খুব কষ্টে যাতায়াত করি। এই পুল দিয়ে কোনো বৃদ্ধ মানুষ চলাফেরা করতে পারেন না। কিছুদিন আগে একজন লোক এই পুল থেকে পড়ে গিয়েছিলেন। আমরা প্রতিদিন ভয়ে ভয়ে পুল পার হই। স্কুলে যেতে আমাদের অনেকটাই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান প্রয়োজন।"
স্থানীয় বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম বাবু বলেন—"কতদিন আমরা কাঠের পুলে আটকে থাকব? জনগণ নিজের টাকায় কাঠের পুল করেছে, অথচ সরকার এখনো পাকা ব্রিজ দেয়নি। আমাদের দাবি, অবিলম্বে রাস্তাটি পাকা ও ব্রিজ নির্মাণ করা হোক।"
এ বিষয়ে দপ্তিয়র ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম. ফিরোজ সিদ্দিকী মুঠোফোনে জানায়—"আমাদের ইউনিয়ন পরিষদ আর্থিকভাবে কিছুটা সীমাবদ্ধতার মধ্যে রয়েছে। তাই এত বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন আমাদের একার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে আমরা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে এলজিইডিকে জানিয়েছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন এবং প্রয়োজনীয় তদন্তও সম্পন্ন করেছেন। আমরা আশাবাদী, অতি শিগগিরই রাস্তা ও ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু হবে।"
এলজিইডি’র উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ তোরাপ আলী বলেন—"ব্রিজ ও রাস্তাটির বিষয়ে একটি প্রতিবেদন আমরা পেয়েছি। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি, উন্নয়ন কাজ শিগগিরই শুরু হবে।"
এলাকাবাসীর এখন একটাই প্রত্যাশা— বেহাল কাঠের পুল নয়, হোক দৃঢ় এক সেতু; কাঁচা রাস্তা নয়, হোক মজবুত চলার পথ। উন্নয়ন শুধু শহরের জন্য নয়, গ্রামের প্রত্যন্ত মানুষের জন্যও সমানভাবে প্রয়োজন—এই বার্তাই যেন পৌঁছে যায় যথাযথ জায়গায়।
ভিওডি বাংলা/হোসাইন মৃদুল/এম
সিরাজগঞ্জে সেনাবাহিনীর ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে সেনাবাহিনী কর্তৃক সুবিধাবঞ্চিত দুই হাজার নারী পুরুষকে বিনামূল্যে …

ফুলবাড়ীতে শাপলা তুলতে গিয়ে ডোবার পানিতে পড়ে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে শাপলা তুলতে গিয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীর দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু …

বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা, চরম দুর্ভোগে কুমারখালী পৌরবাসী
কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণে কুষ্টিয়া কুমারখালী পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় …
