• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

৬২ বিষয়ে একমত রাজনৈতিক দলগুলো

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক    ৩০ জুলাই ২০২৫, ০৯:৩৯ পি.এম.
ছবি: পিআইডি

সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম পর্বের আলোচনায় দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। 

বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত এ সংক্রান্ত আলোচনায় বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে মোট ৬২টি বিষয়ে সম্মতি প্রকাশ করা হয়েছে।

ঐকমত্য হওয়া বিষয়গুলোর মধ্যে সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে ৩০টি দলের সম্মতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে একটি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা থাকবে, যা নিম্নকক্ষ (জাতীয় সংসদ) ও উচ্চকক্ষ (সিনেট) নিয়ে গঠিত হবে। উচ্চকক্ষের সদস্যদের যোগ্যতা ও অযোগ্যতা নিম্নকক্ষের সদস্যদের অনুরূপ হবে। জাতীয় সংসদে নারী আসন ১০০-তে উন্নীত করার বিষয়েও নীতিগতভাবে একমত হয়েছে ১৯টি দল।

এছাড়া আইনসভার উভয় কক্ষে একজন করে ডেপুটি স্পিকার বিরোধী দল থেকে মনোনীত করার বিধান রাখা হবে। রাষ্ট্রপতির অভিশংসনপ্রক্রিয়া নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে সম্পন্ন করার প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে।

ভাষার ক্ষেত্রে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা ‘বাংলা’ হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের নাগরিকদের মাতৃভাষা হিসেবে ব্যবহৃত সব ভাষাকে প্রচলিত ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। সংবিধানে বিদ্যমান সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬(২) প্রতিস্থাপন করে বাংলাদেশের নাগরিকগণ ‘বাংলাদেশি’ বলে পরিচিত হবেন এই বিধান যুক্ত করা হবে, যেখানে ৩১টি দল একমত পোষণ করেছে।

সব সম্প্রদায়ের সহাবস্থান ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে সংবিধানকে ‘একটি বহুজাতি, বহুধর্মী, বহুভাষী ও বহু সংস্কৃতির দেশ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। মৌলিক অধিকারসমূহের তালিকা সম্প্রসারণের পাশাপাশি জাতীয় স্বার্থ বা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করে এমন আন্তর্জাতিক চুক্তি আইনসভার উভয় কক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের মাধ্যমে অনুমোদন করা হবে।

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের সরাসরি তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করা হবে এবং তাদের আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও কার্যাবলিতে সম্পূর্ণ কার্যকরী স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করা হবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, যারা স্থানীয় সরকারের কাজে সরাসরি নিয়োজিত, তারা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধিদের অধীনস্থ হবেন।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের অধীনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহকে তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ এর আওতাভুক্ত করা হবে।

বিচার বিভাগ সংস্কারে আপিল বিভাগের বিচারকসংখ্যা বৃদ্ধি এবং প্রধান বিচারপতির চাহিদা মোতাবেক বিচারক নিয়োগের বিধান যুক্ত করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে একটি স্বাধীন বিচার বিভাগীয় নিয়োগ কমিশন (জেএসি) গঠন করা হবে। বিচার বিভাগকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া এবং বিচারকদের জন্য আচরণবিধি প্রণয়ন ও প্রকাশ করার বিষয়েও ঐকমত্য হয়েছে।

অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণভাবে সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যস্ত করা হবে। নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে কার্যকরভাবে পৃথকীরণের লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। এ ছাড়া একটি স্থায়ী সরকারি অ্যাটর্নি সার্ভিস ও স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস প্রতিষ্ঠার জন্য আইন প্রণয়ন করা হবে। বিচারকদের রাজনৈতিক আনুগত্য প্রদর্শনকে অসদাচরণ হিসেবে বিবেচনা করে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধানও রাখা হবে।

জনপ্রশাসন সংস্কারের বিষয়ে জুলাই অভ্যুত্থানকালে গণহত্যা ও নিপীড়নের সঙ্গে জড়িত এবং ভোট জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের চিহ্নিতকরণে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের বিষয়ে ৩২টি দল একমত হয়েছে। একটি স্বাধীন ও স্থায়ী জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন এবং তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ ও অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ১৯২৩ সংশোধন করার প্রস্তাবও রাখা হয়েছে। কুমিল্লা ও ফরিদপুর নামে দুটি নতুন প্রশাসনিক বিভাগ গঠন ও স্বতন্ত্র ভূমি আদালত স্থাপনের বিষয়েও ঐকমত্য হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কারের ক্ষেত্রে সাংবিধানিক ও আইনগত ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। একটি দুর্নীতিবিরোধী জাতীয় কৌশলপত্র প্রণয়ন ও বৈধ উৎসবিহীন আয়কে বৈধতা দানের চর্চা চিরস্থায়ীভাবে বন্ধ করতে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করা হবে। উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতি ও অর্থ পাচার রোধে আইন প্রণয়ন এবং নির্বাচনী অর্থায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে।

দুদক কমিশনারের সংখ্যা তিনজন থেকে পাঁচজনে উন্নীত করা, তাদের মেয়াদ পাঁচ বছরের পরিবর্তে চার বছর নির্ধারণ এবং বাছাই কমিটির নাম ‘বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি’তে পরিবর্তন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই কমিটি সাত সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হবে এবং কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করবে। দুদক আইন, ২০০৪-এর ধারা ৩২(ক) বিলুপ্ত করে জজ, ম্যাজিস্ট্রেট বা সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করার ক্ষেত্রে সরকারের পূর্বানুমোদন নেওয়ার বিধান বাতিল করা হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ওপেন গভর্নমেন্ট পার্টনারশিপের (ওজিপি) পক্ষভুক্ত হবে।

ভিওডি বাংলা/ এমপি

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
তাবলিগ জামাতের ২ পক্ষের সমস্যা মেটাতে কমিটি : ধর্ম উপদেষ্টা
তাবলিগ জামাতের ২ পক্ষের সমস্যা মেটাতে কমিটি : ধর্ম উপদেষ্টা
ভোটকেন্দ্র সংস্কারের চাহিদা চেয়ে প্রাইমারি স্কুলগুলোতে চিঠি
ভোটকেন্দ্র সংস্কারের চাহিদা চেয়ে প্রাইমারি স্কুলগুলোতে চিঠি
সাইবার হামলার আশঙ্কায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সতর্কতা জারি
সাইবার হামলার আশঙ্কায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সতর্কতা জারি