• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

বাংলাদেশে তুলা চাষের বৈপ্লবিক সম্ভাবনা

   ১ আগস্ট ২০২৫, ১০:১১ পি.এম.
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে ফসলের বৈচিত্র্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধান, গম, পাট কিংবা সবজি চাষের পাশাপাশি তুলা এখন একটি সম্ভাবনাময় অর্থকরী ফসল হিসেবে গুরুত্ব পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এবং টেক্সটাইল শিল্পের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে তুলা চাষে রয়েছে বৈপ্লবিক সম্ভাবনা।
তুলা চাষ: বর্তমান চিত্র
 
বাংলাদেশ তুলা উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে দেশের কয়েকটি জেলায় সীমিত পরিসরে তুলা চাষ হয়ে থাকে। প্রধানত রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, ঝিনাইদহ, যশোর, মেহেরপুর ও কুষ্টিয়ায় তুলা উৎপাদিত হচ্ছে। তবে দেশীয় চাহিদার তুলনায় উৎপাদন অনেক কম। বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৮০-৯০% তুলা আমদানি করতে হয়, যার বেশিরভাগই আসে ভারত, ব্রাজিল ও আফ্রিকা থেকে।
 
চাহিদা বনাম উৎপাদন: গ্যাপ কোথায়?
 
বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ, ফলে দেশীয় বস্ত্র শিল্পে তুলার চাহিদা ব্যাপক। বছরে গড়ে প্রায় ৮০ লাখ বেল তুলা প্রয়োজন, অথচ দেশে উৎপাদিত হয় মাত্র ১.৮–২ লাখ বেল। এই বিশাল ঘাটতি আমদানি নির্ভরতা বাড়িয়ে দিচ্ছে, যা বৈদেশিক মুদ্রার উপর চাপ সৃষ্টি করছে।
সম্ভাবনার দিগন্ত
 
তুলা চাষে বিপ্লব ঘটাতে পারে নিম্নলিখিত কৌশলসমূহ:
 
উন্নত জাত ও প্রযুক্তি প্রয়োগ: তুলা উন্নয়ন বোর্ড ইতিমধ্যেই উচ্চ ফলনশীল ও রোগ প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবন করেছে, যেমন: CB-12, CB-14; আবহাওয়া উপযোগী অঞ্চল সম্প্রসারণ: উত্তরবঙ্গ, মধ‍্যাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শুষ্ক জমিতে তুলা চাষ উপযোগী হতে পারে; চাষীদের প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনা: প্রশিক্ষণ, সহজ ঋণ এবং সরকারিভাবে তুলা ক্রয়ের নিশ্চয়তা কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে পারে; এবং মালচিং, সেচ ও অর্গানিক চাষে আগ্রহ: পরিবেশবান্ধব তুলা উৎপাদন বিশ্ববাজারে বাড়তি সুবিধা দিতে পারে।
 
তুলা চাষে সফলতার গল্প
 
ঝিনাইদহ জেলার কৃষক রহিমুদ্দিন জানান, “আগে ধান চাষ করতাম, লাভ হতো না। গত তিন বছর ধরে তুলা চাষ করছি, কম খরচে ভালো আয় হচ্ছে।” তুলা চাষে তার জমির উৎপাদনশীলতা বেড়েছে ৪৫%, যা আশাব্যঞ্জক।
 
চ্যালেঞ্জ ও করণীয়
 
তবে তুলা চাষে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে- তুলার জন্য বিশেষজ্ঞ পরিচর্যার অভাব, সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা সীমিত, বাজারজাতকরণে মধ্যস্বত্বভোগীর আধিপত্য, তুলা নিয়ে অধিকতর গবেষণার অভাব প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এই সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন-তুলা সংগ্রহ ও বিপণনে ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতকরণ, কৃষি সম্প্রসারণ অফিসে তুলা-নির্ভর সেল গঠন, টেক্সটাইল কারখানার সঙ্গে চাষিদের অংশীদারিত্বমূলক চুক্তি, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে তুলা নিয়ে উচ্চতর গবেষণা প্রভুতি। 
 
পরিশেষে, বাংলাদেশে তুলা চাষ শুধুমাত্র কৃষির বহুমুখীকরণ নয়, বরং একটি অর্থনৈতিক বিপ্লবের সম্ভাবনা। সঠিক পরিকল্পনা, প্রযুক্তি এবং সরকারি নীতিগত সহায়তা থাকলে তুলা হতে পারে দেশের পরবর্তী ‘সাদা সোনা’।
 
লেখক: মোহাম্মদ আনোয়ার কাদের, পিএইচডি ফেলো, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
 
ভিওডি বাংলা/ এমপি
 
[নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। ভিওডি বাংলা সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, ভিওডি বাংলা কর্তৃপক্ষের নয়]

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
দৌড়াও, থেমো না, আমি আছি — কথা রেখেছেন মাহেরীন
দৌড়াও, থেমো না, আমি আছি — কথা রেখেছেন মাহেরীন
লজ্জা পাচ্ছে, আবার নীরবে প্রতিরোধও করছে
লজ্জা পাচ্ছে, আবার নীরবে প্রতিরোধও করছে
বিদ্বেষ নয়, রাজনীতি হোক শালীনতা ও আদর্শের
বিদ্বেষ নয়, রাজনীতি হোক শালীনতা ও আদর্শের