এনসিপি থেকে ২৫ নেতাকর্মীর পদত্যাগ


গত দুই মাসে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে প্রায় ২৫ নেতাকর্মী পদত্যাগ করেছেন। এ সময়ে একাধিক কমিটি স্থগিতও করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের একাংশের মতে, যাচাই-বাছাই ছাড়া কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তই এই পরিস্থিতির জন্য মূলত দায়ী।
এনসিপি সূত্রে জানা গেছে, দলীয় নিবন্ধনকে ঘিরে গত ১ জুন ঢাকা মহানগর উত্তরে সমন্বয় কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠনের কার্যক্রম শুরু করে দলটি। এখন পর্যন্ত ৩৩টি জেলা ও প্রায় ২০০টি উপজেলায় সমন্বয় কমিটি গঠন করেছে এনসিপি। তবে এসব কমিটি গঠনের পর থেকেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরিবারের সদস্যদের পদায়ন, প্রক্রিয়ায় অনিয়মসহ নানা অভিযোগ উঠতে থাকে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অনেক নেতা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পদত্যাগ করেন। শুধু সিলেট জেলা থেকেই ৯ জন নেতা পদত্যাগ করেন। অভিযোগের কারণে দুটি শাখা কমিটি স্থগিত করা হয়। এর আগে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের পরপরই তিন নেতা পদত্যাগ করেছিলেন।
এনসিপি নেতারা বলছেন, মূলত নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য তাড়াহুড়ো করে কমিটি ঘোষণা করায় এমন ঘটনা ঘটছে। কমিটি গঠনের সময় তেমন যাচাই-বাছাই করা হয়নি। তবে কারও কারও দাবি, এনসিপিকে বিতর্কিত করার জন্যই বিএনপি ও জামায়াতের কেউ কেউ দলটিতে যুক্ত হয়ে আবার পদত্যাগ করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান, শিবচর থানায় দল পরিচালনার দায়িত্ব কিছু অযোগ্য ও বিতর্কিত ব্যক্তির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, যারা আদর্শিক, নৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে সম্পূর্ণ অযোগ্য। এতে করে দলের প্রকৃত, নিষ্ঠাবান ও ত্যাগী কর্মীরা মর্যাদা ও সঠিক মূল্যায়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাদের বিশ্বাস, এ ধরনের নেতৃত্বের অধীনে শিবচরের ইতিবাচক পরিবর্তন বা টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।
এ ছাড়া ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে এবং কেন্দ্রীয় দপ্তরে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে এনসিপি বাগমারা উপজেলা কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন তিন সদস্য—হাদিউজ্জামান রাফি, ফুয়াদ হাসান গানিম ও রাবিউল ইসলাম রাহুল। এ বিষয়ে হাদিউজ্জামান রাফি বলেন, ‘আমি রাজনীতি করতে চাই না, এ কথা আগেই তাদের জানিয়েছিলাম। তবু আমার নাম কমিটিতে রাখা হয়েছে। তাই পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে নিজেকে সব সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির অনুরোধ জানিয়েছি।’ আরেক পদত্যাগী নেতা ফুয়াদ হাসান গানিম বলেন, ‘আমি বিএনপি পরিবারের সন্তান। একাধিকবার অনিচ্ছার কথা জানানোর পরও আমার নাম কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করেছি।’
৯ আগস্ট মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা সমন্বয় কমিটি থেকে একসঙ্গে পদত্যাগ করেন এনসিপির চার নেতা। সেদিন বিকেলে শিবচর প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা পদত্যাগের ঘোষণা দেন। পদত্যাগকারীরা হলেন—উপজেলার যুগ্ম সমন্বয়কারী শাকিল খান এবং সমন্বয় কমিটির সদস্য মো. রিয়াজ রহমান, মহিউদ্দিন ও কাজী রফিক।
এরপর ১০ আগস্ট ফরিদপুরের সমন্বয় কমিটির সদস্য মো. রুবেল মিয়া (হৃদয়) পদত্যাগ করেন। এনসিপির ফরিদপুর জেলা সমন্বয় কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী সৈয়দা নীলিমা দোলার কাছে দেওয়া পদত্যাগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, সম্প্রতি দলের কর্মকাণ্ড, বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের অভিযোগ, দলের সিদ্ধান্ত এবং অবস্থানগুলো জুলাই বিপ্লবের নীতি ও নৈতিকতার পরিপন্থি বলে মনে হওয়ায় এবং দলটির বর্তমান পথচলা তার ব্যক্তিগত আদর্শ ও মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় তিনি গভীরভাবে হতাশ ও বিচলিত।
এর আগে এনসিপির ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন ইসমাইল হোসাইন ও ইঞ্জিনিয়ার আলাউদ্দিন নামে দুই নেতাও, যারা নিজেদের জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির পরিবারের লোক বলে উল্লেখ করেন। পদত্যাগের বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ার আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমি জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির পরিবারের লোক। দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতি করায় মামলা-হামলার শিকার হয়েছি। এনসিপির উপজেলা কমিটিতে আমাকে রাখার বিষয়ে পূর্বে অবগত করা হয়নি, এমনকি আমি তাদের কোনো কর্মসূচিতেও অংশগ্রহণ করিনি। তাই আমি পদত্যাগ করেছি।’
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ