গোয়ালন্দ পৌরসভার বহুতল মার্কেট নির্মাণের শুরুতেই অনিয়ম!


রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভার বহুতল মার্কেট নির্মাণের শুরুতেই ড্রইং, ডিজাইন, পাইলিংসহ পুরো প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কার্যাদেশ পাওয়ার ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও মূল ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি। অথচ স্থানীয় কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে প্রায় এক কোটি টাকার বিল তুলে নিয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন আইইউজিআইপি (ইমপ্রুভিং আরবান গভর্নেন্স অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রজেক্ট) প্রকল্পে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে ৭ তলা ভীতবিশিষ্ট ৩ তলা মার্কেট নির্মাণের জন্য বরাদ্দ হয় ৯ কোটি ২৭ হাজার ৪০৪ টাকা। ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর কার্যাদেশ দেওয়া হয় ফরিদপুরের তাশা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড ও জান্নাত কনস্ট্রাকশন (যৌথভাবে)। চুক্তি অনুযায়ী ২০২৫ সালের ৩০ অক্টোবর কাজ শেষ হওয়ার কথা।
কিন্তু সরেজমিনে দেখা গেছে, গোয়ালন্দ বাজারের নির্ধারিত স্থানে টিনের বেড়ায় ঘেরা জায়গায় মাত্র ২৫ ফুট দীর্ঘ পাইলিং চলছে, যেখানে টেন্ডার সিডিউলে ৫০ ফুট পাইলিংয়ের কথা বলা ছিল।
এসময় কথা হয়, এই কাজে ঠিকাদারের পক্ষে উপ ঠিকাদার হিসাবে নিয়োজিত বিলটেক্স টেকনোলজি এর প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান জানান, এ পর্যন্ত তারা ২৫ ফুট দীর্ঘ মোট ২১টি পাইলিং স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। নির্মাণ কাজের টেন্ডার সিডিউলে ৫০ ফুট দীর্ঘ পাইল স্থাপনের উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও ২৫ ফুট আকারের পাইলিং করা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে ওই প্রকৌশলী বলেন, এখানকার মাটি খুবই শক্ত। যে কারণে এই স্থাপনায় ২৫ ফুট পাইলিংই যথেষ্ট।
প্রকল্প সিডিউলে ৫০ ফুটের ১৪০টি পাইল বসানোর কথা থাকলেও তা পরিবর্তন করে ২৫ ফুটের ২৮০টি পাইল বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর থেকে কোনো লিখিত অনুমোদন বা সিডিউল সংশোধনের প্রমাণ দেখাতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বা পৌর কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, ৫০ ফুট পাইলিং এর যায়গায় ২৫ ফুট পাইলিং করা হচ্ছে। তাও আবার নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার হচ্ছে, ফলে কিছু পাইল মাঝপথেই ভেঙে যাচ্ছে।
গোয়ালন্দ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী ফেরদৌস আলম খান স্বীকার করে বলেন, সয়েল টেস্টের সঙ্গে ডিজাইনের কিছু পার্থক্য থাকায় পাইলের দৈর্ঘ্য কমানো হয়েছে। কাজে ধীরগতির প্রসঙ্গে তিনি জানান, বাজারের পুরনো দোকানগুলো নিলাম প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরও অপসারণ হতে বাড়তি সময় ব্যায় হওয়ায় নির্মাণ কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়। যে কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এর জন্য পিডি অফিস থেকে সময় বাড়িয়ে নেওয়ার কথা জানান। তবে ইতিমধ্যে ৭০ শতাংশ পাইলিং সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে প্রায় এক কোটি টাকার বিলও পরিশোধ করা হয়েছে।
পৌর প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নাহিদুর রহমান বিল প্রদানের বিষয়টি স্বীকার করলেও নির্মাণ কাজের পুরো বিষয়টি কারিগরি বিষয় বলে বিস্তারিত মন্তব্য করেননি।
এদিকে পুরো কাজের ধীরগতি, সিডিউলে বর্ণিত নির্দেশনা উপেক্ষা করে পাইলিং স্থাপনসহ বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাশা কনস্ট্রাকশন লিঃ ও জান্নাত কনস্ট্রাকশন এর স্বত্ত্বাধিকারী শহীদুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় ঠিকাদার সালাহউদ্দিন চৌধুরী ও জাহাঙ্গীর হোসেনসহ বেশ কয়েকজন কাজটি বাস্তবায়ন করছেন এবং এতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখবেন বলে জানান তিনি।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ