১৮ বছর পর বাঁশখালীর ২জন নির্বাচন কর্মকর্তা চাকরিতে পুনর্বহাল


দীর্ঘ ১৮ বছর পর চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ২জম নির্বাচন কর্মকর্তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সোমবার (১৮ আগস্ট) ইসির জনবল ব্যবস্থাপনা শাখার সহকারী সচিব মোহাম্মদ শহীদুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ তথ্য জানা যায়।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ২০২৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রদত্ত রায়ের প্রেক্ষিতে কর্মকর্তাদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জানায়ায়, ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বরের অপসারণের তারিখ থেকে পুনর্বহালের তারিখ পর্যন্ত সময়কাল অসাধারণ ছুটি (Extra Ordinary Leave) হিসেবে গণ্য হবে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তারা সব বকেয়া বেতন, সুবিধাদি ও জ্যেষ্ঠতা প্রাপ্য হবেন।
পুনর্বহাল তালিকায় রয়েছেন চট্টগ্রামের বাঁশখালীর দুইজন- মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম চৌধুরী তিনি উপজেলা খানখানাবাদ ইউনিয়নের ডোংরা গ্রামের মাতব্বর বাড়ির বাসিন্দা মরহুম মাহফুজুর রহমান চৌধুরী ছেলে।
অন্যজন হলেন মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন তিনি বাশঁখালী উপজেলা পৌরসভার ৭ ওয়ার্ডের মাতব্বর বাড়ির মরহুম আলহাজ্ব মৌলানা আব্দুল জব্বারের ছেলে।
মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ও মোহম্মদ কামাল উদ্দিন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে সিনিয়র সহকারী সচিব পদে যোগদান করবেন।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, পুনর্বহালকৃত আগামী ১৯ আগস্টের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব বরাবর সরাসরি বা ই-মেইলে ([email protected]) যোগদানপত্র দাখিল করতে হবে। নির্ধারিত সময়ে যোগদান না করলে তা চাকরিতে যোগদানে অসম্মতি হিসেবে বিবেচিত হবে।
নজরুল ইসলাম চৌধুরী ২০০৫ সালে নির্বাচন কমিশনে সহকারী সচিব পদে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি প্রথমে বান্দরবান সদরে নির্বাচন কর্মকর্তা এবং পরে বান্দরবান জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন।
এ বিষয়ে অনুভূতি জানাতে গিয়ে নজরুল ইসলাম চৌধুরী" বাঁশখালী চট্টগ্রাম মঞ্চ প্রতিনিধি-কে বলেন, ‘মহান আল্লাহর দরবারে অশেষ শুকরিয়া। বহু বছর পর হলেও আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি। আমাদের ব্যাচের ৩ জন সহকর্মী এই দীর্ঘ অপেক্ষায় মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি সবার দোয়া কামনা করছি, যেন সততার সাথে আমার দায়িত্ব পালন করতে পারি।’
তিনি ১৯৯১ সালে বাণীগ্রাম সাধনপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ১৯৯৪ সালে বাঁশখালী ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগ থেকে বিএসএস (অনার্স) এবং এমএসএস ডিগ্রি অর্জন করেন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই পুত্র ও এক কন্যাসন্তানের জনক। তার বড় ভাই কামরুল ইসলাম চৌধুরী উত্তরা মোটরস লিমিটেডের এজিএম হিসেবে কর্মরত। তার দুই বোন হাজী আলতাফ আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন।
মোহম্মদ কামাল উদ্দিন ২০০৫ সালে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে সহকারী সচিব পদে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি প্রথমে ঢাকা ক্যান্টরমেন্ট থানার নির্বাচন কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
অনুভূতি জানতে গিয়ে মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, আলহামদুলিল্লাহ বহু বছর পর হলেও আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি। আমাদের ব্যাচের ৩ জন সহকর্মী এই দীর্ঘ অপেক্ষায় মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি সবার দোয়া কামনা করছি, যেন কর্মস্থলে আগামী দিনে সততার সাথে দায়িত্ব পালন করতে পারি।
তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম, এম,বি এস এস (অনার্স ) লোক প্রশাসন বিভাগ থেকে এম এস এস ডিগ্রী অর্জন করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই সন্তানের জনক। প্রথম সন্তান নুছরাত কামাল। সে OIC পরিচালিত IUT (Islamic University Of Technology ) সিভিল ইন্জিনিয়ার ৪র্থ বর্ষের ছাত্রী। দ্বিতীয় সন্তান মোহাম্মদ শামস যুলকারনাইন। ২০২৫ সালের এইচ এস সি পরীক্ষা শেষ করেছে। তাহার স্ত্রী দেশের প্রথম সারীর স্বনামধন্য একটি ব্যাংকের SVP হিসেবে কর্মরত আছেন।
উল্লেখ্য, বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে নিয়োগ পাওয়া এই বাঁশখালীর ২ জন কর্মকর্তা রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। পরবর্তীতে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়।
দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর আদালতের রায়ে অবশিষ্ট ৮২ জন কর্মকর্তার চাকরি পদোন্নতি, বকেয়া বেতন ও বিধি অনুযায়ী সব আর্থিক সুবিধাসহ পুনর্বহাল করা হয়। যদিও ২০১০ সালে একবার আদালতের রায়ে চাকরি ফিরে পেলেও তা কিছুদিনের মধ্যেই পুনরায় স্থগিত হয়ে যায়। অবশেষে, ২০২৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে স্থায়ীভাবে তাদের চাকরি পুনর্বহাল হয়।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ