জেল থেকেও কেটু মিজানের দাপট


গাজীপুরে ‘কেটু মিজান’ নাম শোনলেই সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হলেও জেল থেকেও সে পরিচালনা করছে নিজস্ব অপরাধ সাম্রাজ্য।
ভুক্তভোগীরা জানান, প্রকাশ্যে হামলা, চাঁদাবাজি, ছিনতাই থেকে শুরু করে হত্যার মতো ভয়ঙ্কর কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে কেটু মিজানের চক্র। সরকারি নথি অনুযায়ী, তার বিরুদ্ধে ১৫-১৭টি মামলা রয়েছে, কিন্তু স্থানীয়দের দাবি, প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি।
এক নারী বললেন, ‘আমার স্বামীকে দিনের বেলায় কবরস্থানের সামনে কুপিয়ে জখম করেছে। আশপাশে শত মানুষ ছিল, কিন্তু ভয়ে কেউ এগোতে পারেনি। আমি থানায় মামলা করতে সাহস পাইনি।’ অন্য একজন বলেন, ‘আমার ছোট ভাইকে কুপিয়েছে, আমাকেও হুমকি দিয়েছে। জীবন ভয়ে থানায় যাইনি।’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কিশোরদের ব্যবহার করে মিজান পরিচালনা করে তার চক্র। তাদের হাতে ও শরীরে ট্যাটু করা থাকে ‘ডেঞ্জার গ্রুপ’ প্রতীক। প্রকাশ্যে দিবালোকে মানুষকে কুপিয়ে জখম করা বা হত্যা করা তাদের কাছে স্বাভাবিক ঘটনা। অটোরিকশা চালকদের টার্গেট করে অভিনব কৌশলেও তারা সক্রিয়। গর্ভবতী নারী সাজিয়ে যাত্রী হিসেবে পাঠিয়ে অটো, মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়।
মিজানের জন্ম জামালপুরের মেলানদহে। দারিদ্র্যের কারণে পরিবার ঢাকায় আসে। গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় আসার পর ধীরে ধীরে গড়ে তোলে অপরাধ সাম্রাজ্য। প্রথমে অটোরিকশা চুরি, পরে চাঁদাবাজি, ছিনতাই এবং কিশোর বাহিনী গঠন-ধাপে ধাপে হয়ে ওঠে কুখ্যাত কেটু মিজান।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানায়, মিজানের বিরুদ্ধে মামলাগুলো তদন্তাধীন। তবে স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলছেন, ‘শতাধিক অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকা সত্ত্বেও কীভাবে সে এত শক্তিশালী?’
ভুক্তভোগী পরিবারগুলো এখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। অনেকেই ঘরবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন। এক নারী বলেন, ‘যেদিন স্বামীকে মারল, আমি পাশের বাড়িতে লুকিয়ে ছিলাম। দরজায় আঘাত করে হুমকি দিয়েছিল। এখনো ভয় কাটেনি।’
মানবাধিকারকর্মীরা সতর্ক করে বলছেন, ‘মামলা করতে না পারা মানে ন্যায়বিচারের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া। অপরাধীরা আরও উৎসাহিত হচ্ছে। তাই ভুক্তভোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া চালানো জরুরি।’
সচেতন মহল মনে করিয়ে দিচ্ছে, শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা নয়, সমাজের প্রতিটি স্তরে সহযোগিতা জরুরি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পরিবার- সবাইকে একসঙ্গে দাঁড়াতে হবে। না হলে কিশোরদের ব্যবহার করে গড়ে ওঠা এই ধরনের সন্ত্রাসী বাহিনী ভবিষ্যতে আরও ভয়ঙ্কর রূপ নেবে।
ভিওডি বাংলা/জা