আমরা সবাই মিলে আমাদের দেশ গড়ব: জিএম কাদের


জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, আমরা এমন একটা সমাজ চাই, যে সমাজে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠি বা নাগরিকদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ থাকবে না। এদেশের সকল নাগরিকই এদেশের মালিক। আমরা সবাই মিলে আমাদের দেশ গড়ব। যে সমাজে সংখ্যালঘুরা নিরাপত্তাবোধ করে না, সে সমাজকে সভ্য সমাজ বলা যায় না।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কার্যালয় মিলনায়তনে শুভ জন্মাষ্টমি উপলক্ষ্যে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়েকালে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের একথা বলেন।
গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, সনাতন ধর্ম মতে দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনের জন্য শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব হয়েছিলো। যাতে সমাজে সু-শাসন থাকে, আর সু-শাসন থাকলেই মানুষের আত্মায় শান্তি মেলে। এখন আমাদের দেশে চলছে দুষ্টের পালন আর শিষ্টের দমন।
কাদের বলেন, এখন দেখা যাচ্ছে দাগী আসামী ও খুনিদের জেলখানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে অসহায় ও নিরাপদ মানুষদের জেলখানায় আটকে রাখা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকেও দুঃখ প্রকাশ করা হচ্ছে মিথ্যা মামলার বিষয়ে, কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে রাজনৈতিক কারণে যাদের আটক করা হচ্ছে তাদের জামিন দেওয়া হচ্ছে না। জুলাই হত্যাকান্ডের ঘটনায় অনেকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু যারা গ্রেফতার হয়েছেন তাদের জামিন হচ্ছে না।
তিনি বলেন, আমি মনে করি, সম্মানিত বিচারকবৃন্দ ন্যায় বিচারের জন্য শপথ নিয়েছেন। তাই, তারা ন্যায় বিচার নিশ্চিত করবেন।
জিএম কাদের বলেন, যাকেই সরকারের কঠিন প্রতিপক্ষ মনে করা হচ্ছে তাদেরকেই এধরণের মিথ্যা মামলায় জড়ানো হচ্ছে। এভাবেই সাধারণ মানুষকে দমন করা হচ্ছে।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, দেশে দূর্ণীতি কমেনি। কিছুদিন আগে একজন অবসরপ্রাপ্ত সচিব অভিযোগ করেছেন অন্তত সরকারের ৮ জন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে দূর্ণীতির প্রমাণ রয়েছে। তিনি অভিযোগ করেছেন, পোস্টিং দিয়ে, পদোন্নতি দিয়ে এবং বিভিন্নভাবে দূর্ণীতির মাধ্যমে ওই উপদেষ্টারা শতশত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তিনি আরো অভিযোগ করেছেন, টাকা ছাড়া দেশে কোন কাজই হয় না।
তিনি বলেন, অনেক উপদেষ্টাকেই ব্যাক্তিগতভাবে চিনি এবং জানি যে তারা অত্যন্ত সৎ। কিন্তু, তাদের ডিপার্টমেন্টে যদি হরিলুট চলে তাহলে উপদেষ্টাবৃন্দ কি দূর্ণীতির দায় এড়াতে পারেন? প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য অনুযায়ী যারা বর্তমান সরকারের নিয়োগদাতা বা অভিভাবক তাদের বিরুদ্ধে দূর্ণীতির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। ইংরেজ দার্শনিক ও রাজনীতিবীদ লর্ড এটনের একটি বিখ্যাত বক্তব্য হলো “ক্ষমতা মানুষকে দূর্ণীতির দিকে নিয়ে যায়; এবং, সর্বময় ক্ষমতা মানুষকে নিশ্চিতভাবে দূর্ণীতিগ্রস্ত করে।” আমরা দেখছি দেশ এখন দূর্ণীতির সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছে। সর্বময় দূর্ণীতির বিরুদ্ধে কোন দৃশ্যমান এ্যাকশন নেই। বর্তমান সরকার দূর্ণীতির বিরুদ্ধে এ্যাকশন না নিলেও নিরপরাধ এবং সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে এ্যাকশন নিচ্ছে।
গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, আমরা শান্তি চেয়েছিলাম, আমরা একটি সুন্দর দেশ চেয়েছিলাম। আমরা অভিযোগ পাচ্ছি, হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা চলছে, বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হচ্ছে। হিন্দুদের উপর আগেও অত্যাচার ও নির্যাতন চলেছে। তখন তারা একটি জায়গায় বিচার চাইতে পেরেছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গিয়ে তারা আশ^স্ত হতে পারতো। এখন হিন্দু সম্প্রদায় বিচার চেয়ে আশ^স্ত হতে পারছে না। মানুষ যতটা অত্যাৎচারিত তার চেয়ে কয়েকগুন বেশি ভীত ও সন্ত্রস্ত। শুধু হিন্দুরাই নয়, দেশের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত। হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা নাকি আওয়ামী লীগের সাথে থাকে। এখন যাকে তাকে আওয়ামী লীগের দোসর ট্যাগ দিয়ে নির্যাতন করায় যেন কোন অপরাধ নেই। হিন্দু সম্প্রদায়ের নতুন প্রজন্মের অনেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে না। কিন্তু, তাদেরও আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। হিন্দু সমাজের সদস্যরা অনেক বেশী দেশপ্রেমিক, তারা বাংলাদেশকে নিজের দেশই মনে করে। হিন্দু সমাজের যারা দেশ ত্যাগ করে ভারতের গেছে, তারা বাধ্য হয়েই গেছে। আমাদের দূর্ভাগ্য, আমাদের ভাইদের দেশে রাখতে পারিনি। প্রতিটি ন্যায়সঙ্গত আন্দলন, সংগ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা সাহসিকতার সাথে অংশ নেয়। হিন্দুদের প্রতি বর্তমান সরকার ও তাদের সঙ্গীদের দৃষ্টিভঙ্গির আমরা প্রতিবাদ করি। হিন্দু সহ সকল সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষায় যেকোন ত্যাগ স্বীকার করতে আমরা দ্বিধা করবো না।
মোহাম্মদ কাদের বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সংগ্রাম করে হলেও অধিকার আদায় করতে হবে। হিন্দুদের যৌক্তিক আন্দোলন সংগ্রামে আমরা আগের মতোই পাশে থাকবো। আমাদের নেতা পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ একজন অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। চাকরি-বাকরি সহ নানাবিধ বৈষম্য থেকে হিন্দু সম্প্রদায়কে মুক্তি দিয়েছিলেন হসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, বর্তমান সরকার দেশ চালাতে ব্যর্থ। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির দায়-দায়িত্ব এই সরকারকেই নিতে হবে। আপনারা সুন্দরভাবে দেশ চালাতে না পারলে দায়িত্ব থেকে সরে যান। দেশের মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে চায়। দেশকে ভালোর দিকে না নিতে পারলেও খারাপের দিকে নিবেন না।
তুষার ঘোষের সভাপতিত্বে ও সমরেশ মন্ডল মানিকের সঞ্চালনায় এই শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, জাতীয় পার্টি মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ এর সভাপতি অধ্যাপক নিম চন্দ্র ভৌমিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, যুব ইউনিটের সভাপতি শিবু সাহা, সনাতন পার্টির সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. সুমন কুমার রায়, জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক নির্মল দাস, বাংলাদেশ ভক্ত সংঘ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অনিল পাল, জাতীয় হিন্দু মহাসংঘের উপদেষ্টা কৃষ্ণ নন্দি, মানবাধিকার নেত্রী সুমা বড়াল।
অন্যান্যের উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মোঃ খলিলুর রহমান খলিল, ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ হেলাল উদ্দিন, আখতার হোসেন দেওয়ান, চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারী খন্দকার দেলোয়ার জালালী, দফতর সম্পাদক মাহমুদ আলম।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ