মধুপুরের অর্থনীতির প্রধান চাবিকাঠি আনারস


টাঙ্গাইলে মধুপুর আনারসের রাজধানীতে জমে ঊঠেছে জমজমাট বাজার। মৌসুমের শুরু থেকে এ বছর দাম ভালো যাচ্ছে। এখন আনারসের দামের সূচক উর্ধ্বমুখী।পরিবহন খরচ বৃদ্ধিসহ স্থানীয় বাইক খরচ বেড়ে গেলেও দাম ভালোর কারণে তেমন প্রভাব পড়েনি বলে মনে করছে কৃষকরা। পাইকার ক্রেতা বেশি থাকায় বাজারে প্রচুর আনারসের আমদানি থাকলেও দাম পড়েনি। স্থানীয় পাইকাররা কিনে বিভিন্ন মোকামেও পাঠাচ্ছে। পাইকাররা জানান মোকামগুলোর বাজার তুলনামূলক ভাবে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বেড়েছে। ফলের মোকামে চাহিদা বেড়েছে। গরম বেশি থাকার কারণে আনারসের চাহিদা বেশি। আনারস চাষে কৃষকদের পরামর্শ ও সহযোগিতা করে যাচ্ছে কৃৃষি বিভাগ।
কৃৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২০২৫ মৌসুমে মধুপুরে ৬ হাজার ৬ শ'৩০ হেক্টর জমিতে আনারস আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৩শ’ ৯২ হেক্টরে জলডুগি এবং ৪ হাজার ২শ' ২০ হেক্টরে ক্যালেন্ডার প্রজাতির আনারস আবাদ হয়েছে। এ ছাড়া ফিলিপাইন তেকে আমদানিকৃৃত জাত এমডি-টু ১৮ হেক্টর আবাদ হয়েছে। হেক্টর প্রতি ফলন ধরা হয়েছে ক্যালেন্ডার ৩৮ মে.টন,জলডুগি ২৭ মে.টন ও এমডিটু ৩৫ মে.টন। এ বছর মধুপর গড়ে ৭শ’ ৬০ কোটি টাকার বাণিজ্যর সম্ভবনা রয়েছে।
কৃৃষি বিভাগ আরো জানায়, গড় এলাকায় সর্ব প্রথম ইদিলপুর গ্রামের গারো নারী মিজি দয়াময়ী সাংমা আনারস চাষের যাত্রা শুরু করে। ১৯৪২ সালে ভারতের মেঘালয়ের তার আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ৭৫০ টি আনারষের চারা আনেন। সে থেকে ধেির ধীরে আনারস চাষ বাড়তে থাকে। লাল মাটির আনারস জিআই পণ্য হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছে।
বর্তমান মধুপুরের অর্থনীতির প্রধান উৎস হিসেবে দাঁড়িয়েছে আনারস। প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার আনারস বেচাকেনা হয়ে থাকে। প্রায় ৬ মাস কম বেশি চলে বেচাকেনা। মধুপুর গড়ের জলছত্র হচ্ছে আনারসের সব চেয়ে বড় বাজার। এছাড়াও মোটের বাজার ও গারো বাজারও আনারস বেচাকেনার জন্য বড় বাজার রয়েছে। এসব বাজারে দেশের নানা প্রান্ত থেকে পাইকার আসে আনারস কিনতে।এবছর ভরা মৌসুমে পাইকার অনেক। আশপাশের ময়মনসিংহ জামালপুর,কিশোরগঞ্জ, শেরপুর,ঢাকা, সিলেট, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, বরিশাল,গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকার আসে। অথচ এ বছর মৌসুমের শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকার আসতে শুরু করেছে। দামও ভালো যাচ্ছে বলে জানালেন আনারস ক্রেতা বিক্রেতারা। প্রতিদিন জমজমাট বাজারে প্রচুর পরিমানে বেচা কেনা হয়ে থাকে।
জলছত্র বাজারে গিয়ে কথা হয় আনারস নিয়ে আসা ভ্যান চালক শাহীনের সাথে তিনি জানান, গত দিন ধরে বাজার ভালো যাচ্ছে। যে আনারস কয়েক দিন আগে ৪০ টাকা বিক্রি হতো, এখন সেইটা ২/৩ টাকা বেশি দামে টাকা বিক্রি হচ্ছে। পাইকার চাহিদা বেশি থাকায় এমন হচ্ছে বলে তার ধারণা।
সুরুজ আলী জানান, আনারসের একটি চারার দাম ৪-৫ টাকা,রোপন খরচ এক টাকা, পাতার ঢাক খরচ,নিড়ানী খরচ,সার ,বিষখরচ,রোদে পোড়া থেকে রক্ষার ঢাক, পাকানো খরচ, কর্তণ খরচ, বের করা খরচ,স্থানীয় পরিবহন খরচ নিয়ে ১৫-১৮ টাকা পড়ে যায়।
শামসুল হক জানান, যেখানে ছোট টিকটিকি ট্রাকের ভাড়া ছিল ৫-৬ হাজার টাকা। এখন ৭-৮ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে। ভাড়া বৃদ্ধি থাকলেও ক্রেতাদের চাহিদা বেড়ে যাওয়াকে আনারসের দাম বাড়ার কারণ মনে করেন এই ব্যবসায়ী।
স্থানীয় ট্রাক ড্র্রাইভার্স ইউনিয়নের সদস্য বেলাল জানান, মধুপুর থেকে প্রতিদিন শতাধিক ছোট বড় আনারসের গাড়ি বিভিন্ন জেলায় যায়। বাজার ছাড়াও বাগান থেকেও সরাসরি ট্রাকে উঠানো হয়। সড়ক পাকা থাকায় গ্রামের ভেতরে বাগানেও যায় গাড়ি। বাগান তেকেও মোকামে যাচ্ছে আনারস।
হোটেল ব্যবসায়ী সুমন জানান, আনারসের মৌসুমে তাদের বাজার চাঙ্গা থাকে । বেচাকেনা বেশি হয়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাজারে লোকজন থাকে।
জলছত্র ট্রাক ড্র্রাইভার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম জানান, এ বাজার থেকে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আনারসের সমাগম ঘটে থাকে। চালক, ব্যাপারীসহ বাজারে আসা মানুষদের জন্য তাদের অফিসেই কম খরচে থাকার সুব্যবস্থা করেছে।
স্থানীয়রা জানান, এ গড়ের সব চেয়ে আনারসের বড় বাজার এটি। দোকানপাট থেকে শুরু করে কুলি ,হকার, শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের পদচারণায় মুখরিত থাকে বাজার। সরগরম থাকার কারণে বেচাকেনাও বেড়ে যায়। স্থানীয় অর্থনীতির চাকা সচল থাকে।
মধুপুর উপজেলা কৃৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তাজবিনূর রাত্রী জানান, ২০২৪-২০২৫ মৌসুমে মধুপুরে ৬ হাজার ৬ শ'৩০ হেক্টর জমিতে আনারস আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৩শ’ ৯২ হেক্টরে জলডুগি এবং ৪ হাজার ২শ' ২০ হেক্টরে ক্যালেন্ডার প্রজাতির আনারস আবাদ হয়েছে। এ ছাড়া ফিলিপাইন তেকে আমদানিকৃত জাত এমডি-টু ১৮ হেক্টর আবাদ হয়েছে। হেক্টর প্রতি ফলন ধরা হয়েছে ক্যালেন্ডার ৩৮ মে.টন,জলডুগি ২৭ মে.টন ও এমডিটু ৩৫ মে.টন।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ