• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

খুঁড়িয়ে চলছে মাদারীপুরের স্বাস্থ্যসেবা, এভাবে আর কতদিন?

মাদারীপুর প্রতিনিধি    ২২ আগস্ট ২০২৫, ০২:৪৬ পি.এম.
ছবি: ভিওডি বাংলা

মাদারীপুর জেলায় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করনের লক্ষ্যে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে নতুন নতুন ভবন। সেই সঙ্গে রয়েছে আধুনিক সব যন্ত্রপাতিও। অথচ জেলা ও উপজেলার সরকারি হাসপাতালে আড়াইশোর বেশি জনবল সংকটে হয় না সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। মুমূর্ষু রোগীদের দায়সারা সেবা দিয়ে পাঠানো হয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এতে মাঝপথে মৃত্যু হচ্ছে অনেকের। দীর্ঘদিনেও পাল্টায়নি সরকারি হাসপাতালগুলোর এমন চিত্র। সিভিল সার্জন বলছেন, জনবল নিয়োগের ব্যাপারে চলমান রয়েছে কার্যক্রম।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত দেড় বছরের ছেলে ইয়াকুবকে নিয়ে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা ১০০ শয্যা হাসপাতালে আসেন যাদুয়ারচর গ্রামের বাসিন্দা মা খাদিজা আক্তার। চিকিৎসক ভর্তি করিয়ে দিলেও ২৪ ঘণ্টায়ও পাননি কাঙ্ক্ষিত সেবা। পরে বাধ্য হয়ে শিশুকে নিয়ে চলে যান ঢাকা মেডিকেলে। অথচ ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সম্প্রতি ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যা হাসপাতাল নির্মাণ করা এখানে। গুয়াতলা মৌজায় চকচকে ভবন দাঁড়িয়ে থাকলেও এখানে নেই মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা।

খাদিজা আক্তার বলেন, সারারাত আমার সন্তান কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু এখানে কেউই কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে আসেনি। পরে বাধ্য হয়ে ঢাকা নিয়ে যাচ্ছি। আমরা বার বার নার্সদের বলছিলাম চিকিৎসা দিতে, তারা শুধু বাজে ব্যবহারই করে যাচ্ছিল। সরকারি হাসপাতালে এমন ব্যবহার দুঃখজনক।

শিবচর উপজেলার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম আকাশ বলেন, সরকারি হাসপাতালে মানুষ চিকিৎসা নিতে আসে। অথচ নামেমাত্র সেবা দিয়ে তাদের পাঠিয়ে দেয়া হয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, নয়তো পাঠানো হয় প্রাইভেট ক্লিনিকে। আমরা এই সমস্যা থেকে মুক্তি চাই।
 
একই অবস্থা ৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আধুনিক ২৫০ শয্যার জেলা হাসপাতালেরও। জনবল সংকটে এখানে থাকা আইসিইউ, সিটিস্ক্যান মেশিন, ডিজিটাল এক্সরে ও আল্টাসোনোগ্রাম মেশিনসহ অধিকাংশই যন্ত্রপাতি থাকে অলস পড়ে। আর মুমূর্ষু রোগীদের দায়সারা সেবা দিয়ে পাঠানো হয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এতে মাঝপথে প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকেই।

মাদারীপুর সদর উপজেলার পূর্ব ছিলারচরের বাসিন্দা হুমায়ুন ফকির বলেন, কোটি কোটি টাকা খরচ করে কত সুন্দর একটা ভবন বানানো হয়েছে। অথচ এখানে কোনো সেবাই মিলছে না। নতুন নতুন ভবন নির্মাণ না করে বেশি বেশি জনবল নিয়োগ দেয়া উচিৎ। তাহলে রোগীরা তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা পাবেন।

শিপন হুসাইন নামে এক রোগী বলেন, ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি হবার পর পরীক্ষা নিরীক্ষা প্রাইভেট ক্লিনিকে করতে হয়েছে। সেখানে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হয়েছে। সরকারি এই হাসপাতালে তেমন কোনো ওষুধও পাইনি। এটি নামেমাত্র সরকারি হাসপাতাল। আর গুরুতর রোগীকে এখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পাঠানো হয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। মাঝপথে অনেকের মৃত্যু হয়। এই অন্যত্র পাঠানোর পদ্ধতি বন্ধ করা উচিৎ।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, জেলা সদর ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে প্রতিদিন গড়ে ভর্তি হন প্রায় ৫০০ রোগী। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন কয়েক হাজার মানুষ। একের পর এক নির্মাণ করা হচ্ছে নতুন ভবন। বাড়ানো হচ্ছে হাসপাতালের শয্যাও। অথচ নতুন করে নিয়োগ দেয়া হয়নি কোনো জনবল। এতে কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়া ক্ষুব্ধ জেলাবাসী।

জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, মাদারীপুর জেলা সদর হাসাপাতালে ১৬৪ জনবলের বিপরীতে আছে ১৩৫ জন। খালি পদের সংখ্যা ৩০টি। এরমধ্যে শূন্য রয়েছে ৭ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ। আর কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২২০ জনবলের বিপরীতে আছে ১৪৪ জন। খালি পদের সংখ্যা ৭৬টি। এরমধ্যে শূন্য রয়েছে ১৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ।

এদিকে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৯৯ জনবলের বিপরীতে আছে ১৪১ জন। খালি পদের সংখ্যা ৫৮টি। এরমধ্যে শূন্য রয়েছে ৬ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ এবং শিবচর ১০০ শয্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৫৩ জনবলের বিপরীতে আছে ১৬৭ জন। খালি পদের সংখ্যা ৮৬টি। এরমধ্যে শূন্য রয়েছে ১০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ। আর ২০ শয্যাবিশিষ্ট কবিরাজপুর হাসপাতালের ২৫ জনবলের বিপরীতে আছে ৭ জন। খালি পদের সংখ্যা ১৬টি। এরমধ্যে শূন্য রয়েছে ৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ।

জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে কিছু সংখ্যক চিকিৎসক থাকলেও যোগদানের পরপরই অনেকেই অন্যত্র চলে যাচ্ছেন তারা। তাই সেই পদে নতুন কাউকে পদায়নও করা যাচ্ছে না। অবশ্য, জনবল সংকটের ঘাটতি পূরণে কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানান জেলার সিভিল সার্জন ডা. শরিফুল আবেদীন কমল।

তিনি বলেন, জেলার সবগুলো সরকারি হাসপাতালেই জনবল সংকট। বার বার চিঠি দেয়া হচ্ছে, মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু জনবল নিয়োগ দিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তারপর আবারও এ ব্যাপারে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া হবে।

ভিওডি বাংলা/মহিবুল আহসান লিমন/ এমএইচ

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
এশিয়ার প্রথম পানি জাদুঘর কলাপাড়ায়
এশিয়ার প্রথম পানি জাদুঘর কলাপাড়ায়
বিচারককে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে জামায়াত নেতাকে বহিষ্কার
বিচারককে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে জামায়াত নেতাকে বহিষ্কার
৯২৫ কোটি টাকার সেতু থেকে উদ্বোধনের পরদিনই বৈদ্যুতিক ক্যাবল চুরি
৯২৫ কোটি টাকার সেতু থেকে উদ্বোধনের পরদিনই বৈদ্যুতিক ক্যাবল চুরি