রাজনৈতিক সংকটের প্রধান কারণ দুর্নীতি : ফখরুল


সংকট সমাধানের পথ ‘নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিত্বের সরকার’ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘এই যে সমস্যার কথা বললেন সমাধানের পথ কী? এটা আমার সিষ্টেমের ওপর নির্ভর করবে।আমি যদি একটা জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠন করতে পারি, আমি যদি একটা সুষ্ঠ নির্বাচন করতে পারি, সুষ্ঠ নির্বাচন করে আমি যদি ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পার্লামেন্ট গঠন করতে পারি তাহলে সেখানে আমি জনগণের কাছে জবাবদিহিতামূলক একটা ব্যবস্থা তৈরি করতে পারব। সেটাই হবে আমাদের… আমি মনে করি আপাতত এটা একটা ভালো পথ বেরোবে যেখানে গিয়ে আমি হয়তবা কিছুটা সমস্যার সমাধান করতে পারবো।’
‘সচিবালয়ে উপদেষ্টারা অসহায়’
সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা শেষ করে দিয়েছে, স্বাস্থ্য শেষ হয়ে গেছে… এগুলোকে আবার নতুন করে গড়ে তোলার জন্য তো মানুষ লাগবে… সেই মানুষগুলো তো তৈরি করতে হবে আপনাকে। আজকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আপনি সেক্রেটারিয়েটে যাবেন সেখানে গেলে ওই যে আমলারা বসে আছেন… তারাই সবকিছু নির্ধারণ করেন। আমাদের উপদেষ্টা যারা দায়িত্ব পালন করছেন এখন… অনেক ক্ষেত্রেই তারা অসহায়। তারপরও আমরা আশা করি যে, তারা(উপদেষ্টারা) এতদিন যে চেষ্টা করেছেন সে চেষ্টাটা নিয়ে, যারা সংস্কারের যেসব কমিশনগুলো আছে তারাসহ আমরা সবাই মিলে একটা শুরু করতে পারি, যে শুরুটা দিয়ে আমরা একটা ভবিষ্যৎ একটা বাংলাদেশ যেটা বৈষম্যহীন বাংলাদেশের দিকে আমরা এগিয়ে যেতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘‘দেখুন সেই গ্রামের একজন স্কুল শিক্ষক তার সমস্যার সমাধান করতে হলে তাকে ঢাকায় আসতে হয়। কেনো? যেটার প্রয়োজন নাই সেটা জেলাতেই যথেষ্ট। কিন্তু ওই যে সিষ্টেম। ওই সিষ্টেমে যদি সেন্টালে না আসে তাহলে ঘুষটা আসবে কোত্থেকে। এটাই বাস্তবতা… শুনতে খারাপ লাগবে বাট দ্যাট দা ট্রুথ।”
ই্উনির্ভাসিটিতে শিক্ষক নিয়োগ হয় ঘুষ দিয়ে, স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ হয় ঘুষ দিয়ে, নার্সদের নিয়োগ হয় ঘুষ দিয়ে। তাহলে যেই ব্যবস্থাতে অনিয়ম চলতে থাকে, যে ধরণের বৈষ্যম চলতে থাকে সেখানে রাতারাতি কিছু করে ফেলতে পারবে না এটা খুব ডিফিকাল্ট। আমাদেরকে কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে যেতে এমন সিষ্টেমের মধ্যে যেতে হবে যাতে্ আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা অন্তত মিনিমাম যে ন্যায় বিচার সেই ন্যায় বিচারটা নিশ্চিত করবেন জনগণের।”
জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জ্বল হোসেন মানিক মিয়া হলে অপর্ণা আলোক সংঘ সংগঠনের উদ্যোগে ‘সামাজিক সুরক্ষা কতটা সুরক্ষিত?’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
‘সিষ্টেম বদলাতে হবে’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আসলে কাঠামোটা সংস্কার দরকার যে কথা আমাদের সাকি সাহেব বলেছেন আমাদের ববি হাজ্জাজ বলেছেন এটা আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি যে, আমাকে আগে আমার কাঠামোটাকে বদলাতে হবে এবং সেই কাঠামোতে আমাদের এই বিষয়গুলোকে অত্যন্ত মানে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচার করতে হবে। আমাদের শিক্ষক ছিলেন ড. আবু মাহমুদ অর্থনীতি পড়াতেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে. খুব বিখ্যাত শিক্ষক ছিলেন। তিনি মাঝে মাঝে খুব ভালো ভালো কথা বলতেন….তার মধ্যে একটা কথা তিনি বলতেন… তুমি যদি বেগুন গাছ লাগাও সেখান থেকে তো তুমি কমলালেবু আশা করতে পারো না। তো আমরা লাগাবো বেগুন গাছ আর আশা করব আপনার কমলালেবু সেটা তো হয় না। আমাদের এই সিস্টেমটাইকে পরিবর্তন করতে হবে। বিচ্ছিন্নভাবে কোনো কিছু হবে না, জোড়াতালি দিয়েও কিছু হবে না। একটা সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য লক্ষ্য, চিন্তাভাবনা নিয়ে এগুতে হবে।’
‘হতাশা কথা যেখানে’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই গণ অভ্যুত্থান তারপরেই যখনই আমরা আপনার নতুন করে রাষ্ট্র কাঠামো পরিবর্তন সংস্কার শুরু করেছি, তখনই তো আপনার বিবাদ শুরু করেছি তর্ক-বিতর্ক শুরু করেছি… ভালো কথা তর্ক বিতর্ক তো হবেই গণতন্ত্রে যেতে হলে। কিন্তু এমন জায়গায় যাচ্ছি মাঝে মাঝে যে জায়গায় গিয়ে হতাশা এসে যায়….। আমাকে জোনায়েদ সাকি সাহেব বারবার বলছিলেন যে, এমন কিছু বলবেন না যেটাতে হতাশা আসে। আমি হতাশাবাদী কখন ছিলাম না আমি হতাশাবাদী হতেও চাই না কিন্তু এটা তো সত্য কথা যে হতে হচ্ছে। আমি যখন একটা প্রগতিবাদী সমাজ দেখতে চাই, আমি যখন একটা মানুষের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করবার জন্য আপনার একটা সুষ্ঠ ব্যবস্থা চাই, আমি যখন জনগণের যে বৈষম্য কমিয়ে আনতে চাই… তার আর্থিক বৈশিষ্ট্য বৈষম্য কমিয়ে আনতে চাই তখন যদি আমি দেখি যে, সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে ভিন্ন চিন্তা করা হচ্ছে এবং সেটাকে ডাইভার্ট করার চেষ্টা করছে মানুষের চিন্তাভাবনাগুলোকে এবং একটা উগ্রবাদে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে তখন তো হ্তাশা আসবেই।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের যারা আমরা লড়াই করেছি, লড়াই করছি করে চলেছি আমাদের দায়িত্ব হবে যে সত্যিকার অর্থেই জনগণের জন্য যেন আমরা কাজ করি… জনগণ কথাটা আমার কাছে খুব ভেগ মনে হয়। কারণ কোন জনগণ? কারা? সেটা কি আপনার সালমান এফ রহমান, নাকি আপনার কি এস সালাম নাকি আমাদের কলিম উদ্দিন-সলিম উদ্দিন। ওই জায়গাগুলোতে আমাদের আসতে হবে আলোচনা করতে হবে।বাস্তবতার প্রেক্ষিতে এই চেয়ারম্যান সাহেবরা যে কথা বললেন, সাধারণ মানুষরা যে কথা বলছে, ওই রিক্সাওয়ালা ভাইরা যারা প্রাণ দিয়েছে…… তাদের কথাবার্তা শুনে যখন জনপ্রতিনিধিরা সত্যিকার অর্থেই জনগণের সমস্যার সমাধান করার জন্য আন্তরিক হবেন, সততার সঙ্গে করবেন তখনই হয়তোবা আমরা কিছুটা ভালো পথ দেখতে পারব।’
‘আওয়ামী লীগ ভূমি ধস ঘটিয়েছে’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জনগণ ভোটে নির্বাচিত করছে। সব কিছু নির্ভর করছে যারা ক্ষমতায় যাচ্ছে তারা কিভাবে সেই দেশটাকে পরিচালনা করছে? আওয়ামী লীগকে তো যেনোতেনোভাবে ভোট দিয়েছিলো ২০০৮ সালে তাই না। সেই আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে এই দেশকে সর্বশান্ত করে দিয়েছে। একেবারে বলা যায় যে ভূমি ধস করে দিয়েছে। সেই জায়গায় আপনি এক দেড় বছরে সব কিছু ঠিক করবেন এটা মনে করার কারণ নাই। তবে কাজ শুরু করতে হবে স্বচ্ছ্ ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সামনে এগুতে হবে।’
‘দুর্নীতি মুক্ত হতে হবে’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থেকে সবকিছুর ঊর্ধে উঠে অর্থাৎ দুর্নীতির উর্ধে উঠে আমাদেরকে আমাদের ভবিষ্যৎ তৈরি করার জন্য কাজ করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ পারে… বাংলাদেশের মানুষ ’৬৯ এ পেরেছে, বাংলাদেশের মানুষ ’৭০ এ পেরেছে, বাংলাদেশের মানুষ ’৭১ পেরেছে। না পারার কোন কারণ নেই। আর সবশেষে যেটা(’২৪) পেরেছে এটা তো অভাবনীয়, অসাধারণ। সেই ক্ষেত্রে আমার মনে হয় যে, আমরা পারবো। আমাদেরকে সামনের দিকে ধৈর্য ধরে এগিয়ে যেতে হবে। এখন আমাদের যে সুযোগটা এসেছে তাকে যদি কাজে লাগাতে পারি, কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারি তাহলে হয়তবা আমাদের যে অভ্যুত্থান হলো সেই অভ্যুত্থানের কিছুটা মূল্যায়িত হবে এবং ছেলেরা যে প্রাণ দিলে তারও কিছু মূল্যায়ন হবে।’
সংগঠনের প্রধান বীথিকা বিনতে হোসাইনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, এনডিএমের ববি হাজ্জাজ, সাবেক সাংসদ রেহানা আক্তার রানু, অর্থনীতিবিদ এম মাসরুর রিয়াজসহ স্থানীয় পর্যায়ের কয়েকজন নির্বাচিত প্রতিনিধিবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
ভিওডি বাংলা/ রিজভী/ এমএইচ