পাটের সুদিন ফিরবে এমন আশা পাট চাষীদের


চলতি বছরে উপজেলায় তোষা, কেনাফ, মেস্তাসহ কয়েকটি জাতের পাটের আবাদ হয়েছে। পাট মৌসুমে বিভিন্ন এলাকায় পাট কাটা, জাগ দেওয়া ও পাটকাঠি থেকে আঁশ ছাড়ানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। অন্য বছরের তুলনায় এবার পাটের ভালো ফলন ও দাম বেশি হওয়ায় কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসির ঝিলিক।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কৃষকরা এখন পাট ধোয়া ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পাট চাষ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় প্রতি মণ পাটের দাম বেড়েছে প্রায় এক হাজার টাকা।
কৃষকরা জানান, এবছর বিঘাপ্রতি পাট চাষে বীজ, জমি চাষ, কীটনাশক ও পরিচর্যাসহ খরচ হয়েছে ২০ থেকে ২৪ হাজার টাকা। প্রতিবিঘায় ৮ থেকে ১০ মণ পাট উৎপাদন হয়েছে, পাশাপাশি ৫০০ থেকে ৭০০ আটি পাটকাঠিও মিলেছে। বর্তমানে মান ও আকারভেদে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৯০০ টাকায়, আর প্রতি আটি পাটকাঠি বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ৭ টাকায়। খরচ বাদে কৃষকরা বিঘাপ্রতি লাভ করছেন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা।
পাটের ভাল দামে খুশি ব্যবসায়ীরাও। তারা বলেন, সারা বছর ন্যায্য মূল্যের নিশ্চয়তা থাকলে কৃষকরা পাট চাষে আরও উৎসাহী হবেন।
কুমারখালী পৌর এলাকার কৃষক মাসুম জানান, বর্তমানে প্রকার ভেদে বিঘা প্রতি ৮ থেকে ১১ মণ পর্যন্ত ফলন হচ্ছে। একদিকে বিঘা প্রতি প্রায় ১০ থেকে ১১ মণ হারে পাট এবং ১ হাজার ২০০ হাতা পাটখড়ি পাওয়ায় যায়। যা বিক্রি করে অনেক টাকা লাভ হয়। পাটের পাতা জমিতে পড়ে পচে গেলে কম্পোস্ট সার তৈরি হয়। এতে জমির মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধিসহ রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমে আসে। সবদিক থেকে পাট চাষ লাভজনক।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবছর কুমারখালী উপজেলায় ৪ হাজার ৬৪৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পাট চাষ হয়েছে ৪ হাজার ৮৭৮ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে ২.৬৩ মেট্রিক টন হিসেবে মোট উৎপাদন হয়েছে ১২ হাজার ৮২৯ মেট্রিক টন পাট, যার বাজারমূল্য ১১২ কোটি টাকারও বেশি।
পাট চাষী নজরুল বলেন, আমার এলাকায় পাট কাটা প্রায় শেষ হয়েছে। পাট চাষাবাদে কম খরচ ও পরিশ্রমে বেশি লাভবান হওয়া যায়। তাই চাষিদের সোনালি আঁশ চাষাবাদে বিনামূল্যে বীজসহ মাঠ পর্যায়ে নানা ধরনের পরার্মশ ও সহযোগিতা দেওয়া হলে আরো ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব। পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে উঁচু, নীচু, পতিত জমিতে কৃষকদের পাট চাষাবাদে উৎসাহিত ও পরামর্শ দেওয়া উচিত। এবার পাটের দাম ভালোপাওয়ায় কৃষকরা খুশি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাইসুল ইসলাম বলেন, ৪ হাজার ৬৪৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। চাষ হয়েছে ৪ হাজার ৮৭৮ হেক্টর জমিতে । “এবছর পাট চাষীরা লাভের মুখ দেখবেন। প্রশাসনের নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে কৃষকরা সারাবছর পাটের ন্যায্য মূল্য পাবেন—এমনটাই প্রত্যাশা।”
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ