বস্তায় আদা চাষে রাজশাহী পবার জিয়াউলের সফলতা


ধান, আলু, পান, আম ও লিচুর রাজ্য হিসেবে পরিচিত রাজশাহীতে এখন বইছে নতুন কৃষি বিপ্লবের হাওয়া। প্রচলিত ফসলের গণ্ডি পেরিয়ে তরুণ উদ্যোক্তা জিয়াউল হকের হাত ধরে আম বাগানের পতিত জমিতে বস্তায় আদা চাষে এসেছে অভাবনীয় সাফল্য। তার এই সাফল্য শুধু নিজের ভাগ্যই বদলায়নি বরং পথ দেখাচ্ছে এলাকার শত শত বেকার যুবক ও কৃষককে। কম খরচে বেশি লাভের এই নতুন কৃষি প্রযুক্তি রাজশাহীর অর্থনীতিতে আনছে নতুন দিগন্ত।
রাজশাহীর পবা উপজেলার হুজুরীপাড়া ইউনিয়নের তরুণ উদ্যোক্তা জিয়াউল হক। গতানুগতিক কৃষিতে নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়ে তিনি নতুন পথের সন্ধান করছিলেন। ঠিক তখনই পবা উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় শুরু করেন বস্তায় আদা চাষ। গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে নিজের আম বাগানের ফাঁকা জায়গায় প্রায় আড়াই হাজার সিমেন্টের বস্তায় আদা চাষ করেন তিনি। প্রতিটি বস্তার জন্য মাটি তৈরি, বীজ, সার ও শ্রমিকের মজুরি বাবদ খরচ হয়েছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। সব মিলিয়ে মোট খরচ দাঁড়ায় ১ লক্ষ থেকে সোয়া লক্ষ টাকা।
ফসল তোলার পর সব হিসেব পাল্টে যায়। প্রতি বস্তা থেকে গড়ে ৮০০-৯০০ গ্রাম আদা পাওয়ায় মোট উৎপাদন হয় প্রায় ২,২৫০ কেজি। সেই আদা বাজারে বিক্রি করে খরচ বাদে তার নিট লাভ হয়েছিল প্রায় দুই লক্ষ টাকার বেশি।
প্রথম বছরের অভাবনীয় সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে চলতি বছর চাষের পরিসর বহুগুণ বাড়িয়েছেন জিয়াউল হক। তিনি বলেন, “এ বছর আমি আমার আম বাগান এবং বাড়ির চারপাশের পতিত জমিতে মোট ২০ হাজার বস্তায় আদা রোপণ করেছি। গাছের অবস্থা খুবই ভালো, রোগবালাইয়ের তেমন কোনো আক্রমণ নেই। আশা করছি, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার প্রায় ১৮ হাজার কেজি আদা পাব।” বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী, এ বছর তার লাভ ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে তিনি আশা করছেন। জিয়াউল হক আরও বলেন, “বস্তায় আদা চাষ শুধু আমার একার নয়, এলাকার অনেক বেকার যুবকের জন্য নতুন আয়ের পথ খুলে দিয়েছে।”
জিয়াউল হকের এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নিবিড় পরিচর্যা ও কারিগরি সহায়তা। বস্তায় আদা চাষের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি কন্দ পচা রোগ ও জলাবদ্ধতা সহনশীল। ভারী বর্ষণেও ফসল নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে না, কারণ বস্তাগুলো সহজেই উঁচু স্থানে সরিয়ে নেওয়া যায়। এতে প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে পরিচর্যার খরচ ও শ্রম দুটোই অনেক কম।
পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এম. এ. মান্নান জানান, “চলতি বছর পবা উপজেলায় ৩০ হাজার বস্তায় আদা চাষ হচ্ছে, যার মধ্যে ২০ হাজার বস্তাই জিয়াউল হকের। তার এই সাফল্য অন্যদের জন্য একটি দারুণ উদাহরণ। আমরা এখন ইউনিয়নের অন্য কৃষকদেরও পতিত জমিতে আদা, হলুদসহ অন্যান্য মসলা চাষে উদ্বুদ্ধ করছি এবং সব ধরনের কারিগরি সহায়তা দিচ্ছি।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে আদার চাহিদার তুলনায় উৎপাদন অনেক কম। এই ঘাটতি পূরণে বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষ দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া গেলে আমদানিনির্ভরতা বহুলাংশে কমে আসবে। জিয়াউল হকের মতো উদ্যমী তরুণদের হাত ধরে রাজশাহীতে শুরু হওয়া এই নীরব কৃষি বিপ্লব একদিন বাংলাদেশকে মসলা উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করবে, এমনটাই আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ