• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

নির্বাচন নিয়ে সংশয় কাটাতে সরকারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ : সাইফুল হক

নিজস্ব প্রতিবেদক    ২৫ আগস্ট ২০২৫, ০৭:৫৫ পি.এম.
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। ছবি: সংগৃহীত

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, নির্বাচন  নিয়ে সংশয় কাটাতে সরকারের দৃঢ় রাজনৈতিক ইচ্ছাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন পর্যন্ত যেতে হলে সরকারের মধ্যকার ছোট ছোট 'সরকারগুলোকে' অবিলম্বে ভেংগে দিতে হবে। দলীয় এজেন্ডার কারনে ফেব্রুয়ারির নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে গেলে গণ -অভ্যুত্থানের অর্জন বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে।

সোমবার (২৫ আগস্ট)  সকালে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স  পার্টি আহুত সংবাদ সম্মেলনে পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন , আগামী  ফেব্রুয়ারীতে সরকার ও নির্বাচন কমিশন থেকে জাতীয়  সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, অবাধ জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করতে সরকারের দৃঢ়  রাজনৈতিক সদিচ্ছাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য সরকারকে দ্রুত যাবতীয় পক্ষপাতদুষ্টতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।বিতর্কিত উপদেষ্টাদের দ্রুত প্রত্যাহার করে প্রয়োজনে উপদেষ্টামন্ডলী পুনর্গঠন করতে হবে।

তিনি বলেন,  এই সরকারকে নির্বাচন পর্যন্ত যেতে হলে সরকারের মধ্যে থাকা 'সরকারগুলো' অবিলম্বে ভেংগে দিতে হবে। আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সমগ্র প্রশাসনকে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন সরকারের কার্যকরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হবে।

তিনি সমগ্র প্রশাসনকে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করে ঢেলে সাজানোর আহবান জানান। তিনি বলেন, সরকার, প্রশাসন ও আইন শৃংখলা বাহিনীর নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হলে নির্বাচনও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে  পড়বে।

তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারিতে অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের পথম কাজ হচ্ছে  ভেংগেপড়া  সমগ্র নির্বাচন ব্যবস্থার উপর জনআস্থা প্রতিষ্ঠিত করা।।সরকার, রাজনৈতিক দল বা বিশেষ কোন মহল থেকে যেকোনো ধরনের অন্যায়, অযৌক্তিক ও অনৈতিক দাবি, চাপ বা হুমকি দৃঢ়চিত্তে মোকাবেলা করা; প্রয়োজনে এসব অন্যায্য চাপ জনসম্মুখে প্রকাশ করা।

সংবাদ সম্মেলনে সাইফুল হক বলেন, আরপিও বা নির্বাচন বিধি চূড়ান্ত করার আগে নির্বাচন কমিশনের কাজ হচ্ছে রাজনৈতিক দল ও গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের মতামত গ্রহণ করা।তিনি বলেন, নির্বাচনে অঢেল অর্থব্যয়সহ নির্বাচনে রাজনৈতিক প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ, ধর্মীয় অনুভূতির ব্যবহার বন্ধ এবং নির্বাচনের সত্যিকার গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত না হলে নির্বাচন অর্থহীন হয়ে যাবে। তিনি বলেন  নির্বাচনকালীন নির্বাচনসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়সমূহ নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বে নিয়ে আসাও জরুরি। 

রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি  আহবান জানিয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির  সাধারণ সম্পাদক বলেন, রাজনৈতিক মতভিন্নতা বা রাজনৈতিক প্রতিযোগিতাকে উগ্র বৈরীতায় 
নিয়ে যাওয়া হবে আত্মঘাতী। হিংসাশ্রয়ী এই বিভক্তি বিভাজনের কারণে গণ - অভ্যুত্থানের অবশিষ্ট অর্জন হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।

তিনি বলেন, দলীয় এজেন্ডার কারণে  ফেব্রুয়ারীর নির্বাচন কোন কারণে অনিশ্চিত হয়ে পড়লে বাংলাদেশের বিদ্যমান নিরাপত্তা ঝুঁকি আরও আরও বৃদ্ধি পাবে এবং সে রকম পরিস্থিতিতে আম - ছালা দুটোই চলে যেতে পারে।তিনি নির্বাচন  সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করার উদাত্ত আহ্বান জানান।

সংবাদ সম্মেলনে সাইফুল হক প্রস্তাবিত জুলাই সনদ সম্পর্কে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির অবস্থান তুলে ধরেন :-

ক। আমরা মনে করি দলসমূহ কর্তৃক জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের পর আর কোন অংগীকারনামার প্রয়োজন হয়না।কারণ স্বাক্ষর করাটা অংগীকারনামার চেয়ে বেশীকিছু।তারপরেও যদি অধিকাংশ রাজনৈতিক দল অংগীকারনামার প্রয়োজন বোধ করে তাহলে ৮ দফা অংগীকারনামার প্রথম দফাটি বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে। 

খ। অংগীকারনামার দ্বিতীয় দফাটি, বিশেষ করে ' বিদ্যমান সংবিধান বা অন্য কোনও আইনে ভিন্নতর কিছু থাকলে সেই ক্ষেত্রে এই সনদের বিধান / প্রস্তাব /সুপারিশ প্রাধান্য পাবে" - এটি একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ কোন সমঝোতা সনদ রাষ্ট্র পরিচালনার প্রধান  গঠনতান্ত্রিক দলিল - সংবিধানের উপর প্রাধান্য লাভ করতে পারেনা।এই ধরনের চিন্তা ও তৎপরতা সংবিধানের উপর আর একটি 'সুপরা কনস্টিটিউশাল দলিল স্থাপনের সামিল।এই প্রস্তাব  সংবিধানের দার্শনিক - রাজনৈতিক গুরুত্ব,  মৌল ভিত্তি ও মর্যাদার অবনমন ঘটাবে।

বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামোতে জনগণের অভিপ্রায়  নিশ্চিত হওয়া যাবে কেবল নির্বাচনের মধ্য দিয়ে।কিছু রাজনৈতিক দলের সমঝোতার কোন সমঝোতার দলিলকে জনগণের চূড়ান্ত অভিপ্রায় হিসাবে বিবেচনা করার কোন অবকাশ নেই।

গ।অংগীকারনামার তৃতীয় প্রস্তাবও  বিবেচনাপ্রসুত ও গ্রহণযোগ্য নয়।সনদের কোন বিধান, প্রস্তাব বা সুপারিশ সংক্রান্ত যেকোনো প্রশ্নের চূড়ান্ত মীমাংসার এখতিয়ারও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের উপর ন্যাস্ত করার দরকার নেই।এটা অপ্রয়োজনীয়। কারণ,  যে বিশেষ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর যে সমঝোতার ভিত্তিতে সনদ স্বাক্ষরিত হবে সে ব্যাপারে  উত্থাপিত  প্রশ্নসমূহের ব্যাপারে  নির্বাচিত সংসদের ভূমিকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। 

ঘ।অংগীকারনামার চতুর্থ প্রস্তাবও গ্রহনযোগ্য ও যুক্তিযুক্ত নয়। সনদ নিয়ে প্রশ্ন তোলা নাগরিকদের  গণতান্ত্রিক সাংবিধানিক অধিকার। সনদে স্বাক্ষর করা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি বা সনদের বিশেষ কোন বিধান বা প্রস্তাবের প্রতি কোন নাগরিকের সমর্থন নাও থাকতে পারে- এটা বিবেচনায় নেয়া দরকার। সংবিধানকে গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিমূলক করতে যেয়ে নাগরিকদের  গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার কোন অবকাশ নেই।

জুলাই সনদের আইনী সুরক্ষা সম্পর্কে সাইফুল হক বলেন, 

ক। জুলাই সনদ নিয়ে গণভোটে যাওয়ার সুযোগ নেই।এত 'নোট অব ডিসেন্ট 'রেখে গণভোটে যাওয়ার প্রশ্নটাই অবান্তর।

খ।সংবিধান সভার নির্বাচনের প্রশ্নটাও অবান্তর। কারণ আমরা সংবিধানশুণ্য অবস্থায় নেই।বিদ্যমান সংবিধানের অধিনেই অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নিয়েছে এবং দেশ পরিচালনা করে আসছে।জাতীয় ঐকমত্য কমিশনও জুলাই সনদ প্রনয়নের কাজ এগিয়ে নিয়ে চলেছে বিদ্যমান সংবিধানে ভিত্তিতে। 

ঘ।  তিনি বলেন, জুলাই সনদের আইনী সুরক্ষা প্রদানের বিষয়ে আমাদের অবস্থান ইতিবাচক। সবাই মিলে আলোচনা করে এ সম্পর্কে মতামত গঠন করা যেতে পারে।এব্যাপারে সনদ স্বাক্ষরের পর সরকার প্রধান সংবিধানের ১০৬ আর্টিকেল অনুযায়ী উপযুক্ত মাধ্যমে আপিল বিভাগের মতামত চাইতে পারেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী,  আকবর খান, মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাক,  কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সিকদার হারুন মাহমুদ, সজীব সরকার রতন, কেন্দ্রীয় সদস্য ফিরোজ আলী,  কেন্দ্রীয় সংগঠক বাবর চৌধুরীসহ পার্টির মহানগর নেতৃবৃন্দ।

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
‘আমি মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে আপস করব না’
‘আমি মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে আপস করব না’
ফজলুর রহমানকে গ্রেপ্তারের দাবিতে সেগুনবাগিচায় বিক্ষোভ
ফজলুর রহমানকে গ্রেপ্তারের দাবিতে সেগুনবাগিচায় বিক্ষোভ
জনগণ ভোট দেয়ার জন্য মুখিয়ে আছে: ড. মঈন খান
জনগণ ভোট দেয়ার জন্য মুখিয়ে আছে: ড. মঈন খান