চাপিয়ে দেয়া রাজনীতিতে গণরুম-গেস্টরুম চালুর শঙ্কায় শিক্ষার্থীরা: সাদ্দাম


বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেছেন, ছাত্ররা শঙ্কিত হয়ে পড়ছে যে সামনে যদি আবারও হলগুলোতে রাজনীতি চললে গণরুম গেস্টরুম চালু করতে সময় লাগবে না। কারণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক যারা বিএনপিপন্থি সাদা, লাল, নীল দল রাজনীতি করে, ওই রাজনীতিকে টিকানোর জন্যই কারো দারস্থ হতে হয় বা নির্ভরশীল হতে হয়। ওনারা পরবর্তীতে প্রভোস্ট, প্রক্টর বা অন্যান্য দায়িত্বে আসবেন। এই শিক্ষকরাই পরবর্তীতে ছাত্র সংগঠনগুলোকে সিট বাণিজ্য, হল বাণিজ্য ও নানান ধরনের কর্মকাণ্ড করার জন্য সুযোগ করে দিবে।
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ‘হাফেজে কুরআন সংবর্ধনা’ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
শিবির সেক্রেটারি বলেন, হল রাজনীতির এই ট্রামাডাইজ থেকে উদ্ধার হবে তখন, যখন শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের প্রতি আস্থা পাবে এবং ছাত্র সংগঠনগুলো আসলে পূর্বের ধারায় আর নাই। আমরা প্রশাসনকে বলছি- ছাত্রশিবিরকে সাধারণ ছাত্রদের মুখোমুখি দাঁড় করানোর কোনো ষড়যন্ত্র মেনে নিবে না। আমাদেরকে বলা হবে কমিটি দাও, আবার কমিটি দিলে মব তৈরি করলো, বের করে দিলো, এই জাতীয় ছাত্ররাজনীতি ইসলামী ছাত্রশিবির চায় না। আমরা বিশ্বাস করি ছাত্রশিবির যেহেতু শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করে, ছাত্ররা যেভাবে অনুভব করবে সেভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সাদ্দাম আরো বলেন, ছাত্ররা না চাইলে আমরা চাইবো না। ছাত্রদের পার্সেপশানের বাহিরে তো আমরা রাজনীতি করবো না। ছাত্ররা যে জিনিসটা চাই সেটা নিয়ে ইসলামি ছাত্রশিবির আগাবে। হল রাজনীতি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের ডেকেছিলো, অন্য সংগঠন সহ সবাই একসাথে ছিল। সেখানে হলের রাজনীতি নিয়ে আমাদের মতামত জানতে চেয়েছে। সব ছাত্র সংগঠন বলছে- হলে রাজনীতি থাকতে হবে, সুতরাং এটা তাদের পার্সেপশান। আমরাও চাই সব জায়গায় রাজনীতি থাকুক। এটা তো মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার। মত প্রকাশেরও স্বাধীনতা থাকবে।
তিনি বলেন, তবে ৫ আগস্টের পরে সামগ্রিক পরিস্থিতির বিবেচনার কারণে ছাত্র রাজনীতি অফ করে দেয়া হয়েছে সাময়িক সময়ের জন্য যে আবাসিক জায়গায় কোনো রাজনীতি ও হল কমিটি চলবে না। তারা (শিক্ষার্থীরা) এ ব্যাপারে একমত হয়েছে। কারণ এর আগে হলরুম গেস্ট রুম কালচারের মধ্য দিয়ে অসংখ্য শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এমনকি আবরার ফাহাদকে হত্যাই করে ফেললো। ফলে বিপ্লবে নামান্তর হলো। হলে রাজনীতির কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টর্চার সেল নির্মাণ করা হয়েছিল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে অস্ত্র, মদ এবং নারীদের পোশাক পর্যন্ত সেখান থেকে উদ্ধার করেছে। এগুলো তো ক্যাম্পাসে হওয়ার কথা ছিল না।
তিনি আরো বলেন, ১৫ বছরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসকে তাদের বাপদাদার সম্পত্তি মনে করছে। এমন অরাজকতা সৃষ্টি করেছে যা পূর্ববর্তী সকল রেকর্ড ভেঙেছে। এরকম ট্রামাডাইজ দেখে ছাত্ররা স্বাভাবিক ভাবেই চায় আগের মতো পরিস্থিতি আর ফিরে না আসুক। তাদের আশংক করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কারণ ৫ আগস্টের পরে ছাত্রদল নিজেদের মধ্যে আন্তঃকোন্দলে ৫ জন মানুষ নিজেরাই মেরে ফেলছে। চাঁদাবাজি, ধর্ষণ সহ হাজার ঘটনাগুলো ঘটেছে ৫ আগস্টের পর। অনেকে তুলনা করছে ছাত্রলীগের সাথে এদের মধ্যে কোনো তফাত নেই। কমিটি দিয়েছে সেখানেও সবগুলো ছাত্রলীগকে পুনর্বাসন করেছে। ঢাকসু ইলেকশনের কমিটিতেও ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাচ্ছে। ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততা যখন গণহারে পাচ্ছে, আবার আচরণের মধ্যেও সেই জায়গাটা ফেরত আসছে। ছাত্ররা কমিটি চায় না, সেখানে কমিটি দিয়ে বসে আছে, ছাত্ররা আন্দোলন করছে, সেখানেও শিবির ট্যাগ দেয়া হচ্ছে। তাদেরকে নানাভাবে ফ্রেমিং করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ