সাংবাদিক নীতিমালা পর্যালোচনার আশ্বাস ইসির

সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনের লক্ষ্যে সাংবাদিক নীতিমালা পর্যালোচনা করে প্রয়োজনে সংশোধনের আশ্বাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন ভবনে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি)-এর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের মতবিনিময় সভায় এমন আশ্বাস দিয়েছে কমিশন।
নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, আমরা সবাই স্বচ্ছ নির্বাচন চাই। একটি ট্রান্সপারেন্ট ভোটের জন্য আপনাদের সহযোগিতা অত্যন্ত প্রয়োজন। আপনাদের সহযোগিতা চাই।
তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে দাবি জানানো হয়েছে। দাবিগুলো পর্যালোচনা করে যেটা সাংবাদিকদের জন্য, উভয় পক্ষের জন্য, মানুষের জন্য স্বচ্ছ নির্বাচন করা যাবে সেটি করা হবে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, মুশকিলের বিষয় হচ্ছে আমরা কেউ আস্থার জায়গায় নেই। আমি নিজেও আস্থার জায়গায় আছি সেটিও দাবি করছি না। এই যে আস্থার সংকট, এটা আমাদের জাতীয় সংকট।
নীতিমালার খসড়া নিয়ে সাংবাদিকদের দাবি বিশ্লেষণ করে সমাধানের আশ্বাস দেন তিনি।
ইসি আনোয়ারুল বলেন, প্রত্যেকটা বিষয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা দরকার। দুইদিক থেকেই সহযোগিতা করুন। বাস্তবতার নিরিখে যার যার অবস্থান থেকে একটা ভালো নির্বাচন করতে পারি সেজন্য পরস্পরকে সহযোগিতা করতে হবে। এটি নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনা, বিশ্লেষণ আপনাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় দরকার। মূল উদ্দেশ্য যেহেতু আমাদের সবার একটাই, আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এগুলো পরবর্তীতে সমাধান করা যায়।
এসময় নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ বরাবরের মতো স্বচ্ছ নির্বাচনের লক্ষ্যে খোলা মাঠে ভোটের পক্ষে মত দেন। তাহমিদা আহমদ স্বচ্ছ ভোট আয়োজনের বিষয়ে বলেন, ট্রান্সপারেন্ট নির্বাচন যদি চান তাহলে ওপেন স্পেসে নির্বাচন করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে, সেটাই হবে স্বচ্ছ নির্বাচন। তা না হলে ট্রান্সপারেন্ট নির্বাচন কখনও হবে না। এতো সাংবাদিককে একসঙ্গে জায়গা দেওয়া যাবে না।
এসময় নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমদ অবাধ তথ্য প্রবাহের সুযোগ উন্মুক্ত রাখার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ২৩ জুলাই সাংবাদিক/গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য নীতিমালা, ২০২৫ জারি করে ইসি। এতে ভোটকক্ষ থেকে সরাসরি সম্প্রচার ও গোপন কক্ষের ভেতরে গিয়ে ছবি তোলায় বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া বৈধ কার্ডধারী সাংবাদিক সরাসরি ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন; পরে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে অবহিত করে তথ্য, ছবি ও ভিডিও নেবেন; গোপনকক্ষের ছবি তোলা যাবে না; একসঙ্গে দুজনের বেশি সংবাদকর্মী ভোটকক্ষে প্রবেশ করতে পারবে না; ভেতরে থাকতে পারবেন সর্বোচ্চ ১০ মিনিট ও ভেতরে নির্বাচনী কর্মকর্তা, এজেন্ট বা ভোটারের সাক্ষাৎকার নেওয়া যাবে না- এমন বিষয় যুক্ত করা হয়।
আরএফইডি নেতারা সার্বিক বিষয় নিয়ে ভিন্নমত, আপত্তি তুলে ধরে জানিয়েছেন, বিদ্যমান নীতিমালা বহাল থাকলে সাংবাদিকদের অবাধ তথ্য প্রবাহ বিঘ্নিত হবে। সাংবাদিকদের এসব কড়াকড়ি আরোপ করলে অনিয়ম রোধে ইসির উদ্যোগের সব প্রচেষ্টা ভেস্তে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বিদ্যমান নীতিমালা সংশোধন করতে হবে।
আরএফইডি থেকে যেসব দাবি জানানো হয়-
১. অনুমোদিত সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে প্রিসাইডিং অফিসারকে অবহিত করার বিধান বাদ দেওয়ার দাবি জানানো হয়।
২. গোপনকক্ষের ছবি ধারণে বারণ থাকলেও নির্বাচনী অনিয়মের সময় এটি প্রযোজ্য হবে না।
৩. এক সঙ্গে অন্তত পাঁচ জন সাংবাদিককে ভোটকক্ষে প্রবেশের সুযোগ।
৪. গণমাধ্যম প্রতিনিধিকে বাধা দিলে দোষী সাব্যস্ত করার বিধান যুক্ত করা।
সভায় উপস্থিত ছিলেন- নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, তাহমিদা আহমদ, আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ ও ইসি সচিব আখতার আহমেদ।
আরএফইডি সভাপতি কাজী জেবেল মত বিনিময় সভায় সাংবাদিকদের জন্য প্রস্তাবিত নীতিমালা উপস্থাপন করেন এবং তা ইসির কাছে হস্তান্তর করেন। আর সঞ্চালনা করে আরএফইডি সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।
ভিওডি বাংলা/ এমপি