গণতন্ত্র বিরোধীদের টার্গেট এখন জাতীয়তাবাদী শক্তি: রিজভী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের (ভিসি) ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি অভিযোগ করেন, নারীর অধিকার ও উন্নয়ন বিষয়ে ভিসির নীরবতা তাকে আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রপন্থী মনে না হওয়ার যথেষ্ট কারণ সৃষ্টি করেছে। ভিসি একপক্ষের দিকে হেলে আছেন, যা এখন ওপেন সিক্রেট — মন্তব্য করেন রিজভী।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে বগুড়ায় বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন ।
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ছাত্রশিবিরের জিএস পদপ্রার্থী পূর্বে ছাত্রলীগের পদে ছিলেন এবং ভিপি পদপ্রার্থীও ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে দাবি করেছেন ফাহমিদা। এ কারণেই তাকে সাইবার বুলিং ও হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী।
তিনি আরও বলেন, “ছাত্রলীগের নামধারীরা যারা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে হামলা চালিয়েছে, মানুষের হাত-পা কেটেছে, তারাই এখন ভিন্ন পরিচয়ে ছাত্রশিবিরের নেতা সেজেছে।”
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, “ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলসহ একাধিক দলের প্যানেল রয়েছে। কেউ ১৯৭১ সালের রাজনৈতিক অবস্থানের ভিত্তিতে কাউকে রাজাকার বললেই যদি তাকে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হতে হয়, তবে তা প্রমাণ করে যে এসব সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয়কে আর জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র মনে করে না। অথচ তারাই এখন ইসলাম ও ধর্মের কথা বলছে।”
সরকার ও আওয়ামী লীগকে “ফ্যাসিবাদী” আখ্যা দিয়ে রিজভী বলেন, “ভয়ংকর রক্তপিপাসু শেখ হাসিনার আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিতাড়নে বড় অবদান তারেক রহমানের। তিনি জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের পটভূমি তৈরির মূল নায়ক ছিলেন। আমরা কি তখন ললিপপ খাচ্ছিলাম? সেই আন্দোলনে সর্বস্তরের মানুষের অবদান রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “স্বৈরাচার খুনি হাসিনার আওয়ামী লীগ ভারতপন্থি, আর বিএনপি বাংলাদেশপন্থি রাজনৈতিক দল। আমাদের ভারতপন্থি ট্যাগ দেবেন না। একটি গোষ্ঠী নিজেদের অপকর্ম আড়াল করতে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে, ট্যাগিং ও সাইবার বুলিং করছে। কিন্তু বিএনপির শিকড় দেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। যত চক্রান্তই হোক, ব্যর্থ হবেই। জনগণের শক্তির কাছে কোনও ষড়যন্ত্রই টিকবে না।”
রিজভী বলেন, “গণতন্ত্রবিরোধীরা জাতীয়তাবাদী শক্তিকেই টার্গেট করছে। বিএনপি কোনও প্রভু দেশের তাঁবেদারি করে না। একটি গোষ্ঠী নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে।”
ডাকসু নির্বাচন প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, “ছাত্রদল হলো আন্দোলন, সংগ্রাম এবং নীতি-আদর্শের দল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যদি অবাধভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, তাহলে ছাত্রদলের প্যানেলই জয়ী হবে।”
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবর রহমান ও হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলী আজগর তালুকদার হেনা, জয়নাল আবেদীন চাঁন, সাবেক এমপি কাজী রফিকুল ইসলাম, মাহফুজ ইসলাম, মাহমুদুর রহমান সুমন, ডা. নূর হাবীব এবং জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন।
সভায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভার আগে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচির অংশ হিসেবে করতোয়া নদীতে পোনা মাছ অবমুক্ত করেন রুহুল কবির রিজভী।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ষড়যন্ত্র ততই বাড়ছে। গণতন্ত্র বিরোধীরা জাতীয়তাবাদী শক্তিকেই টার্গেট করছে। দলের বিরুদ্ধে মব সংস্কৃতিসহ নানা ট্যাগিং, সাইবার বুলিং করা হচ্ছে। দেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক। নতুন করে যতই চক্রান্ত হোক, ব্যর্থ হবেই ইনশাআল্লাহ। জনগণের শক্তির কাছে কোনো ষড়যন্ত্রই টিকবে না।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বগুড়া শহরের ডিসি পার্ক (এসপি ব্রিজ) সংলগ্ন করতোয়া নদীতে মাছের পোনা অবমুক্ত কর্মসূচির উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বগুড়া জেলা মৎস্যজীবী দল আয়োজিত বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, সাবেক এমপি কাজী রফিকুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক মেয়র রেজাউল করিম বাদশা ও জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি মো. মোশারফ হোসেন।
রিজভী বলেন, বিএনপি কোনো প্রভু দেশের তাঁবেদারির রাজনীতি করে না। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশের নদী-নালা ও খাল-বিল প্রতিবেশী দেশকে লিজ দেওয়া হয়েছিল। তারা প্রভু দেশকে খুশি রাখার জন্য দেশকে উজাড় করে দিয়েছিল।
মৎস্যজীবী দলের কর্মসূচিতে জেলা বিএনপির সিনিয়র নেতা এমআর ইসলাম স্বাধীন, হামিদুল হক চৌধুরী হিরু, মাফতুন আহমেদ খান রুবেল, শহীদ উন নবী সালাম, কেএম খায়রুল বাশার, শেখ তাহা উদ্দিন নাহিন, জাহিদুল ইসলাম হেলাল, একেএম তৌহিদুল আলম মামুন, জেলা যুবদলের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, সাধারণ সম্পাদক আবু হাসান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার মুকুল, সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম শুভ, জেলা মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক ময়নুল হক বকুল, সদস্য সচিব খলিলুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম, জেলা ছাত্রদল সভাপতি হাবিবুর রশিদ সন্ধান, সাধারণ সম্পাদক এমআর হাসান পলাশসহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ভিওডি বাংলা/ এমপি