রাজশাহী বাঘায় পদ্মার ভাঙনে খোলা আকাশের নিচে ৬ পরিবার


পদ্মা নদীর পানি কমলেও রাজশাহীর বাঘায় ভয়াবহ আকারে দেখা দিয়েছে ভাঙন। চকরাজাপুর ইউনিয়নের কালিদাসখালী চরে মাত্র কয়েক দিনের ভাঙনে শত শত বিঘা ফসলি জমি, আম, পেয়ারা ও বরই বাগান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এদিকে গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে আকস্মিকভাবে প্রায় ১০০ মিটার এলাকা ভাঙতে শুরু করে। এতে মুহূর্তের মধ্যে আমগাছ, মেহগনি গাছসহ একের পর এক বসতবাড়ি নদীতে তলিয়ে যায়।
এ ঘটনায় অন্তত অর্ধশতাধিক পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে কালিদাসখালী চরের আলী হোসেন, আলী ফকির, জয়নাল হোসেন, হাসিনুর রহমান, মোবারক হোসেন ও উজির উদ্দিন এখন খোলা আকাশের নিচে জীবনযাপন করছেন। ঘরবাড়ি হারিয়ে শুক্রবার ভোর থেকে এই ছয় পরিবারের সদস্যদের মাথা গোঁজার ঠাঁই আর নেই। তাই পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা এখন সম্পূর্ণভাবে দিশেহারা।
শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িঘর হারানো পরিবারগুলো নদীর ধারে ভাঙন কবলিত এলাকায় খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে। সবার চোখেমুখে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তার ছাপ।
আলী ফকির ভাঙন থেকে বাঁচাতে বাড়িঘর ভেঙে নদীর ধারে সরিয়ে রাখলেও থাকার জায়গা আর নেই। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, “সব জমি পদ্মায় চলে গেছে। এখন আর কোথাও ঘর করার জায়গা নেই। নিরুপায় হয়ে খোলা আকাশের নিচে থাকতে হচ্ছে।” এসময় তার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয়রা বলেন, গত এক সপ্তাহে ভাঙনে আরও অর্ধশতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে গেছে। অনেক পরিবার অন্যের জমিতে চালা তুলে কোনো রকমে দিন কাটাচ্ছে। চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয় এবং আশপাশের ২০-২৫টি বাড়ি ভাঙনের হুমকির মুখে আছে।
চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বলেন, “ভূমিহীনদের জন্য যদি বাড়ির ব্যবস্থা করা যেত, তাহলে অন্তত এ পরিবারগুলো আশ্রয় পেত। নদীভাঙতে ভাঙতে তারা নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। এখন অন্যের জমিতে চালা তুলে কোনো রকমে বেঁচে আছে।”
চকরাজাপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার শহিদুল ইসলাম জানান, ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক পরিবার ভাঙন কবলিত এলাকা ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় চলে গেছে। তিনি বলেন, “অসহায় পরিবারগুলোর পাশে থাকার চেষ্টা করছি। তবে সরকারিভাবে সহায়তা এখন খুব জরুরি।”
ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বাবলু দেওয়ানও একই দাবি জানান। তার মতে, প্রশাসনকে বিষয়টি অবগত করা হলেও এখনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাম্মী আক্তার বলেন, “পদ্মা নদী ভাঙনের বিষয়ে আমরা অবগত আছি। ইতোমধ্যে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ