ফেসবুকে আইভীর কারামুক্তির খবর, আইনজীবী বললেন গুজব

হত্যাসহ ৬টি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কয়েক মাস ধরে কারাগারে আছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। গতকাল রোববার একাধিক ফেসবুক পেজ, গ্রুপ ও ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে তাঁর মুক্ত হওয়ার গুজব ছড়ায়। পরে এটিকে ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন আইভীর আইনজীবী, কারা কর্তৃপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষ।
কারামুক্তির বিষয়টিকে গুজব দাবি করে আইভীর আইনজীবী আওলাদ হোসেন বলেন, ‘আইভীর কোনো মামলায় জামিন হয়নি। তাঁর জামিন আবেদন উচ্চ আদালতে শুনানির অপেক্ষায় আছে। তিনি এখনো কারাগারে বন্দী।’
একই তথ্য জানান কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক কাওয়ালিন নাহার। সোমবার সকালে তিনি বলেন, ‘সেলিনা হায়াৎ আইভী কারাগারেই আছেন। তাঁর মুক্তির বিষয়ে কোনো আদেশ আমরা পাইনি।’
চলতি বছরের ৯ মে ভোরে নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগের নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন আইভী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ঘটনায় দায়ের হওয়া চারটি হত্যা ও দুটি হত্যাচেষ্টা মামলাসহ মোট ছয় মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এসব মামলায় নিম্ন আদালত থেকে জামিন পাননি তিনি। বিষয়টি নিশ্চিত করে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, আইভীর বিরুদ্ধে মোট ছয়টি মামলা রয়েছে। তাঁর মুক্তি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেটি প্রচার হচ্ছে—তা একেবারেই গুজব।
২০০৩-২০১১ সাল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ছিলেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। পরে নবগঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তিনটি নির্বাচনে টানা জয়ী হন তিনি। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চারটি হত্যা মামলাসহ মোট ছয়টি মামলায় গ্রেপ্তার হন আইভী।
আইভির বিরুদ্ধে যত মামলা
মিনারুল হত্যা মামলা: ২০ জুলাই আদমজী এলাকায় গুলিতে পোশাকশ্রমিক মিনারুল ইসলাম নিহত হন। এ ঘটনা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন তাঁর ভাই নাজমুল হক। সেখানে আইভীকে ১২ নম্বর আসামি করা হয়েছে। মামলায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, শামীম ওসমানসহ ১৩২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
তুহিন হত্যা মামলা: একই দিনে সিদ্ধিরগঞ্জে রিকশাচালক তুহিন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তাঁর স্ত্রী আলেয়া আক্তারের দায়ের করা মামলায় আইভীসহ ৯৯ জনের নাম উল্লেখ করা আছে। আরও ৩০০ ব্যক্তিকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে।
রাকিব হত্যা মামলা: ৫ আগস্ট শিমরাইলে রাজমিস্ত্রি রাকিব গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। তাঁর বাবা বাদী হয়ে সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও সাবেক মেয়র আইভীসহ ১০১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন।
সজল মিয়া হত্যা মামলা: আন্দোলনের সময় সিদ্ধিরগঞ্জে শ্রমিক সজল মিয়া গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহতের ঘটনায় করা মামলায় আইভী ৬ নম্বর আসামি। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শামীম ওসমানসহ ৬২ জন। অন্যদিকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি আছেন ১৫০ জন।
নাদিম হত্যাচেষ্টা মামলা: একই দিন বিকেলে একই এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলিতে আহত হন হকার নাদিম। তাঁর বাবা দুলাল হোসেন বাদী হয়ে আইভীসহ ৬৯ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও ৩০০ জনকে আসামি করছেন।
সাঈদ হত্যাচেষ্টা মামলা: ফতুল্লা মডেল থানায় দায়ের হওয়া সাঈদ হত্যাচেষ্টার মামলায় আইভীসহ ৮৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১২০ জনকে আসামি করা হয়।
ভিওডি বাংলা/ এমপি