রাজশাহীর গুদামে গুদামে পচা চালের পাহাড়


রাজশাহীর গুদামে গুদামে পচা চালের পাহাড় রয়েছে। দুর্গাপুরের পর বাগমারার সরকারি খাদ্য গুদাম গুলোতে বিপুল পরিমাণ খাওয়ার অনুপযোগী পচা চাল পাওয়া গেছে।
অভিযোগ পেয়ে বাগমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুল ইসলাম বৃহস্পতিবার ভবানীগঞ্জ সরকারি খাদ্যগুদামের চারটি সংরক্ষণাগারে অভিযান চালিয়ে সেগুলো সিলগালা করেছেন। এসব চালের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। খাওয়ার অনুপযোগী চাল গুদামে ঢুকানোর অভিযোগে গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাচ্চু মিয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
আগের দিকে ২৬ আগস্ট দুর্গাপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিনা শারমিন ১৩২ বস্তা পচা চাল জব্দ করেছিলেন। তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। বাগমারার গুদামে পচা চাল থাকার খবর পেয়ে চারটি গুদাম সিলগালা করা হয়েছে।
বাগমারার ১৬ ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভায় আগস্টের শেষে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় চাল বিতরণ শুরু হয়। উপকারভোগীরা অভিযোগ করেন, তাদের দেওয়া অধিকাংশ চালই পচা, পোকা খাওয়া এবং খাওয়ার অনুপযোগী। অভিযোগের ভিত্তিতে ইউএনও মাহবুবুল ইসলাম অভিযান চালান।
তিনি বলেন, “প্রতিটি গুদামে এমন নিম্নমানের চাল পাওয়া গেছে যা মানুষের খাওয়ার উপযোগী নয়। এসব চাল পশুখাদ্য বা মাছের ফিড হিসেবে ব্যবহার হতে পারে। রাসায়নিক পরীক্ষা ছাড়াই বোঝা যায়, চাল কতটা নিম্নমানের।”
তিনি আরও বলেন, গুদামে চাল ঢুকানোর সঙ্গে শুধু ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাই নয়, খাদ্য বিভাগের অন্যান্য কর্মকর্তারাও জড়িত থাকতে পারেন। গুদামে চাল গ্রহণের আগে খাদ্য পরিদর্শকের মাধ্যমে মান যাচাইয়ের নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি।
খাদ্য নিয়ন্ত্রক নবী নওয়াজেস আমিন বলেন, “গুদামে কখন কী পরিমাণ চাল গ্রহণ হচ্ছে, তা কেবল গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাই জানেন। চালের প্রকৃত মান পরীক্ষা ছাড়া নিশ্চিতভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়।”
তিনি জানান, রাজশাহী জেলায় একজন মাত্র রসায়নবিদ থাকায় সব গুদামের চাল পরীক্ষা করা প্রায় অসম্ভব।
বরখাস্ত হওয়া গুদাম কর্মকর্তা বাচ্চু মিয়া বলেন, “প্রতিটি ট্রাকের সব চাল পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। কেবল একটি বস্তা থেকে নমুনা পরীক্ষা করেই চাল গ্রহণ করা হয়।” তবে তিনি বিপুল পরিমাণ পচা চাল ঢুকানোর দায় কার ওপর বর্তায় তা বলতে রাজি হননি।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ওমর ফারুক জানান, গুদামে কীভাবে পচা চাল ঢুকল তা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি গুদামে মজুত চালের মান যাচাই চলছে। যেসব গুদামে পচা চাল পাওয়া গেছে সেগুলো সরিয়ে ভালো মানের চাল সরবরাহের কাজ শুরু হয়েছে।
রাজশাহী জেলায় খাদ্য বিভাগের ১২টি সরকারি গুদাম থেকে প্রতি মাসে ৯৮ হাজার ১৬৬ জন উপকারভোগীর মধ্যে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণ করা হয়। এ ঘটনায় জেলায় খাদ্য সহায়তা প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও গুদামে মজুত চালের মান নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে। বিভিন্ন প্রকল্পের উপকারভোগীরা দ্রুত সব গুদামের চালের মান পরীক্ষা করার দাবি জানিয়েছেন।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ