নুরাল পাগলার দরবারে হামলা: ৮ আসামির স্বীকারোক্তি


রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের আলোচিত নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার (৮৫) দরবারে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, লাশ পোড়ানো, হত্যা এবং পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া দুটি মামলায় এখন পর্যন্ত ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে ৮ জন আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে দুইজন মসজিদের ইমাম ও স্থানীয় ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই নেতা রয়েছেন। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো. শরীফ আল রাজীব।
এর আগে নিহত ভক্ত রাসেল মোল্লার বাবা আজাদ মোল্লা বাদী হয়ে হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লাশ পোড়ানো, চুরি, জখম ও ক্ষতিসাধনের অভিযোগে মামলা করেন। এছাড়া পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা ও সম্পত্তি ধ্বংসের অভিযোগে আরও একটি মামলা দায়ের হয়। দু’টি মামলায়ই আসামি করা হয়েছিল কয়েক হাজার অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ আল রাজীব জানান, হামলা ও লাশ পোড়ানোর ঘটনায় ৮ জন এবং পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ১৬ জনসহ মোট ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮ জন আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, “হামলা ও লাশ উত্তোলনের সঙ্গে জড়িতদের ভিডিও ফুটেজ ও প্রমাণের ভিত্তিতে শনাক্ত করা হচ্ছে। কেউ মামলার তদন্তে প্রভাব বিস্তার করলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।”
জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার বলেন, গোয়ালন্দে নুরাল পাগলের দরবারে হামলা একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। আমরা প্রশাসন থেকে সবাই আন্তরিক ছিলাম বিষয়টি সমাধানের জন্য। এর জন্য উভয় পক্ষকেই ডেকেছিলাম। আমরা কয়েক দফা মিটিংও করেছিলাম। আলেম সমাজের যে তিনটি দাবি ছিল তার মধ্যে দুইটি দাবি তারা মেনেও নিয়েছিল। শুধু কবর ওপর থেকে নিচে নামানোর জন্য তারা কিছু সময় চেয়েছিল। এই সময়টা আলেম সমাজই তাদের দিয়েছিল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের কোনো গ্যাপ ছিল না। তিনটি দাবির মধ্যে দুইটি দাবি পূরণ হওয়ার পরও আলেম সমাজ বিক্ষোভ করতে চেয়েছিল। আমরা আলেম সমাজকে ডেকেছিলিম বিক্ষোভ না করার জন্য। তারা আমাদেরকে ইনশিওর করেছিলেন- কোন ঝামেলা হবে না, শান্তিপূর্ণভাবে তারা বিক্ষোভ করবেন। কিন্তু পরে যা হওয়ার তাতো হয়ে গেছে। এ বিষয়ে আমাদের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি ছিল না। তারপরও প্রশাসনকে দায় দেওয়া হয়। এটা খুবই দুঃখজনক।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদেরকে ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে ইতোমধ্যেই পুলিশ ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
উল্লেখ্য, গত ২৩ আগস্ট বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান নুরাল পাগলা। ওই দিন রাতে মাটি থেকে ১২ ফুঁট উঁচুতে গোয়ালন্দ দরবার শরিফে তার মরদেহ দাফন করেন ভক্ত ও পরিবারের সদস্যরা। এরপর থেকেই উত্তেজনা চলছিল স্থানীয় আলেমসহ তৌহিদি জনতার মধ্যে। দরবারের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে করা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা ইমাম কমিটি, খেলাফতে মজলিস, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। পরে ৫ সেপ্টেম্বর জুমার নামাজের পরপরই নুরাল পাগলার দরবারে হামলা ও আগুন দেওয়া হয়। ওই সময় রাসেল মোল্লা নামে এক ভক্তকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে নুরাল পাগলার মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পদ্মার মোড়ে নিয় গিয়ে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
ভিওডি বাংলা/জা