দুই মাসের ব্যবধানে বেরোবি’র ৩ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা


রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) ক্যাম্পাসজুড়ে নেমে এসেছে শোক ও অস্বস্তির ছায়া। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়ায় হতবাক বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার।
সর্বশেষ শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) দিনাজপুরের পার্বতীপুরে নিজ বাড়িতে মৃত্যু বরণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জিনিয়া মনি। মেধাবী এই শিক্ষার্থী এবারের ডিনস অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত ছিলেন। তবে তার মৃত্যুর সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি।
এর আগে গত ১৪ আগস্ট ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জিতু রায় পঞ্চগড়ের নিজ বাড়ির সামনে গলায় ফাঁস দেন। প্রেমঘটিত কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে তার রেখে যাওয়া তিন পৃষ্ঠার সুইসাইড নোট থেকে জানা যায়।
এরও আগে গত ১০ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সরদারপাড়ার একটি লেডিস হোস্টেল থেকে ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ১৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌসি টুম্পার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রেমঘটিত কারণেই তিনি জীবন শেষ করেছেন বলে সহপাঠীরা জানান।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী মোছাঃ মীম ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপের বিষয়ে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা অনেক শিক্ষার্থীই বিভিন্ন পরিবারিক পটভূমি থেকে আসে। অনেকে নিজের খরচ মেটাতে টিউশনি করে, আবার কেউ কেউ পরিবারের আর্থিক সহায়তায় সাহায্য করেন। সেমিস্টার ফি, মেসভাড়া ও দৈনন্দিন খরচ মিলিয়ে অনেকের জন্য এটি সহ্য করার বাইরে চলে যায়।
শুধু আর্থিক চাপ নয়, একাডেমিক ফলাফলে নিরাশা, ব্যক্তিগত সমস্যা বা প্রেম সম্পর্কিত জটিলতা সব মিলিয়ে অনেক শিক্ষার্থী ডিপ্রেশনে ভুগছেন। এসব মানসিক চাপে নিজেকে দমিয়ে রাখা সহজ নয়। তবে আত্মহত্যা কখনো কোনো সমাধান হতে পারে না। আমাদের উচিত এই চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবিলা করার পথ খুঁজে নেওয়া এবং একে অপরকে সমর্থন করা।”
এমন ধারাবাহিক ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে আতঙ্ক ও শোক বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে মানসিক সংকট তৈরি হচ্ছে, তা নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সচেষ্ট রয়েছে বলে একাধিক গণমাধ্যমকে জানান ছাত্র উপদেষ্টা ইলিয়াছ প্রামাণিক। তিনি বলেন, “আমরা বিষয়টি গভীরভাবে উপলব্ধি করছি। ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের উদ্যোগে প্রতি বুধবার একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আশা করি, ডিপ্রেশনে ভোগা শিক্ষার্থীরা যদি নিয়মিত ওই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়, তবে তাদের মানসিক চাপ ও সমস্যার সমাধানে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।”
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ