পুরোনো দুর্গ ফিরে পেতে মরিয়া বিএনপি


কুষ্টিয়া দৌলতপুর ১ টি উপজেলা নিয়ে গঠিত জেলার বৃহত্তম কুষ্টিয়া -১ আসন। এবার এ আসনে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী থাকায় ভোটের সমীকরণ উল্টে যেতে পারে। তবে জামায়াত ও এনসিপির অবস্থা ভালো না হলেও তারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রস্তুত।
দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের সঙ্গে বিভিন্ন উপায়ে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন তারা। ব্যানার-পোস্টার সাঁটিয়ে চাইছেন দোয়া। এছাড়াও ভোটের তৎপরতার পাশাপাশি নেতাদের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মাঝে বেড়েছে গ্রুপিং।
ইতোমধ্যেই এ আসনে নির্বাচনি হাওয়া বইতে শুরু করেছে। পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকানগুলো এখন সরগরম। নেতারা ইউনিয়ন পর্যায়ে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে বাজারে কিংবা গ্রামে পথসভাসহ শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন।
কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলা ১৪ টি ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা হলো ৩ লাখ ৯৯ হাজার ৮৪৩ জন। পুরুষ ২ লাখ ৭ শ' ৬১ জন, মহিলা ভোটার - ১ লক্ষ ৯৯ হাজার ৮১জন, হিজরা তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার -১ জন ।
কুষ্টিয়া-১ আসনে ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগ জয়ী হলেও ১৯৭৯ সালে বিজয়ী হয় বিএনপি। এর পর ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টি আসনটি দখল করে। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে আবার বিএনপি জয়ী হলেও ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত টানা আওয়ামী লীগের দখলেই ছিল আসনটি । বর্তমানে সরকার পতনের পর বিএনপি একাধিক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
কুষ্টিয়া জেলার চারটি আসনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আসন হিসেবে ধরা হয় কুষ্টিয়া-১, দৌলতপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে ভোটার ৩ লাখ ৯৯ হাজার ৮৪৩ জন।
প্রার্থীরা পৃথক পৃথকভাবে কর্মীসভা,সমাবেশসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদান করছেন। হাট-বাজার রেলস্টেশন, চায়ের দোকানসহ জনবহুল এলাকাগুলোতে ভোটারদের মুখে নির্বাচনের সম্ভাব্য এসব প্রার্থীদের নাম নিয়ে চলছে খোশ গল্প।
ইতিমধ্যেই বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মাঠে নেমে প্রচারণা জোরদার করেছে। সভা-সমাবেশ, গণসংযোগে ব্যস্ত নেতাকর্মীরা।
এবার এই আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন:-
সাবেক কুষ্টিয়া -১ আসনের এমপি ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি রেজা আহম্মেদ বাচ্চু মোল্লা, কৃষকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সম্পাদক, মোঃ আখতারুজ্জামান সজল, জাতীয়তাবাদী যুবদল ঢাকা মহানগর (উত্তর) আহ্বায়ক শরিফ উদ্দিন জুয়েল, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসনাইন নাহিয়ান সজীব। এ আসনে জামায়াতের মনোনয়ন পেয়েছেন মাওলানা বেলাল উদ্দিন, যিনি ইতিমধ্যেই মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (চরমোনাই) থেকে মুফতি আমিনুল ইসলাম এবং এনসিপির নেত্রী নুসরাত তাবাসসুম প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সাবেক সাংসদ বাচ্চু মোল্লা বলেন, “এ আসনে জয়-পরাজয় নির্ভর করবে মনোনয়ন নির্বাচনের উপর। দীর্ঘ ১৭ টি বছর আমি এই অঞ্চলে বিএনপিকে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছি। এমন কোন বিএনপি নেতা কর্মী বলতে পারবেনা যে আমি তাদের দুঃসময় পাশে ছিলাম না। নেতাকর্মীদের ভালোবাসায় আমি আজ নেতা হতে পেরেছি। আগামী সংসদ নির্বাচনে দলবল নির্বিশেষে সবাই আমাকে সাপোর্ট করবে এমন আশা আমি করি।
আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে কৃষকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সম্পাদক মোঃ আখতারুজ্জামান সজল বলেন, আপনারা জানেন, আমি মাঠের মানুষ, সংগ্রামের মানুষ।বিগত ১৭ বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ আমলে যখন বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা মিথ্যা মামলা, হামলা আর নির্যাতনে জর্জরিত ছিলেন—আমি তখন কখনো পিছিয়ে যাইনি। আমি তাদের মামলায় জামিনের ব্যবস্থা করেছি, পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি আর্থিকভাবে, আবার অনেকের জন্য নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছি।
কারণ আমি বিশ্বাস করি—রাজনীতি মানে শুধু ক্ষমতায় যাওয়া নয়, রাজনীতি মানে মানুষের দুঃখ-কষ্ট ভাগ করে নেওয়া। আজ আমি সেই আস্থা, সেই সম্পর্ক নিয়েই আপনাদের সামনে দাঁড়িয়েছি। আমি আপনাদের প্রতিনিধি হতে চাই, যেন দৌলতপুরের প্রতিটি মানুষের কষ্ট-সমস্যা আমার কষ্ট হয়, আমার সমস্যা হয়।দৌলতপুরকে মাদকমুক্ত ও সুশৃঙ্খল সমাজে রূপান্তরিত করা।বেকার যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন। প্রতিটি ইউনিয়নে মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা ও অবকাঠামো উন্নয়ন।কৃষকের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে আধুনিক কৃষি সহায়তা কেন্দ্র। নারী-শিশুর অধিকার রক্ষায় আইনি সহায়তা ও সুরক্ষা কর্মসূচি।
প্রতিটি ইউনিয়নে স্বাস্থ্যসেবা জোরদার ও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা। রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন।কুষ্টিয়ার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিকাশে সাহিত্য-সংস্কৃতি প্ল্যাটফর্ম।শ্রমজীবী ও প্রান্তিক মানুষের জীবনমান উন্নয়ন। দৌলতপুরকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে গড়ে তোলা।
আমি দুঃসময়ে নেতা-কর্মীদের পাশে থেকেছি, মামলা, জামিনের জন্য সাধ্যমত আর্থিক সহায়তা করেছি, আশ্রয় দিয়ে। আমি দৌলতপুরের মাটি ও মানুষের সন্তান। আপনাদের সুখ-দুঃখই আমার মূল শক্তি।আমি বিএনপি’র বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছি, অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। আমার লক্ষ্য শুধুই—আপনাদের কল্যাণ, দৌলতপুরের উন্নয়ন, আর দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার। “দুঃসময়ের বন্ধু, আগামীর ভরসা—সজল ভাই”“গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনব, দৌলতপুরকে এগিয়ে নেব” “মাদকমুক্ত সমাজ চাই, শান্তির দৌলতপুর চাই।
বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থরা জানান, নির্বাচনে জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নেমে পড়া এখনই উপযুক্ত সময়। তারা জনগণের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে দলীয় এজেন্ডা তুলে ধরছেন। এছাড়াও, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক সহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে বিএনপির সর্বোচ্চ নিতি নির্ধারনী পর্যায় থেকে যাকে মনোনয়ন প্রদান করা হবে, তার সাথে কাজ করতে সকল নেতাকর্মী অঙ্গীকারাবদ্ধ বলে জানাগেছে। সরাসরি জনগণের ভোটে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন কারাই দলগুলোর মূল লক্ষ।
তবে আওয়ামী লীগ নেতা বা তাদের নেতাকর্মীদের কোন তৎপরতা দেখা যায়নি।
ভিওডি বাংলা/ মোশারফ হোসেন/ এমএইচ