জেলায় ১২৪৭ মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন
টাঙ্গাইলে প্রতীমায় রঙ-তুলির সাজ-সজ্জায় ব্যস্ত শিল্পীরা


দরজায় কড়া নাড়ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। এ উপলক্ষে টাঙ্গাইল জেলার ১২টি উপজেলায় ১ হাজার ২৪৭টি পূজা মণ্ডপে চলছে সাজসজ্জার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। প্রতীমার অবয়ব তৈরি শেষ, এখন চলছে রঙ-তুলির আঁচড়ে সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলার কাজ।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, আগামী ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবীপক্ষের সূচনা হবে। ২৭ সেপ্টেম্বর দেবীর বোধন ও মহাপঞ্চমী, ২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠী, ২৯ সেপ্টেম্বর সপ্তমী, ৩০ সেপ্টেম্বর অষ্টমী, ১ অক্টোবর নবমী এবং ২ অক্টোবর বিসর্জনের মধ্য দিয়ে উৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটবে। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, এ বছর দুর্গাদেবী গজে বা হাতির পিঠে চড়ে মর্ত্যে আগমন করবেন। আর দোলা বা পালকিতে চড়ে কৈলাশে ফিরে যাবেন।
টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, এবার জেলায় মোট এক হাজার ২৪৭টি পূজা মন্ডপে অনুষ্ঠিত হবে শারদীয় দুর্গাউৎসব। এর মধ্যে মধুপুর উপজেলায় ৫৯টি, ধনবাড়ীতে ৩৫টি, ঘাটাইলে ৭০টি, কালিহাতীতে ১৬৩টি, গোপালপুরে ৫৫টি, ভূঞাপুরে ৩৭টি, টাঙ্গাইল সদরে ২১৪টি, নাগরপুরে ১২৯টি, দেলদুয়ারে ১২৩টি, মির্জাপুরে ২৫৭টি, বাসাইলে ৭০টি এবং সখীপুর উপজেলায় ৩৫টি পূজা মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
জেলা পূজা উদযাপন ফ্রন্ট সূত্রে জানা যায়, জেলায় ভাবগাম্ভীর্য ও শান্তিপূর্ণভাবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব সম্পন্নের লক্ষ্যে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। দুর্গোৎসবে শান্তি-শৃঙ্খলা ও উৎসবের আমেজ বজায় রাখতে সেনাবাহিনীও মাঠে রয়েছে। একই সঙ্গে পূজা চলাকালীন গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সজাগ রয়েছে।
জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে দুর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে মতবিনিময়, পূজা উদ্যাপন কমিটির নেতাদের সঙ্গে একের পর এক সভা করছেন জেলা ও স্ব স্ব উপজেলা প্রশাসন। এর পাশাপাশি বিএনপি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রেখে মণ্ডপগুলোর খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা শহরের শ্রী শ্রী কালিবাড়ী, থানাপাড়া, সাবালিয়া, রেস্ট্রিপাড়া, কলেজপাড়া, প্যারাডাইস পাড়ার পূজা মণ্ডপে প্রতীমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ। এখন চলছে প্রতীমায় রঙ-তুলির আঁচড়ে সৌন্দর্য্য ফুঁটিয়ে তোলার কাজ। প্রতীমা তৈরি ও সাজ-সজ্জার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতীমা তৈরির কারিগর ও শিল্পীরা। দম ফেলার ফুরসত নেই তাদের। ইতোমধ্যে তোরণ নির্মাণ ও আলোকসজ্জার কাজ করা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ডেকোরেটগুলো ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
প্রতীমা তৈরির শিল্পী ও কারিগরদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যথাসময়ে প্রতীমা তৈরির কাজ শেষ হবে। নির্ধারিত সময়ের আগেই দুর্গা দেবীর আরাধনার জন্য মণ্ডপগুলো প্রস্তুত করা হবে।
প্রতীমা তৈরির কারিগররা জানায়, প্রতিবছরই তারা অধীর আগ্রহে দেবী দুর্গার প্রতীমা তৈরির কাজের অপেক্ষায় থাকেন। এর মধ্যেই দেবী দুর্গার প্রতীমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ। এখন চলছে রঙ-তুলির আঁচড়ে সৌন্দর্য্য ফুঁটিয়ে তোলার কাজ।
তারা আরও জানায়, কারিগররা একেক জনে একাধিক প্রতীমা তৈরি করছেন। ছোট-বড় বিভিন্ন সাইজের প্রতীমা বিক্রি করে তারা লক্ষাধিক টাকা আয় করে থাকেন। লাভ-লোকসান যাই হোক বংশগত পেশার প্রতি সম্মান রেখে তারা আনন্দের সাথে প্রতীমা তৈরি করেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতীমা তৈরির সব কাজ শেষ করে কমিটির কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে জানান তারা।
জেলা পূজা উদযাপন ফ্রণ্টের সভাপতি অমল ব্যানার্জি জানান, শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনের লক্ষ্যে তাদের সব প্রস্তুতি রয়েছে। আসন্ন দুর্গাপূজা নিয়ে জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশের সাথে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। প্রশাসনের পাশাপাশি প্রতিটি পূজা মন্ডপে তাদের নিজস্ব সেচ্ছাসেবক কর্মী দায়িত্ব পালন করবে।
তিনি আরও জানান, গত বছরের চেয়ে এ বছর টাঙ্গাইলে পূজা মন্ডপের সংখ্যা বেড়েছে। সরকারে পক্ষ থেকে প্রতিটি মন্ডপের জন্য ৫০০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া টাঙ্গাইল পৌরসভার পক্ষ থেকে এর আওতাধীন ১১০টি মণ্ডপের জন্য পাঁচ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে এ উৎসবে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পূজাকে ঘিরে জেলায় গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। এবার জেলার পুজা মন্ডপ গুলোতে ৯৫০ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। আনসার সদস্যদের পাশাপাশি পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীও দায়িত্ব পালন করবে।
এছাড়াও মোবাইল টিম ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করবে।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক শরীফা হক জানান, টাঙ্গাইলে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দুর্গোৎসব উদযাপনের লক্ষ্যে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পূজা উদযাপন ফ্রণ্টের সদস্য ও সনাতন ধর্মের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে জেলা পর্যায়ে প্রস্তুতি সভা সভা করা হয়েছে। পূজা উদযাপনের সমস্যাগুলোর সমাধানে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ বিভাগ নিরাপত্তার জন্য কাজ করছে। পূজায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রতিটি মণ্ডপে আনসার বাহিনী ও গ্রাম পুলিশের পাশাপাশি পুলিশ সহ আইনশৃঙ্খরা বাহিনী কাজ করবে।
সবার সহযোগিতা ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে টাঙ্গাইলে এবারও উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন জেলা প্রশাসন ও পূজা উদযাপন ফ্রন্ট।
ভিওডি বাংলা-জাহাঙ্গীর আলম/জা