• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১
টপ নিউজ
হোয়াটসঅ্যাপের নতুন চমক ‘শিডিউল কল’ ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের পূজা প্রস্তুতি পরিদর্শন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের দায়িত্ব রাষ্ট্র নেবে: আমিনুল হক ডাকসুর নেত্রীদের ‘গৃহদাসী’ মন্তব্য করে চাকরি হারালেন ব্র্যাক গবেষক ক্যান্সার আক্রান্ত হেফাজত নেতা মাওলানা ফারুকী’র পাশে তারেক রহমান ১৩ দিনে ১৬ হাজার কোটি টাকা রেমিট্যান্স এরদোগানের পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল আঙ্কারা মোহাম্মদপুর মহিলা কলেজের নবীনবরন অনুষ্ঠানে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে তারেক রহমানের বাণী মানুষের পশুত্ব বর্জনই হোক সবার অঙ্গীকার : তারেক রহমান

জুলাই সনদ ও জোটের তৎপরতা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক    ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৩৬ এ.এম.
ছবি: সংগৃহীত

আগামীতে সরকার গঠনের প্রত্যাশা নিয়ে ইসলামী ও সমমনা বেশকিছু দলের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে ভোট করারও টার্গেট রয়েছে জামায়াতের। এরই অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগ, দফায় দফায় মিটিং করছেন দলটির নেতারা।

ঘনিয়ে আসছে জাতীয় নির্বাচনের সময়। আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগেই অনুষ্ঠিত হবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এরই মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপও ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন ঠেকাতে কয়েকটি দল আগে থেকেই তৎপরতা ছিল এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে নির্বাচনের অবাস্তব পদ্ধতি পিআর নিয়ে এ লক্ষ্যে এগোচ্ছে, সরকার বারবার জোর দিয়ে বলছে, ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন, এটা ঠেকানোর কোনো শক্তি নেই। এরকম দোটানা অবস্থার মধ্যে দুটি পথ ধরেই এগোচ্ছে বিএনপি ও সমমমনা দলগুলোর বিপরীতে অবস্থান নেয়া অন্যান্য দল। একদিকে পিআর পদ্ধতি এবং জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে নির্বাচনসহ পাঁচ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে নেমেছে জামায়াতসহ সাতটি দল। অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচন ভোটের মাঠে অবস্থান তৈরি করতে ছোট রাজনৈতিক দলগুলো তৎপরতা চালাচ্ছে, যদিও এখনই তারা আনুষ্ঠানিকভাবে জোটের বিষয়ে কিছু বলছে না।

এদিকে আগামীতে সরকার গঠনের প্রত্যাশা নিয়ে ইসলামী ও সমমনা বেশকিছু দলের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে ভোট করারও টার্গেট রয়েছে জামায়াতের। এরই অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগ, দফায় দফায় মিটিং করছেন দলটির নেতারা।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর হাতিরপুলের একটি রেস্তরাঁয় কিছু দলের বৈঠক হয়। গণতন্ত্র মঞ্চের ছয়টি দল- নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), গণসংহতি আন্দোলন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও ভাসানী জনশক্তি পার্টির নেতারা এবং মঞ্চের বাইরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) এবং গণঅধিকার পরিষদের নেতারা এ বৈঠকে অংশ নেন।

এজেন্ডা হিসেবে বৈঠকে জুলাই সনদ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সংস্কার নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের মতবিরোধের বিষয়টিও এতে আলোচিত হয়। এই মতপার্থক্য দূর করতে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বৈঠকে। তবে সূত্র বলছে, এই বৈঠকের নেপথ্য লক্ষ্য জোট গঠন। বৈঠকে নতুন জোট গঠন নিয়েও আলোচনা হয় বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। তবে এই জোট গঠনের প্রক্রিয়া প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।

দলগুলোর একটি সূত্র জানিয়েছে, সামনে জোট নিয়ে আরো বৈঠক হবে। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া এবং সব ইস্যুতে ঐকমত্য হলেই জোটের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। তখনই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে। সে কারণে এনিয়ে এখনই স্পষ্ট করে কিছু বলছে না কোনো দলই।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবারের বৈঠকে ৯টি দলের মধ্যে সংসদ নির্বাচনের দিন জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। এই ইস্যুতে বিএনপি, জামায়াত এবং বামদলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করবে তারা।

সূত্র বলছে, সংস্কার প্রশ্নে বিএনপি এবং জামায়াতের দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্যে রয়েছে। তাদের মিত্র দল এবং জোটের অবস্থানও একই। নির্বাচন সামনে রেখে বড় দুটি দলের মধ্যে এই মতানৈক্য কাটিয়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরাতেই এই উদ্যোগ নিয়েছে তারা। তবে এর আড়ালের লক্ষ্য জোট গঠন। প্রাথমিক প্রক্রিয়া হিসেবেই এমন নানা ইস্যু ধরে জোটাকারে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে দলগুলো।

বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে বৈঠকে অংশ নেয়া দলের সূত্রেই। বৈঠকে নতুন জোট গঠন নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে বলে দুটি দলের নেতা জানিয়েছেন। জোট গঠনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে ৯ দলের বাইরে আরও কিছু দল এতে যোগ দিতে পারে বলেও জানিয়েছেন ওই নেতারা।

তবে জোট নিয়ে আরোচনার কথা অস্বীকার করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান। তিনি বলেন, “এখানে কোনো জোট করার জন্য বসা হয়নি। আমরা এরই মধ্যে দেখেছি জুলাই সনদ ও নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে বিএনপি এবং জামায়াত বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছে। কীভাবে এই দূরত্ব কমিয়ে আনা যায়, তার পথ ঠিক করতেই ৯টি দল একত্রে বসা হয়েছিল। একটি কমিটিও করা হয়েছে। যারা বিএনপি এবং জামায়াতের সঙ্গে আলাদাভাবে বসবে। দল দুটিকে ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য বলা হবে।”

বৈঠকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ও সমঝোতার জন্য তিন নেতাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা হলেন- গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু এবং গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান।

অন্যদিকে সাংবিধানিক ও আইনগত বিষয়ে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন ও এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সানী আবদুল হককে। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বিএনপি ও জামায়াতসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ করবেন। তারপরে এবিষয়ে আলোচনা হবে।

বৈঠকের বিষয়ে ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেছেন, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য গণতন্ত্র মঞ্চসহ ৯টি দল উদ্যোগ নিয়েছি। জুলাই সনদকে কীভাবে আইনি ভিত্তি দেয়া যায়, এটা নিয়ে আমরা চেষ্টা করছি।”

তারা বিএনপি, জাসদ, বামদল এবং গণফোরামসহ আরও বিভিন্ন দলের সঙ্গে এবিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানান তিনি।

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জুও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে সবাই একমত হওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান। তিনি বলেন, “বিএনপি এবং জামায়াতসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও যাতে একই জায়গায় একমত হতে পারে, সেটা নিয়ে আমরা কথা বলেছি। আর আমরা বলেছি, গণভোট আগেও হতে পারে এবং নির্বাচনের দিনও হতে পারে। গণভোট হলেই হয়।”

বৈঠকের বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক জাভেদ রাসিন বলেন, “গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে আলোচনায় জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কীভাবে দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনা যায়, সে বিষয়গুলো নিয়ে মূলত আলোচনা হয়েছে।”

এদিকে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ সাতটি ইসলামপন্থি দল গত বৃহস্পতিবার অভিন্ন ইস্যুতে যুগপৎ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে। তারা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির পাশাপাশি পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি করেছে। অন্যদিকে বিএনপি পিআর পদ্ধতির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

তবে ইসলামি দলগুলো যুগপৎ আন্দোলনে নামলেও হেফাজতে ইসলাম নিরাপদ দূরত্বে রয়েছে। যদিও হেফাজতে ইসলাম নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল না। তবে ভোটের হিসাবে তাদের বড় ভূমিকা রয়েছে। হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর তাত্ত্বিকতার দিক থেকে গোড়া থেকেই বিরোধ। হেফাজতে ইসলাম মওদুদীবাদী ইসলামকে স্বীকৃতি দিতে চায় না। তাই জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে তাদের আদর্শগত বিরোধ রয়েছে। তাই এই দলটি আগামী নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জোটে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, “নির্বাচনি জোট বা সমঝোতার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও জামায়াতসহ ইসলামি ও সমমনা সাতটি দল বেশ আশাবাদী। তাদের মধ্যে রয়েছে- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, জাগপা ও নেজামে ইসলাম পার্টি। এর বাইরে ইসলামী ঐক্যজোট, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ আরো কিছু দলকে নিয়ে নির্বাচনি সমঝোতার প্রত্যাশা রয়েছে জামায়াত-সংশ্লিষ্টদের।”

এখন পর্যন্ত নির্বাচনি জোটের রূপরেখা বা সমঝোতার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা না হলেও জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও সে অনুযায়ী আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে জামায়াতের সঙ্গে একমত হয়েছে অন্তত ৯টি দল।

আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, এবি পার্টি, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, আপ বাংলাদেশসহ মধ্যপন্থি কয়েকটি দল নিয়ে আলাদা একটি মোর্চা করার আভাস পাওয়া গেছে। এ মোর্চাই পরবর্তী সময়ে কোনো একটি বড় দল বা জোটের সঙ্গে নির্বাচনি সমঝোতায় যেতে পারে।

ভোটের আগে জোটের তৎপরতা নতুন নয় বলে মনে করে বিশ্লেষকরা। এবিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. আল মাসুদ হাসানুজ্জামান বলেন, “আগেও ভিন্ন আদর্শের দলকে জোট করতে দেখা গেছে। এটি শুধু আমাদের দেশে না, সারা বিশ্বেই রয়েছে। তফসিল ঘোষণার আগেই ভোটের জোট দৃশ্যমান হবে।”

ভিওডি বাংলা/ এম/ এমপি

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ইসির চ্যালেঞ্জ সুষ্ঠু ভোট
ইসির চ্যালেঞ্জ সুষ্ঠু ভোট
বৈষম্য আদৌ কতটা দূর হলো?
বৈষম্য আদৌ কতটা দূর হলো?
হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর চাপ
হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর চাপ