ভারতে ৪ বছর ধরে আটক ১৫০ জন বাংলাদেশি

ভারতের তামিল নাড়ু আতুর ক্যাম্পের প্রায় ৪ বছর ধরে আটক ১৫০ জন বাংলাদেশি। তবে ৪ বছর অতিবাহিত হলেও তাদের ছাড়াতে বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারের। আটককৃতরা বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত বর্ডার দিয়ে কাজের সন্ধ্যানে ভারতে অনুপ্রবেশ করেন। যদিও তাদের কন্ঠে এখন দেশে ফেরার আকুতি। আটককৃতদের মধ্যে ১৫০ বাংলাদেশি; ১০০ জন পুরুষ, ৩০ জন মহিলা ও ২০ জন শিশু।
আটককৃতরা হলেন:-
মো. আব্দুল মান্নান, পিতা. বাহার উদ্দিন, গ্রাম: হাতিয়া নোয়াখালী, থানা: জাহাজমারা, জেলা: নোয়াখালী, মো. কাসেম পাঠান, পিতা. গনি মিয়া, গ্রাম: বসতপুর সেকেন্ড কলোনী থানা: শার্শা, জেলা: যশোর, মো. নাজমুল হোসেন, জেলা: সাতক্ষীরা, মো. রিয়াজ তালুকদার, পিতা. সেলিম তালুকদার, জেলা: খুনলা, মো. রমজান আলী, পিতা. আঃ মালেক, থানা: বন্দর, জেলা: নারায়ণগঞ্জ এবং আরোও অনেকে।
নারায়ণগঞ্জের রমজান আলী ভিওডি বাংলাকে বলেন, আমি চার বছর আগে জীবিকার তাগিদে দালালের মাধ্যমে বেনাপোল হয়ে ত্রিপুরা বর্ডার দিয়ে ভারতে প্রবেশ করি। তারপর আমি চেন্নাই একটি হোটেলে ৯ মাস কাজ করি; পরবর্তীতে আমার পাসপোটের মেয়াদ শেষ হলে চেন্নাই পুলিশ আটক করে। আটক করার পর চেন্নাই থানায় ১ দিন রাখার পর চেন্নাই সেন্টাল জেলখানায় ৮ মাস আটক করে রাখে। এই ৮ মাসের মধ্যে আমাকে দুইবার জজ কোর্টে নিয়ে যায়। জজ কোর্ট থেকে আমাকে চেন্নাই তিরচি স্পেশাল ক্যাম্পে ২ বছর ৭ মাস আটক করে রাখে। বর্তমানে চেন্নাই তিরচি স্পেশাল ক্যাম্প থেকে ছেলামের পাশে তামিল নাড়ু আতুর ক্যাম্পে ১ বছর ধরে আটক আছি।
রমজানের মা ভিওডি বাংলাকে বলেন, আমার সন্তান চার বছর আগে কাজের জন্য ভারতে যায়। তারপরে ১ মাসের মধ্যে তার সাথে কোন যোগাযোগ করতে পারি নাই। হঠাৎ এক দিন ফোনে খবর পাই আমার ছেলেকে চেন্নাই পুলিশ আটক করেছে। রমজানের স্ত্রীসহ তিন মেয়ে আছে। তিনি কান্না জরিত কণ্ঠে বলেন, আমি আমার সন্তানকে ফেরত যাই।
রমজানের স্ত্রী ভিওডি বাংলাকে বলেন, আমার স্বামী বৈধ পাসপোর্ট নিয়ে ভারতে যান। ভিসার মেয়াদ শেষ হলে তাকে আটক করে। ৪ বছর হল আমার স্বামী দেশে না থাকায় আমরা খুব কষ্টে আছি। তিন মেয়ে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছি।
সাতক্ষীরার নাজমুল হোসেন ভিওডি বাংলা বলেন, সাতক্ষীরা ভ্রমরা বর্ডার দিয়ে আমি ভারতে প্রবেশ করি। তারপর বশিরহাট হয়ে হাওরা রেলষ্টেশন দিয়ে চেন্নাই যাই। চেন্নাই আসার তিন দিন পর আমি রাজমিস্ত্রীর কাজ পাই। আমি ২ মাস ২৫ দিন রাজমিস্ত্রীর কাজ করার পর আবার বাংলাদেশে আসি। বাংলাদেশে ১০ দিন থাকার পর আবার কলকাতা হয়ে চেন্নাই আসি। ২০২৪ সালে ফেব্রুয়ারির ২৯ তারিখে আমার ভিসা মেয়াদ শেষ হয়। তারপর আমাকে মে মাসের ১৬ তারিখে রাত দশটা সময় আটক করে থানায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে আমাকে চিটিং কেস দিয়ে চেন্নাই সেন্টাল জেলে পাঠানো হয়। চেন্নাই সেন্টাল জেলে ৮ মাস ৯ দিন রাখার পরে চেন্নাই তিরচি স্পেশাল ক্যাম্পে পাঠায়। এখান থেকে ১৪ দিন পরপর আমাকে শুধু ডে দিয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত আমি ক্যাম্পে অবস্থান করছি।
নাজমুলের বড় ভাই ভিওডি বাংলাকে বলেন, নাজমুল বৈধ ভাবে ভারতে যায়। ভারতে গিয়ে ৩ মাস পরে আটক হয়। আমরা গরীব মানুষ কার কাছে যাবো কি করবো কিছু বুঝতে পারি না। ভাইয়ের চিন্তায় আমার বাবা অস্থু হয়ে পরেছে।
যশোরের কাশেম পাঠান বলেন, আমি ১৫ বছর আগে বেনাপোল বর্ডার দিয়ে ভারতে প্রবেশ করি। তারপর আমি হাওরা দিয়ে মুব্বাই আসি। যেখানা ১০ বছর ধরে রাজমিস্ত্রী কাজ করেছি। সেখানে আমার ২০০৮ সালে ভোটার হই। এরপর আমি এক ভারতীয় এজেন্টের মাধ্যমে আরমানিয়া যাওয়ার জন্য ভিসা কাজ সম্পন্ন করি। ভারত থেকে আরমানিয়া যাওয়ার পথে চেন্নাই এয়ারপোর্টে আটক করে। সেখান থেকে আমাকে আটক করে চেন্নাই জেলখানায় নিয়ে যায়। তারপর কোর্টের মাধ্যমে তামিল নাড়ু আতুর ক্যাম্পে নিয়ে আসে।
খুলনার রিয়াজ তালুকদার ভিওডি বাংলা বলেন, আমি ২০১৯ সালে চান মিয়ার সঙ্গে হুমরা বর্ডার মাধ্যমে চরাই পথে ভারতে প্রবেশ করি। তারপর হয়ে বেঙ্গুল যাই। সেখানে ৪ বছর বিবিএমপির কাজ করি। সেখান চেন্নাই বদলি করে দেয়। সেখানে আমাদের দালাল চেন্নাই পুলিশের হাতে আটক হয়। তাকে রিমান্ডে দিলে দালাল আমাদের ধরিয়ে দেয়।
আটককৃতরা ও তাদের পরিবারের দাবি প্রধান উপদেষ্টা এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টার আকুল আবেদন যেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়।
ভিওডি বাংলা/ হেলাল উদ্দিন/ এমপি