মুস্তাকের হত্যাকান্ডে ২০ দিন পার হলেও মোটিভ উদঘাটন করতে পারেনি প্রশাসন


জমিয়তের কেন্দ্রীয় সদস্য ও সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সহ-সভাপতি শহীদ মাও. মুশতাক আহমদ গাজিনগরীর হত্যাকান্ডে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার সকালে শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরী মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ সুনামগঞ্জ জেলা শাখা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা তৈয়্যিবুর রহমান চৌধুরী।
তিনি জানান, সুনামগঞ্জ জেলা জমিয়তের সহ-সভাপতি শহীদ মাও. মুশতাক আহমদ গাজিনগরী (রহ.)-এর হত্যাকাণ্ডের ২০ দিন অতিক্রান্ত হলেও এখনো পর্যন্ত হত্যার মোটিভ উদঘাটন করতে পারেনি প্রশাসন। এজহারভুক্ত একমাত্র আসামিকে রিমান্ডে নিলেও কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য বের করতে না পারা আমাদের জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক।
তিনি জানান, বর্তমান প্রযুক্তির যুগে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করা মোটেই কঠিন হওয়ার কথা নয়। অথচ এখনো প্রকৃত খুনিরা শনাক্ত বা গ্রেফতার না হওয়ায় জনমনে নানা প্রশ্ন ও সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিস্থিতি আমাদের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করেছে।
তিনি জানান, ২ সেপ্টেম্বর রাত ১১:৩০ মিনিট থেকে শহীদ মাও. মুশতাক আহমদ নিখোঁজ হন। ৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সকাল সাতটায় তাঁর মরদেহ শরিফপুর পুরান সুরমা নদীতে ভেসে ওঠে। এতে পুরো সুনামগঞ্জ জেলায় শোক ও ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এরপর থেকেই বিক্ষুব্ধ জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিক্ষোভ, সমাবেশ ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করতে থাকে। আমরা জেলা জমিয়তের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি আন্দোলনকে শান্তিপূর্ণ রাখতে এবং প্রশাসনের আশ্বাসের প্রতি আস্থা রেখে জনগণকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত মামলার কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যায়নি। এজহারভুক্ত আসামি এম. আব্দুল হাফিজ পাঠানকে গ্রেফতার করা হলেও রিমান্ড শেষে তাঁকে জেল হাজতে প্রেরণ ছাড়া আর কোনো অগ্রগতি চোখে পড়েনি। হত্যার মূল কারণ, নেপথ্যের হোতা বা পরিকল্পনাকারী কেউই শনাক্ত হয়নি।
তিনি জানান, প্রশাসনের তদন্তে কেন ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে? এজহারভুক্ত আসামিকে পুনরায় রিমান্ডে নিয়ে প্রকৃত তথ্য বের করার উদ্যোগ কেন নেওয়া হচ্ছে না, ভিকটিমের নিখোঁজ হওয়ার দিন থেকে সিসিটিভি ফুটেজ, কললিস্ট, প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ আলামত থাকলেও তদন্তে তা কেন যথাযথভাবে ব্যবহার হচ্ছে না? আলোচিত সিএনজির মালিক, চালক ও আব্দুল হাফিজের সাথে থাকা অজ্ঞাত দুই ব্যক্তিকে এখনো সনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়নি কেন? এতসব প্রমাণ ও সূত্র থাকার পরও প্রকৃত খুনিরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়া কি রহস্যজনক নয়?
তিনি জানান, তদন্তে ধীরগতি এবং কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় জনগণ প্রশাসনের প্রতি আস্থাহীনতার জন্ম দিচ্ছে। এ ধরনের অবস্থান আইনের শাসনের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই-ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা না হলে জনগণ কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে। এতে যদি কোন সমস্যা সৃষ্টি হয় তাহলে এর দায়বার প্রশাসন কেই নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা ৬ দফা দাবি জানিয়ে বলেন, ১. এ মামলার তদন্ত স্থানীয় পুলিশের পাশপাশী সিআইডি বা পিবিআই-এর মতো বিশেষায়িত সংস্থার নিকট হস্তান্তর করতে হবে। ২. মামলার আসামি এম. আব্দুল হাফিজ পাঠানকে পুনরায় রিমান্ডে এনে নেপথ্যের তথ্য উদঘাটন করতে হবে। ৩. হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে জড়িত সকল ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। ৪. ময়নাতদন্ত রিপোর্ট অবিলম্বে প্রকাশ করতে হবে এবং তদন্তের প্রতিটি ধাপ স্বচ্ছভাবে জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে হবে। ৫. দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচারকার্য সম্পন্ন করে খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ৬. প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত তদন্তের আপডেটসহ বিস্তারিত সংবাদ সম্মেলন করে জাতির সামনে উপস্থাপন করতে হবে।
আগামী ২২ সেপ্টেম্বর সোমবার: দিরাই উপজেলা শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার: সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় বিক্ষোভ, ২৪ সেপ্টেম্বর বুধবার: শান্তিগঞ্জ উপজেলায় বিক্ষোভ। এসব কর্মসূচি পালনের মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে, সুনামগঞ্জের শীর্ষ আলেমদের নেতৃত্বে বৃহত্তর গণআন্দোলন, প্রয়োজনে হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এর সম্পূর্ণ দায়ভার প্রশাসনকেই বহন করতে হবে।
আমরা সরকারের কাছে জোরালোভাবে বলতে চাই-শহীদ মাওলানা মুশতাক আহমদ হত্যার ন্যায়বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না।
সুনামগঞ্জ জেলা জমিয়তের সিনিয়র সহসভাপতি মাওলানা আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সহসভাপতি শায়খ মাওলানা আব্দুল বছীর, এতে আরো উপস্থিত ছিলেন শহীদ মাওলানা মুশতাক আহমদের চাচাতো ভাই জনাব নেজামুল ইসলাম, জনাব জিয়া উদ্দীন, সুনামগঞ্জ-৪ আসনে জমিয়ত মনোনীত প্রার্থী মাওলানা হাফিজ মুখলিছুর রহমান চৌধুরী, জেলা জমিয়তের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রুকন উদ্দীন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা রফিক আহমদ উলাশনগরী, জমিয়তনেতা মুফতি বদরুল আলম, কাঠইর উইপি চেয়ারম্যান, মুফতি শামছুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুর রকিব, মাওলানা নুর হোসাইন, মাওলানা রমজান হোসাইন, মাওলানা নাজমুল ইসলাম জাহিদ, যুবনেতা মাওলানা হাফিজ ত্বোহা হোসাইন প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে শহীদ মাও. মুশতাক আহমদ গাজিনগরীর রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ