ইবিতে দু’দিন ব্যাপী কেন্দ্রীয় নবীনবরণ সম্পন্ন


বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের দু’দিন ব্যাপী ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়েছে।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) নবীনবরণের দ্বিতীয় দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের 'থিওলজি অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদ', 'ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ', ও 'কলা অনুষদ' মোট তিনটি অনুষদের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ'র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশী চিন্তাবিদ ও লেখক, পণ্ডিত ও গণবুদ্ধিজীবী এবং বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।
এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো.. এমতাজ হোসেন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. সেলিনা নাসরিন, এবং রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মনজুরুল হক। অনুষ্ঠানে অনুষদভুক্ত নবীন শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভাগসমূহের সভাপতি ও শিক্ষকবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন নবীনবরণ উদযাপ কমিটির দ্বিতীয় দিনের আহ্বায়ক আহ্বায়ক ও থিওলজি অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আ. ব. ম. সিদ্দিকুর রহমান আশরাফী।
এসময় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম তার বক্তব্যে বলেন, “২৪-এর গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী প্রেক্ষাপটে আমরা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে মূলধারায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। ইসলামী ও সাধারণ শিক্ষার সমন্বয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় ভবিষ্যতে দেশকে নেতৃত্ব দেবে—এমন বিশ্বাস আমাদের রয়েছে। এটি একটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়, তাই সেই লক্ষ্যেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।”
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী বলেন, “একজন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে সরকারের যে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়, সেটি দেশের মেহনতি ও খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের করের টাকা। তাই বড় হয়ে তাদের জন্য কাজ করা তোমাদের দায়িত্ব।”
তিনি আরও বলেন,“২১ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তোমাদের একমাত্র কাজ হলো নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তোলা।"
অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, "আরবিতে একটি অনুবাদ আছে "there are no strangers there are only friends we have not met." পৃথিবীরতে অচেনা বলে কেউ নেই, সকলেই বন্ধু তবে অনেকের সাথেই এ পর্যন্ত দেখা হয়নি।"
তার বক্তব্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে বাংলা, আরবি এবং ইংরেজি ভাষায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম লেখা দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, " সব বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম শুধু ইংরেজিতেই লেখা হয়ে থাকে । আমি সারাদেশে কে বলতে চাই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এ উদাহরণ আদর্শ হওয়া উচিত৷ সারাদেশকে একটি অনুসরণ করা উচিত।"
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা আজ চরম সীমাবদ্ধতায় আবদ্ধ, এবং এর মুক্তির উপায় নিহিত রয়েছে জ্ঞানের ব্যাপক প্রসার ও মুক্ত প্রবাহ নিশ্চিতকরণে।
তিনি প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস ও অ্যারিস্টটলসহ বিভিন্ন শাসনতান্ত্রিক চিন্তাধারার বিশদ আলোচনা করেন এবং শাসনব্যবস্থার শক্তি ও দুর্বলতা বিশ্লেষণ করেন।
বিশেষভাবে তিনি ব্যাখ্যা করেন, শাসনব্যবস্থার পতন বা অবক্ষয়ের মূল কারণ হলো শাসকশ্রেণীর আত্মভ্রম—যখন তারা মনে করে তাদের প্রতিটি কর্মকাণ্ডই নিঃসন্দেহে সঠিক এবং অন্য মত ও চর্চা সবই ভুল।
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্তদান ও আত্মত্যাগ সেখানে স্বীকৃত হয়নি, যার অনিবার্য পরিণতি শুভকর হয়নি। ২৪ জুলাই পরবর্তী প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে তিনি ইঙ্গিত দেন, যারা দেশত্যাগ করেছে বা আত্মগোপনে রয়েছে, তারা যখন প্রকাশ্যে ফিরে আসবে, তখন নতুন ও আরও তীব্র অসহিষ্ণুতার রূপ নিতে পারে।
বক্তৃতার শেষাংশে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ প্রকৃত জ্ঞানচর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, অর্জিত জ্ঞানকে শুধু তাত্ত্বিক বা আনুষ্ঠানিক জ্ঞান হিসেবে নয়, বরং আত্মজীবন, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের কল্যাণে ব্যবহার করাই শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় হলো শিক্ষা ও জ্ঞানের সর্বোচ্চ স্তর। এখানে প্রবেশ মানে মানবজীবনের এক বিশেষ গৌরব ও দায়িত্বের সূচনা। শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাননি, বরং জ্ঞানের উচ্চতর পরিসরে প্রবেশ করছেন, যা তাদেরকে বিশ্বপরিসরে জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ করে দেয়।”
তিনি আরও বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষণ-পদ্ধতির বিশেষত্ব হলো এখানে কোনো শিক্ষক পাঠ্যবই ডিক্টেট করেন না, বরং শিক্ষার্থীদের নিজে পড়তে, অন্বেষণ করতে ও জ্ঞান আহরণে উদ্বুদ্ধ করেন। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা স্বনির্ভর অধ্যয়ন ও জ্ঞানার্জনের গুরুত্ব উপলব্ধি করে।"
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ