চর আষাড়িয়াদহে স্কুল মাঠের মাটি কেটে হচ্ছে ‘শিশুপার্ক’!


শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠ একটি বিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্র। সেখানে তারা যেমন খেলাধুলা ও বিনোদনের সুযোগ পায়, তেমনি শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্যও মাঠ অপরিহার্য। কিন্তু রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ এলাকায় দুটি বিদ্যালয়ের সেই মাঠই এখন হুমকির মুখে। স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে মাঠের মাটি কেটে নেওয়ায় তৈরি হয়েছে গভীর গর্ত, যা বৃষ্টির পানিতে এখন ছোট পুকুরে পরিণত হয়েছে। ঝুঁকিতে পড়েছে বিদ্যালয়ের সরকারি ভবনও।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রায় তিন সপ্তাহ আগে চর আষাড়িয়াদহ কানাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কানাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সংলগ্ন খেলার মাঠ থেকে বিপুল পরিমাণ মাটি তোলা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরেজমিনে উপস্থিত থেকে মাটি কেটে নেওয়ার নির্দেশ দেন। পরে সেই মাটি ফেলে একটি খাল ভরাট করা হয়। এতে এখন বিদ্যালয়ের মাঠের মাঝখানে বিশালাকার গর্ত হয়েছে। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে তা গভীর পুকুরে রূপ নিয়েছে। চারপাশের মাটি ধসে পড়ছে। এতে বিদ্যালয়ের দুটি সরকারি ভবন ঝুঁকির মুখে পড়েছে। শুধু তাই নয়, শিশু-কিশোররা প্রতিদিন মাঠে আসে খেলতে—তাদের জন্যও তৈরি হয়েছে প্রাণঘাতী ঝুঁকি।
স্থানীয় বাসিন্দা আঙ্গুর হোসেন বলেন, “কোনো আলোচনা ছাড়াই মাঠে হঠাৎ করে স্কুলমাঠে এত বড় গর্ত খোঁড়া হলো কেন, মানুষ কিছুই জানে না। দুই স্কুলের মাঠে এই খনন কাজ অত্যন্ত বিপজ্জনক। কেননা, শিশুদের যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমরা চাই, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য সচিব সামিম জানান, “ইতোমধ্যে দুই শিশু গভীর সেই গর্তে পড়ে মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হতে যাচ্ছিল। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে, কিন্তু ভবিষ্যতে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে। তাছাড়া বিদ্যালয়ের দুটি ভবনও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।”
চর আষাড়িয়াদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফতাব উদ্দিন বলেন, “আমি ইউএনও স্যারকে অনুরোধ করেছিলাম অন্য জায়গা থেকে মাটি আনতে। কিন্তু তিনি বললেন, পরে ভরাট করে দেওয়া হবে। আমি আপত্তি করলেও তিনি বলেন, ‘আমি ইউএনও বলছি, আপনি কি আমার ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না’”
কানাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজগর আলীও একই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, “প্রথমে বলেছিলেন কম গভীর হবে, কিন্তু পরে দেখি অনেক গভীর করে মাটি কেটে ফেলা হয়েছে। এতে আমাদের প্রতিষ্ঠানও ঝুঁকিতে।”
শিশুদের জন্য ‘শিশুপার্ক’ তৈরি করতে গিয়ে যদি সেই শিশুদের জীবনই ঝুঁকির মুখে ফেলে দেওয়া হয়, তবে সেই উন্নয়ন কতটা প্রয়োজনীয় এমন প্রশ্ন রেখে রওশন আরা নামে স্থানীয় এক নারী বলেন, “আমরা চাই পার্ক হোক, কিন্তু বাচ্চাদের নিরাপত্তা আগে। মাঠে গর্ত রেখে পার্ক করলে দুর্ঘটনা হবেই।”
তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয়ের মাঠ শিশুদের বিনোদন, খেলাধুলা ও শারীরিক বিকাশের একমাত্র অবলম্বন। সেই মাঠই যদি প্রশাসনের অদূরদর্শী উদ্যোগে ধ্বংসের পথে যায়, তবে তা শিশুদের ভবিষ্যতের জন্য অশনিসঙ্কেত।
জানতে চাইলে চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম ভোলা জানান, “শিশুদের জন্য মাঠেই একটি পার্ক তৈরি করা হবে। বন্যার কারণে অন্য কোথাও মাটি পাওয়া যায়নি। তাই মাঠ থেকেই নেওয়া হয়েছে। পরে আবার ভরাট করা হবে।”
স্কুল মাঠ থেকে মাটি তোলার সুযোগ আছে কি না প্রশ্নে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বলেন, ‘হ্যাঁ আছে তো। ইউএনও স্যার নিজে উপস্থিত থেকে এ কাজ করিয়েছেন। মাটি তোলার সময় ইউএনও স্যার দাঁড়িয়ে ছিল।’
এ বিষয়ে জানতে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফয়সাল আহমেদকে মুঠোফোনে কল দিলে প্রথমে পুরো বিষয়টি অজানা বলে দাবি করেন। জেনে জানাচ্ছি বলে কল কেটে দেন। কিছুক্ষণ পর কল দিয়ে তিনি আবারও পুরো বিষয়টি জানতে চেয়ে বলেন, ‘ওটা স্পটে গিয়ে বলতে পারবো কি অবস্থা।’
এরপর ইউএনও আবারও কল দিয়ে বলেন, আমরা চর আষাড়িয়াদহে একটা শিশু মিনি পার্ক করবো। আমরা স্কুলের সামনে একটা নিচু জায়গা নির্ধারণ করছি। বর্ষার জন্য যার কাজ করা যাচ্ছে না, তাই একটু মাটি দিয়ে যেন খেলনাগুলো বসাতে পারি। আমরা যখন প্রকল্প নিয়ে যাবো তখন সেখানে ভরাট করে দিব, এরকম পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু চেয়ারম্যান সাহেব মনে হয় গভীর বেশি করে ফেলছে। এটা আমরা চেয়ারম্যানকে বলেছি ব্যবস্থা নিতে, উনি ব্যবস্থা নিবেন।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ