ইবি শিক্ষার্থীদের বার্ষিক জরিপে যত নাম্বার পেলেন উপাচার্য


ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহর দায়িত্বগ্রহণের একবছর পূর্তি উপলক্ষ্যে তার বাৎসরিক কর্যক্রম নিয়ে জরিপ চালিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এতে ১০ এর মধ্যে ২.৪৫ নাম্বার পেয়ে অকৃতকার্য হয়েছেন বলে দাবি 'ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার আন্দোলন' প্লাটফর্মের।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর দেড়টা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডায়না চত্বরে 'ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার আন্দোলন' কর্তৃক পরিচালিত এ জরিপের ফল প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলন করেন তারা। গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩১২ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ অনলাইন ও অফলাইনে এ জরিপ পরিচালনা করে সংগঠনটি।
জরিপ অনুযায়ী প্রতি শিক্ষার্থী সর্বমোট ১০ নাম্বারে চার ক্যাটাগরিতে উপাচার্যকে তার গত একবছরের কাজের উপর ভিত্তি করে মূল্যায়ন করেন। এতে ১-৩ নম্বর খারাপ, ৪-৬ মোটামুটি, ৭-৮ ভালো এবং ৯-১০ অতি ভালো হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এতে উপাচার্য সর্বমোট ৩২১৬ নাম্বার পান যা গড় করে ২.৪৫ হয়। এটি রেটিং ক্যাটাগরি অনুযায়ী ১-৩ অর্থাৎ খারাপ ক্যাটাগরিতে পরে।
শিক্ষার্থীরা গত ১ বছর উপাচার্যের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ১০টি বিষয় মূল্যায়ন করেছে। এগুলো হলো-
১. সেশনজট নিরসনে নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা তদারকি, সেশনজট ও পর্যাপ্ত শিক্ষক সংকট নিরসনে উপাচার্য মহোদয়ের ভূমিকা কতটা কার্যকর হয়েছে?
২. সাজিদ আব্দুল্লাহ হত্যার বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে উপাচার্য মহোদয় কতটা সফল হয়েছে?
৩. ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা ও পরিবেশবান্ধব করতে উপাচার্যের পদক্ষেপ কতটা সন্তোষজনক ছিল?
৪. ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ইকসু) গঠনে উপাচার্যের ভূমিকা কতটুকু?
৫. ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আধুনিকীকরণ তথা অনলাইন ব্যাংকিং, ল্যাব, সনদ উত্তোলন ও ওয়েবসাইটের আধুনিকায়নে উপাচার্য মহোদয়ের ভূমিকা কতটা উন্নয়নমূলক ছিল?
৬. আবাসিক হলের খাবারের মান বৃদ্ধি ও মানসম্মত পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিতে উপাচার্যের ভূমিকা নিয়ে আপনি কতটা সন্তুষ্ট?
৭. ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে বাজেট বৃদ্ধি ও তা সমৃদ্ধ করার জন্য উপাচার্য মহোদয়ের ভূমিকা নিয়ে আপনি কতটা সন্তুষ্ট?
৮. ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের সেবার মান, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে উপাচার্যের ভূমিকা কতটা সন্তোষজনক?
৯. বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা, বিভাগগুলোতে ছাত্রী কমনরুম নিশ্চিত ও নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতে উপাচার্য মহোদয়ের ভূমিকা নিয়ে আপনি কতটা সন্তুষ্ট?
১০. পরিবহন সংকট নিরসনে পর্যাপ্ত বাস বরাদ্দ, ফিটনেসবিহীন বাস অপসারণ, দক্ষ চালক নিয়োগ ও পরিবহন ব্যবস্থাপনা নিয়ে উপাচার্যের ভূমিকা নিয়ে আপনি কতটা সন্তুষ্ট?
জরিপকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের জরিপে দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী উপাচার্য সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। এমনকি প্রশাসনকে ইঙ্গিত করে অনেকেই বলেছেন 'অথর্ব প্রশাসন'। অনেকেই বলেছেন প্রশাসনকে দ্রুতই দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়া উচিত।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, আমরা মনে করি গত একবছরে উপাচার্য মহোদয় যে কাজ করেছেন তাতে তিনি অকৃতকার্য। গণমাধ্যমো উঠে এসেছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক প্রয়োজন ১০৮০ জন। কিন্তু আছে মাত্র ৪০০ এর কিছু অধিক শিক্ষক। গণমাধ্যমে আমরা দেখেছি ১০৮০ জন শিক্ষার্থীকে স্মার্ট কার্ড দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেটা স্ক্যান করলে অন্য আরেকজন শিক্ষার্থীর তথ্য চলে আসে। ২০২৩ সালের ২২ নভেম্বর আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং সিস্টেম চালু করা হলেও বাস্তবিক অর্থে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী সে অনলাইন ব্যাংকিং সিস্টেমে টাকা প্রদান করতে পারে নাই। গণমাধ্যম মারফত আমরা দেখেছি অনলাইন ব্যাংকিং নিয়ে ব্যাংকের পরিচালক ও আইসিটি সেলের বক্তব্যে সামঞ্জস্য নেই। অর্থাৎ তারা গোজামিলের আশ্রয় নিতে চাচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট এড়িয়ে যরতে চাচ্ছে।
তারা আরও বলেন, উপাচার্য মহোদয়কে আমরা বলতে চায়, সে যদি দায়িত্ব পালন করতে না পারে তাহলে তার দায়িত্ব পালন করার প্রয়োজন নাই। আমরা মনে করি স্যারের যথেষ্ট লজ্জা সরম আছে। যদি থাকে তাহলে আমরা আশা করবো আমাদের দাবিগুলো অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে তিনি মেনে নিবেন। এবং শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নিবেন।
জানা যায়, জরিপে ইবির ৮৭৬ জন আবাসিক ও ৪৩৬ জন অনাবাসিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। এতে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ৬ জন, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ৮০ জন, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ১৮১ জন, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ৩৪৫ জন, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ২৯৩ জন, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ২৩৪ জন এবং ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ১৩৩ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
প্রসঙ্গত, জুলাই বিপ্লবের পর গতবছরের ২৩ সেপ্টেম্বর ইবির উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ও ইবির আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। গত ৯ সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস সংস্কারের উদ্দেশ্যে ১৫ দফা দাবি পেশ করেন এবং ইবি সংস্কার আন্দোলন নামে একটি প্লাটফর্মের আত্মপ্রকাশ করেন। সে প্লাটফর্ম থেকেই এ জরিপটি পরিচালনা করা হয়। সংবাদ সম্মেলন শেষে আগামীকাল প্রশাসনকে সতর্কতামূক হলুদ কার্ড দেখাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে তারা।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ