ইরানে ৯ মাসে ১ হাজারের বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর


ইরানে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে অন্তত এক হাজার মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। মঙ্গলবার নরওয়ে-ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর) এই তথ্য জানিয়েছে|
সংস্থাটি ইরানে মাত্র ৯ মাসে এক হাজার মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। একই সঙ্গে ফাঁসি কার্যকরের ঘটনাকে দেশটির কারাগারে চালানো ‘‘গণহত্যার অভিযান’’ হিসাবে অভিহিত করেছে।
আইএইচআর বলেছে, ইরানে কেবল গত সপ্তাহেই অন্তত ৬৪ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। অর্থাৎ দেশটিতে প্রতিদিন গড়ে ৯ জনেরও বেশি মানুষকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে।
চলতি বছরের আরও তিন মাসের বেশি সময় বাকি থাকলেও দেশটিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যা ইতোমধ্যে আইএইচআরের রেকর্ডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। সংস্থাটি ২০০৮ সাল থেকে ইরানে ফাঁসি কার্যকরের রেকর্ড সংরক্ষণ করে আসছে। এর আগে, ইরানে ২০২৪ সালে সর্বোচ্চ ৯৭৫ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল।
১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লব এবং ইরান-ইরাক যুদ্ধের পর ১৯৮০’র দশক ও ১৯৯০’র দশকের শুরুর দিকে ইরানে বিপুলসংখ্যক মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তবে মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, দেশটিতে গত তিন দশকে এতো ব্যাপক সংখ্যক মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা নজিরবিহীন।
দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির নেতৃত্বাধীন ইরানের বর্তমান সরকার গত জুনে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ১২ দিনের যুদ্ধ নিয়ে চাপের মুখে রয়েছে। এর মাঝেই দেশটিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর বৃদ্ধির এই ঘটনা ঘটেছে।
আইএইচআরের পরিচালক মাহমুদ আমিরি-মোগাদ্দাম এক বিবৃতিতে বলেছেন, গত কয়েক মাসে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের কারাগারগুলোতে এক ধরনের গণহত্যা অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলের কার্যকর প্রতিক্রিয়া না থাকায় এই অভিযানের মাত্রা প্রতিদিনই বাড়ছে।
আগামী সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ফাঁকে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে পশ্চিমা বিভিন্ন দেশের নেতাদের সাক্ষাতের সম্ভাবনা রয়েছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ইরানের ওপর পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের পক্ষে ভোট দেওয়ার পর দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি সেখানে আলোচনার মূল বিষয় হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে আমিরি-মোগাদ্দাম বলেছেন, ইরানে চলমান মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল এবং এটিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আলোচ্যসূচির সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে রাখতে হবে।
তিনি বলেন, যেসব দেশ মানবাধিকারের মূলনীতির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ তাদের সঙ্গে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের যেকোনো সংলাপে যদি ইরানের মৃত্যুদণ্ড সঙ্কটকে অন্তর্ভুক্ত না করা হয়, তাহলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
আইএইচআর বলেছে, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের এই সংখ্যা কেবল ‘ন্যূনতম হিসাব’। প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। কারণ দেশটিতে তথ্যের স্বচ্ছতার ঘাটতি এবং সংবাদ প্রচারে বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধ রয়েছে।
আইএইচআর জানিয়েছে, দেশটিতে তথ্যের স্বচ্ছতার অভাবে প্রকৃত সংখ্যাটি আরও বেশি হতে পারে। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন, ইরানের মৃত্যুদণ্ড সংকটকে আলোচ্যসূচির অগ্রাধিকারে রাখা প্রয়োজন।
বর্তমানে ইরানে মৃত্যুদণ্ড মূলত ফাঁসির মাধ্যমে কার্যকর করা হয়। হত্যার পাশাপাশি মাদকপাচার, ধর্ষণ এবং যৌন নির্যাতনের মতো গুরুতর অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনের মতে, চীনের পর ইরান বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকারী দেশ।
ভিওডি বাংলা/জা