বাঘায় দুর্গাপূজাকে ঘিরে বেড়েছে পোষাকের কেনাকাটা


দুর্গাপূজা উপলক্ষে মার্কেট এবং অনলাইনে কেনাকাটা করছেন ক্রেতারা। বছর ঘুরে ফিরে এসেছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। এই উৎসব উপলক্ষ্যে বিপনি-বিতানগুলো থেকে হরেক রকম বাহারী পোশাক কেনা-কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। রাজশাহী ও তার পাশ্ববর্তী উপজেলা গুলোতে এমনটি চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। তবে বিক্রেতাদের দাবি, কেনাকাটা অন্যান্য বছরের মতো জমেনি। ক্রেতা বাড়লেও বিক্রির পরিমাণ কম। এ দিক থেকে জেলার বাঘায় জমে উঠেছে শারদীয় দুর্গোৎসব।
দুর্গা উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিমা তৈরী প্রায় শেষের পথে। এখন চলছে রঙের কাজ। সেই সাথে চলছে, উৎসব মুখর পরিবেশে নতুন পোশাক তৈরী, পুজোর সামগ্রী, অলঙ্কার এবং গৃহ সজ্জার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা। এই সময় সারাদেশর মার্কেট গুলোয় ক্রেতাদের ভিড় বাডছে এবং নতুন কালেকশন বাজারে আসছে। কেনাকাটার মধ্যে থাকে জামাকাপড়, জুতো, সেন্ডেল,ব্যাগ, এবং অন্যান্য ফ্যাশন সামগ্রী। যার বাস্তব চিত্র লক্ষ্য করা গেছে রাজশাহী সহ তার পাশ্ববর্তী উপজেলা গুলোয়।
বাঘা উপজেলা পুজা উৎযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অপুর্ব কুমার সাহা বলেন, সামনে শারদীয় দূর্গাপুজা। সারা দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। পূজার প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে। এ উপজেলায় প্রায় ৫০টির অধিক স্থানে পুজা অনুষ্ঠিত হবে বলে তিনি নিশ্চিত করেন।
পুজাকে কেন্দ্র করে এখন নতুন জামাকাপড় কেনা নিয়ে রয়েছে সবার মাঝেই আলাদা উন্মাদনা। তাই সকাল-বিকেল মার্কেট গুলোতে ভিড় বাড়ছে ক্রেতাদের। মা, বাবা, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে এবং আবাল-বৃদ্ধ বনিতা সবাই নিজের পছন্দের পোশাক খুঁজে নিচ্ছে। ছোটদের মধ্যে উৎসাহ আরও বেশি। নতুন জামা পরবে, পূজা মন্ডপে যাবে, বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ করবে। বাচ্চাদের জন্য বাবা-মা যেন একটু বেশি ব্যস্ত, তাদের পছন্দ মিলিয়ে কেনা কাটা চলছে।
অপরদিকে মেয়েদের মাঝে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, গয়না, সাজগোজের নানা আইটেম কেনা নিয়ে চলছে আলোচনা। ছেলেদের মাঝে পাঞ্জাবি বা ট্রেন্ডি পোশাক কিনে পূজার দিন নিজেকে সাজানোর তোড়জোড়।
এই আনন্দ-উৎসব শুধু জামা কাপড়েই সীমাবদ্ধ নয়, এ যেন পরিবারকে একত্রিত করার এক উপলক্ষ্য। দূর্গাপুজা মানেই শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি এক সামাজিক মিলনমেলা, যেখানে সবাই হাসে, খেলে ও নাচ গানের মধ্য দিয়ে আনন্দ করে।
সরেজমিন রাজশাহীর বাঘা উপজেলা সদরে অবস্থিত কয়েকটি মার্কেট ঘুরে লক্ষ্য করা গেছে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। মনের মতো পোশাক কিনতে দোকানে দোকানে ছুটছেন ক্রেতারা। কয়েক দিন ধরে পোশাকের দোকান গুলোয় ভিড় বেড়েছে। আগামী কয়েকদিন পুরোটা সময় কেনাকাটার এমন ধুম চলবে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। বরাবরের মতো এবারও পূজার বাজারে ছেলেদের পায়জামা-পাঞ্জাবি ও স্যান্ডেল, শার্ট-প্যান্ট; মেয়েদের বিভিন্ন ধরনের থ্রি-পিস, শাড়ি এবং বাচ্চাদের রকমারি পোশাক বিক্রি করা হচ্ছে।
এদিকে পূজার মার্কেটে শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নয়, সার্বজনিন উৎসব ভেবে অন্যান্য ধর্মের ক্রেতাদেরও উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। স্বপ্না পান্ডে নামের একজন ক্রেতা বলেন, পূজার কারণে বাচ্চাদের স্কুল ছুটি হচ্ছে এক সপ্তাহের বেশি। এ কারণে এবার গ্রামে বাবার বাসায় যাবো। তাই কেনাকাটা করছি।
উপজেলার ডাইমন্ড কালেকশনের পরিচালক সুজিত সরকার বলেন, বিক্রি যা হচ্ছে, সেটা কম দামের পোশাক। অন্যান্য বছর দামি পোশাকের চাহিদা বেশি ছিল। এবার মানুষের হাতে টাকা নেই। তার মধ্যে পূজা পড়েছে মাসের শেষে। যে কারণে তুলনা মুলক ভাবে বিক্রি কম হচ্ছে। ছেলেদের পায়জামা-পাঞ্জাবি ৮০০ থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন মানের শার্ট-প্যান্ট পাঁচশ থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর শাড়ী বিক্রী হচ্ছে এক থেকে দশ হাজার টাকার মধ্যে।
জেলার চারঘাট উপজেলার কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দুর্গাপূজার বাজার কেমন হয়, এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে শঙ্কা ছিল। তাই অনেকে ভয়ে ভয়ে পূজার বাজারে নতুন কাপড় এনে পসরা সাজিয়ে রেখে ছিলেন। তবে ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা দুর করে ক্রেতারা ঠিকই দোকানে ভিড় করছেন। পূজার দিন যতই এগিয়ে আসছে, বিক্রি ততোটাই বাড়ছে।
এদিকে দোকান ঘুরে কেনাকাটার পাশা-পাশি অনেকজন অনলাইনেও কেনাকাটা করছেন বলে জানান ক্রেতা-বিক্রেতাগণ। তাদের ভাষ্য মতে, বর্তমানে উপজেলা এবং শহর মুখি অসংখ্য নারী উদ্যোক্তারা তাদের বাহারি পোশক কমদামে অনলাইনে বিক্রি করছেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাদের প্রচার-প্রচারণা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা দেখে অনেকেই মুগ্ধ হচ্ছেন এবং অনলাইনে পোশাক অডার দিচ্ছেন।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ