আবার ইসিতে আবেদন করল এনসিপি


নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধান সংশোধনপূর্বক শাপলা, সাদা শাপলা অথবা লাল শাপলাকে প্রতীক হিসেবে তালিকাভুক্ত করে বরাদ্দের আবেদন জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে গিয়ে আবেদন জমা দেয় দলটি।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের স্বাক্ষর করা আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বিবিধ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে নতুন করে নির্বাচনী প্রতীক তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নেয়। নির্বাচন কমিশনের তালিকায় প্রতীক যুক্ত করতে একটি কমিটি হয়। যারা ১৫০টি প্রতীক অন্তর্ভুক্তির চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত করে। কমিটির একজন সদস্যের সঙ্গে এনসিপির প্রতিনিধি দলের গত ৪ জুন বৈঠক হয়। এতে তিনি চূড়ান্ত তালিকায় ‘শাপলা’ প্রতীক থাকার বিষয়টি আশ্বস্ত করেন। এছাড়া এ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমেও সংবাদ প্রকাশিত হয়।
২২ জুন এনসিপি রাজনৈতিক দল হিসাবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন দাখিল করে এবং দলের অনুকূলে ‘শাপলা’ প্রতীক সংরক্ষণের জন্য আবেদন জানায়। এরপরই সারা দেশের মানুষ শাপলাকে এনসিপির প্রতীক হিসেবে চিনতে শুরু করে।
জুলাই মাসে দেশজুড়ে এনসিপির জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে সাধারণ মানুষ খাল-বিল-জলাশয় থেকে শাপলা এনে কর্মসূচিতে অংশ নেন। এনসিপির প্রতীক হিসেবে শাপলাকে হৃদয় থেকে বরণ করে নেন তারা। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হঠাৎ ৯ জুলাই এনসিপি জানতে পারে, নির্বাচন কমিশন শাপলাকে নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে তফসিলভুক্ত না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ‘শাপলা’ জাতীয় প্রতীক হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা সংবাদ মাধ্যমকে জানায় নির্বাচন কমিশন।
এরপর ১৩ জুলাই এনসিপির একটি প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনারদের সঙ্গে নির্বাচন বৈঠক করে। একটি লিখিত আবেদনের মাধ্যমে শাপলাকে জাতীয় প্রতীক হিসাবে উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনের প্রদত্ত ব্যাখ্যা আইনানুগভাবে সঠিক নয় এবং এই বিষয়ে কমিশনের গৃহীত অবস্থানের আইনি ভিত্তি নেই বলে জানানো হয়।
এছাড়া এনসিপির প্রতিনিধি দল দফায় দফায় কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলেও কোনো ব্যাখ্যা ও অবস্থান স্পষ্ট করেনি। কমিশনের তরফ থেকে শাপলা প্রতীক বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আইনি বাধার বিষয়টি আর উল্লেখ করা হয়নি। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত কোনো আইনি ভিত্তি দ্বারা গঠিত নয় বরং এনসিপির প্রতি বিরূপ মনোভাব ও স্বেচ্ছাচারী দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ বলে প্রতীয়মান হয়।
৩ আগস্ট কমিশনের কাছে চিঠির মাধ্যমে প্রতীক সংরক্ষণে শাপলা, সাদা শাপলা বা লাল শাপলা উল্লেখ করে এবং শাপলা প্রতীক হিসেবে দৃশ্যমান করার ক্ষেত্রে শাপলার ভিন্ন ভিন্ন ভার্সন গ্রহণ করার ক্ষেত্রে এনসিপি সবসময় আলোচনা করতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানায়। একই দিনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সঙ্গে বৈঠকে এনসিপির প্রতিনিধি দল এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনা করে।
তবে ইসির তরফ থেকে শাপলাকে প্রতীক হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে ডিজিএফআইসহ আরো বেশ কিছু সংস্থার লোগোতে শাপলা রয়েছে এবং একারণে আইনগত কোনো বাধা না থাকলেও এনসিপিকে শাপলা বরাদ্দ না দেয়ার কথা জানায়। নির্বাচন কমিশনের এ ধরনের মনোভাব প্রকাশের ফলে তাদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয় এবং স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রীয় কোন বাহিনীর কাছে নতি স্বীকার করছে কি না এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে বিশেষ সুবিধা দেয় এবং তাদের কারো কারো কথায় প্রভাবিত হয়ে পরিচালিত হচ্ছে কি না এমন প্রশ্ন জনমনে তৈরি হয়।
আবেদনে আরও বলা হয়েছে, সম্প্রতি মাঠ পর্যায়ে সব যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হওয়ার পর এবং নিবন্ধনের সব শর্ত প্রতিপালন করার ফলশ্রুতিতে নির্বাচন কমিশন এনসিপিকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু গত ২৩ সেপ্টম্বর কমিশনের সিনিয়র সচিব সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার প্রতীক তালিকায় শাপলাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, তাই এনসিপিকে শাপলা প্রতীক বরাদ্দ দেয়া যাবে না। নির্বাচন কমিশনের এমন স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত এবং উক্তরূপ বক্তব্য অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক। নির্বাচন কমিশনের এহেন একরোখা কার্যকলাপে তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উত্থাপিত হয় এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন ও সব দলের ক্ষেত্রে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির ক্ষেত্রে তাদের আগ্রহ প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
এনসিপি মনে করে, নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালের নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে জাতীয় নাগরিক পার্টির অনুকূলে শাপলা, সাদা শাপলা বা লাল শাপলা থেকে যেকোনো একটি প্রতীক বরাদ্দ করবে এবং এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন নিজের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ইতোপূর্বের স্বেচ্ছাচারী ও একরোখা মনোভাব পরিত্যাগ করবে এবং এমনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে যাতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন ও সকল দলের ক্ষেত্রে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির ক্ষেত্রে তাদের আগ্রহ জনমনে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ