সাতক্ষীরায় ভোমরা নদীপথে আসছে গলদা রেণু ও নফলি


সাতক্ষীরায় ভোমরা নদীপথে আসছে গলদা রেণু ও নফলি। পলিব্যাগের বল নদীতে ভাসিয়ে প্রতিবেশি দেশ ভারত থেকে নিম্নমানের গলদা রেণু দেশে আনছে চোরাকারবারীরা। চোরাই পথে আনা এসব রেণু উচ্চ মূল্যে বিক্রি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। সাতক্ষীরার দেবহাটা, কালিগঞ্জ, শ্যামনগর, কলারোয়া ও ভোমরা সীমান্ত দিয়ে মৌসুমে রেণু পোনা চোরাচালানিতে অন্তত অর্ধ শত কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রেণু পাচারের এ বিপুল এই অর্থ মধ্যস্বত্বভোগী হয়ে অবৈধভাবে হুন্ডির মাধ্যমে পাচার হচ্ছে ভারতে। এতে যেমন ব্যাহত হচ্ছে দেশীয় গলদার উৎপাদন তেমনি রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। সর্বশেষ ২০২১ সালে বিপুল পরিমাণে রেনু আটক হলেও এর পর থেকে এ পর্যন্ত উল্লেখ করার মতো ভারতীয় রেণু আটকের ঘটনা ঘটেনি। তবে নেপথ্য কারণ হিসেবে জানা যায় বল প্রতি দুই হাজার টাকা বখরা দেওয়া হয়। তাই আটক হয়না। প্রতিটি বলে প্রায় ৪০ হাজার গলদার রেণূ থাকে।
গোপন সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্তের লক্ষ্মীদাড়ি ২ নাম্বার, শাঁখরা ও পদ্মশাঁখরা সহ দেবহাটার সীমান্তের বিভিন্ন চোরাপথে প্রতিরাতে কয়েক হাজার বল বাগাদা ও গলদা রেণু পোনা আসে। এসব রেণু পোনা সরাসরি চলে যায় দেবহাটা উপজেলার কুলিয়ার পোনা বাজারে। দেবহাটার কুলিয়া ব্রীজ এর নিচে গড়ে উঠেছে ভারতীয় গলদা ও বাগদা রেণু পোনার বাজার। সেখান থেকে যাত্রীবাহী বাস, প্রাইভেটকার ও এম্বুলেন্স যোগে এসব পোনা চলে যায় খুলনার ডুমুরিয়া, পাইকগাছা, বাগেরহাটের ফকিরহাটের ফলতিতা, রামপালের ফয়লা, মোংলা, মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা।
নির্ভর যোগ্য সূত্র জানিয়েছে, দেবহাটা উপজেলার গলদা রেণু বা বল পাচারের মূল হোতা কথিত এক মেম্বার। সবকিছু ম্যানেজ করার দায়িত্ব তার কাঁধে। যেখানে যা ম্যানেজ করার প্রয়োজন সে তাই করে। দেবহাটার নফলির (বাগদার রেণু) একমাত্র চোরাকারবারী শফিকুল হাজী। তার আবার ভারতের চেন্নাইতে একটি রেণুর নার্সারি আছে। অন্যান্যের মধ্যে পারুলিয়া খেজুরবেড়ী এলাকার ছোট জাকির, পারুলিয়া এলাকার হুন্ডি খোকন, নাংলা নওয়াপাড়ার আজগর, নুরুজ্জামান, মালেক, দেবহাটার হুন্ডি আলাউদ্দিন, মামুন হোসেনসহ বেনামি অনেক চোরাচালানিরা।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ভারত থেকে চোরাই পথে গলদা রেণু আমদানির বিভিন্ন রুটে পাসিং ম্যান (পাচারকারী) হিসেবে দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ করে আসছেন ভোমরা গয়েশপুর এলাকার কবীর হোসেন, আনারুল ইসলাম, দেবহাটা নাংলা এলাকার মালেক, শাখরা কোমরপুর এলাকার একজন জনপ্রতিনিধিসহ আরো কয়েকজন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ীরা জানান, ভারত থেকে চোরাই পথে প্রতিরাতে সহস্রাধিক পলিব্যাগে করে রেণু পোনা নদী দিয়ে ভাসিয়ে নিয়ে আসা হয়। যার মূল্য কমপক্ষে অর্ধকোটি টাকা। তবে রেণুর বলের সাথে মাদকও পাচার হয় সমান ভাবে।
সাতক্ষীরায় জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানান, “ভারত থেকে আসা গলদ ও বাগদার রেণু পোনা সম্পূর্ণ অবৈধ। বিগত আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে ভারতীয় রেণু আমদানি করা যায় কিনা সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তাহলে সরকারও রাজস্ব আয় করতে পারবে চাষীরাও রোগমুক্ত চিংড়ির রেণু সংগ্রহ করতে পারতো। আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ