শেখ হাসিনার দেশে প্রত্যাবর্তন:
দুই দিকের প্রস্তাব ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণ


ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সামনে দুটো প্রস্তাব। এক প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আপনাকে নিয়ে পুনরায় আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করা সম্ভব নয়। কারণ বাংলাদেশের মানুষ আপনার বিপক্ষে চলে গেছে। যেমনটা হয়েছে ভারতের বেলায়। গণহত্যা চালানোর দায় আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না। আপনার বিরুদ্ধে ট্রাইবুন্যালে মামলা চলছে। যা অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফয়সালা হয়ে যাবে। যে মামলায় আপনাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। দালিলিক প্রমাণসহ একাধিক অভিযোগে আপনি দণ্ডপ্রাপ্ত হতে পারেন। এই অবস্থায় আপনার দেশে ফেরা খুব কঠিন। মিরাকল কিছু না ঘটলে অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না।
দ্বিতীয় প্রস্তাবটি পরামর্শ দেয়, শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল উপস্থিতির পরিবর্তে দলের পুনর্গঠনের দায়িত্ব অন্য কাউকে দেওয়া যেতে পারে। ইতিহাসে ১৯৭৫–১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে এমন উদাহরণ দেখা গেছে। বাকশালের পর দলের অস্তিত্ব বিঘ্নিত হলে ১৫ আগস্টের পর প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দলের পুনর্গঠন উৎসাহিত করেন। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ কিছুটা পুনরুজ্জীবিত হয়, যখন শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করছিলেন। তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পুনরায় ক্ষমতায় আসেন।
বর্তমান প্রেক্ষাপট আলাদা। দেশের তরুণ নেতৃত্ব উঠে এসেছে এবং অনেক প্রথাগত নেতা-কর্মী শীর্ষ নেত্রীকে পুনরায় প্রধান হিসাবে গ্রহণে জাতীয় সমর্থন পাবে না বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। ভারত ও পশ্চিমা কূটনৈতিক মহলে দুটি দিকের পরামর্শ চলমান। এক পক্ষ মনে করে, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন আয়োজন করতে হলে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ অপরিহার্য। অপরদিকে কিছু ভারতীয় রাজনীতিবিদ কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন এবং মনে করেন, দলকে জোর করে ফিরানো উচিত নয়।
তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৫০ হাজার নেতাকর্মী ভারতের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। বহির্বিশ্বে অবস্থানরত অধিকাংশ নেতা দলের পুনর্গঠনের পক্ষে, তবে শীর্ষ নেত্রী নিজে ফেরার ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করেছেন। আমেরিকায় এক নেতা বলেন, “বাস্তবতা অগ্রাহ্য করলে দল মুসলিম লীগের মতো বিলীন হওয়ার পথে যেতে পারে।”
কূটনীতিকরা বিশেষ করে বলছেন, ভবিষ্যতে সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। বর্তমানে দল কার্যক্রমে নিষিদ্ধ হওয়ায় নির্বাচনে সরাসরি অংশগ্রহণ সম্ভব নয়। তাই বিকল্প পথ খুঁজে দেশকে জাতীয় ঐক্য ও দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতার দিকে এগোতে হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, শেখ হাসিনা এখন ‘ছায়া’ কৌশল প্রয়োগ করছেন। তিনি চাইছেন দেশের ক্ষমতাসীন নেতা-কর্মীরা বিচলিত না হন। ঢাকায় রাজনৈতিক বাতাসে কিছু শীর্ষ নেতা নির্দিষ্ট যোগাযোগ রাখছেন, যেখানে ক্ষমা ও মীমাংসার দিকেও আলাপ চলছে। ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ এক শীর্ষ নেতা বলেন, “আমরা প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না; যারা জুলুম করেছে, আমরা তাদের ক্ষমা করেছি।”
আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে দু’টি বড় পথ স্পষ্ট-একটি শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন ও তার নেতৃত্বে পুনর্গঠন, আর অন্যটি নেতৃত্বে পরিবর্তন এনে দলকে নতুনভাবে গঠন। রাজনৈতিক বাস্তবতা, তরুণ নেতৃত্বের মনোভাব এবং আন্তর্জাতিক অবস্থান বিবেচনায় রেখে দলকে স্থিতিশীল করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পরবর্তী প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে ভেতরের কৌশল, আন্তর্জাতিক সংলাপ ও সময়ের ওপর নির্ভর করবে।
ভিওডি বাংলা/জা