জাবিতে জাতীয় নীতি প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সিনেট হলে অনুষ্ঠিত হলো ন্যাশনাল পলিসি কমপিটিশন ২০২৫ এবং বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে সকাল ১০টায় শুরু হয়ে দিনব্যাপী এ আয়োজন শেষ হয় বিকেল ৩ টায়।
এবারের প্রতিযোগিতার মূল প্রতিপাদ্য ছিল “বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি: জুলাই-পরবর্তী সময়ে জাতীয় স্বার্থ ও বৈশ্বিক সম্পর্কের নতুন সংজ্ঞা”।
অনুষ্ঠানটি জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হয়। স্বাগত বক্তব্য প্রদানের পর ফাইনালিস্ট দলগুলো ১৫ মিনিটের সেশনে তাদের নীতি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান জাতির ওপর স্থায়ী ছাপ রেখে গেছে। এটি ছিল একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা, যা কোনো নেতা বা রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব ছাড়াই সংগঠিত হয়েছিল। দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে অংশ নিয়েছিলেন ১৫ বছরের বঞ্চনা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য।”
তিনি আরো বলেন, আন্দোলনের কোনো আনুষ্ঠানিক ইশতেহার না থাকলেও এর মূল চালিকাশক্তি ছিল ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা উৎখাত, ভারতের আগ্রাসী প্রভাব প্রতিহত করা এবং একটি নতুন বাংলাদেশ গঠন।
যুবসমাজের ভূমিকার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “যুবকদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে, বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বিষয়ে, যাতে তারা প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারে এবং জাতি গঠনে অবদান রাখতে পারে।”
সবশেষে তিনি বলেন, “যেসব তরুণরা জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে রক্ত দিয়ে দেশের দ্বিতীয় মুক্তি অর্জন করেছে, তাদের আকাঙ্ক্ষার সাথে সামঞ্জস্য রেখে নীতিনির্ধারকদের অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন করতে হবে। যদি নতুন প্রজন্মকে উপেক্ষা করা হয়, তবে এই বিপ্লবের চেতনা হারিয়ে যাবে।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের নীতি কাঠামো এখনো কিছু সীমাবদ্ধতার মধ্যে রয়েছে, বিশেষ করে একটি স্পষ্ট আন্তর্জাতিক কাঠামোর অভাবে। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি অবশ্যই পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে গড়ে তুলতে হবে এবং অংশীদারদের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।”
তিনি জনগণের ঐক্যের ওপর জোর দিয়ে বলেন, “কেউ এসে আমাদের পরিবর্তন করবে না, আমাদের নিজেদেরকেই পরিবর্তন করতে হবে। সবাই একত্রিত হয়ে ফ্যাসিবাদকে উচ্ছেদ করেছিল, কিন্তু এখনো এক বছরও পূর্ণ হয়নি, তার আগেই নানা অজুহাতে বিভক্তি দেখা দিচ্ছে। এটি হতাশাজনক এবং সম্মিলিত সংহতির মাধ্যমে এর সমাধান করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “শিক্ষা কোনো কাজে আসবে না যদি তা নৈতিকভাবে সৎ নাগরিক তৈরি করতে না পারে। আজকের এই অনুষ্ঠান আমাদের অনেক মূল্যবান শিক্ষা দিয়েছে। যদি আমরা সেখান থেকে একটি শিক্ষা হলেও জীবনে প্রয়োগ করতে পারি, সেটাই হবে প্রকৃত সফলতা।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এম. মাহফুজুর রহমান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ, ট্রেজারার অধ্যাপক ড. আব্দুর রব এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাহবুব-উল-আলম।
আয়োজকদের মতে, এই প্রতিযোগিতার মূল উদ্দেশ্য ছিল তরুণ শিক্ষার্থীদের জাতীয় স্বার্থ ও বৈশ্বিক কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে অংশগ্রহণমূলক নীতি প্রণয়নের চিন্তাভাবনায় উৎসাহিত করা।
ফলাফল ঘোষণা এবং পুরস্কার বিতরণের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ