বাতিল হতে পারে ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল!


গত ৯ সেপ্টেম্বর বহু আলোচনা-সমালোচনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন-২০২৫। বহুল কাঙ্খিত এই নির্বাচনে সবাইকে অবাক করে দিয়ে ভূমিধ্বস বিজয় অর্জন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির সমর্থিত প্যানেল এবং হলগুলোতেও স্বতন্ত্র প্রার্থী দাবি করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এক প্রকার কপটতার আশ্রয় নেয় তারা।
এদিকে নির্বাচনকালীন পরিবেশ নিয়ে পূর্বেই বেশ শঙ্কা প্রকাশ করেছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদ ছাত্রদল, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোটসহ অন্যান্য বাম ছাত্র সংগঠনগুলো। তাদের অভিযোগ ছিল ক্যাম্পাসে শিবিরের একক আধিপত্য এবং মব সন্ত্রাসের মতো কার্যক্রম বন্ধ না করতে পারলে তার গুরুতর প্রভাব পড়বে ডাকসু নির্বাচনে। তাই প্রসাশনের কাছে নির্বাচনকালীন পরিবেশ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ রাখার বারংবার আহ্বান জানিয়ে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করে এইসব ছাত্র সংগঠনগুলো।বাংলাদেশি পোশাক।
সম্প্রতি ডাকসু নির্বাচনে অনিয়মের সীমাহীন অভিযোগ তোলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত আবিদ-হামিম-মায়েদ পরিষদ। গত ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা অন্তত ১৫ টি অভিযোগের কথা উল্লেখ করেন। যেখানে সবথেকে গুরুতর অভিযোগটি হলো নীলক্ষেতস্থ গাউসূল আজম মার্কেটে নির্বাচনের ব্যালট পেপার প্রাপ্তি। এছাড়া বিতর্কিত এই নির্বাচনে ব্যবহার করা হয় অস্বচ্ছ ব্যালট বাক্স। যা তৈরি করে ব্যাপক অনিশ্চয়তা।বাংলাদেশি পোশাক।
আনুষ্ঠানিক এই অভিযোগের অন্তত দুইদিন পর অবশেষে নীরবতা ভেঙে গতকাল মধ্য রাতে 'অভিযোগের জবাব দেওয়া হয়েছে' নামক একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেই বিজ্ঞপ্তিতে তাঁরা জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫-পরবর্তী বিভিন্ন অভিযোগ ও জিজ্ঞাসার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। তারই ধারাবাহিকতায় গঠনতন্ত্রের ৬৯ নম্বর ধারার আলোকে ১৫টি অভিযোগ ও জিজ্ঞাসার বিষয়ে আজ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, বৃহস্পতিবার লিখিত জবাব প্রদান করা হয়েছে। বাকী অভিযোগ ও জিজ্ঞাসার বিষয়েও ক্রমান্বয়ে জবাব দেয়া হবে।
নীলক্ষেতে ব্যালট পেপার পাওয়া নিয়ে নির্বাচনের দিনই অভিযোগ করেছিলেন ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল তবে ইনিয়ে বিনিয়ে দায়সারাভাবে সেই অভিযোগকে নাকচ করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রধান রিটানিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ জসীমউদ্দিন বলেন, নীলক্ষেতে প্যালট পেপার পাওয়ার কোন যৌক্তিকতাই নেই। তার দাবি, সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই ছাপানো হয়েছে ব্যালট পেপার যা নীলক্ষেতে পাওয়া সম্ভব নয়।
এদিকে সম্প্রতি দেশের একটি জাতীয় গণমাধ্যম-এর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ইতোমধ্যেই গণমাধ্যমটির হাতে এসেছে নীলক্ষেতে ব্যালট পেপার পাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। অনুসন্ধানে জানা যায়, দায়সারাভাবে ঢাবি প্রশাসন অরক্ষিত অবস্থায় ব্যালট পেপার ছাপিয়েছে। এমনকি ব্যালটের সংখ্যা নিয়ে ঢাবি প্রশাসন এবং ছাপাখানা প্রতিষ্ঠানের তথ্যে রয়েছে আকাশ-পাতাল গড়মিল। অনুসন্ধানে উঠে আসে, নীলক্ষেতের জালাল প্রিন্টিং প্রেস ফেরদৌস ওয়াহিদ নামক এক ব্যক্তির মাধ্যমে ব্যালট পেপার ছাপানোর কাজ পান। যেখানে তার ব্যালট ছাপানোর সংখ্যা ৯৬ হাজার। এদিকে সেই পেপার কাটিংয়ের কাজ পান মক্কা পেপার হাউস। মক্কা পেপার হাউসের দাবি তাঁরা কাটিং করেছে ৮৮ হাজার ব্যালট পেপার। তবে প্রশ্ন হলো বাকি ৮ হাজার ব্যালট পেপার কোথায় গেল?
এদিকে ঢাবি প্রশাসনের থেকে ব্যালট পেপার ছাপানোর জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত আনজা কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান জাহিদ হোসেন দাবি করেন তিনি ১ লাখ তেপ্পান্ন হাজার ব্যালট ছাপিয়েছেন।
এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিটিতে বলা হয়েছে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, ব্যালট পেপার সংক্রান্ত যে অভিযোগটি উঠেছে, তা কমিশন অতীব গুরুত্বসহকারে পর্যবেক্ষণ ও তদন্ত করছে। ইতোমধ্যে এই বিষয়ে অধিকতর তদন্তের কাজ চলমান রয়েছে। শিগগিরই একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কমিশন সকল বিষয়ে বিস্তারিত উত্তর প্রদান করবে।
গত ১৯ সালের কারচুপির নির্বাচনেও যেখানে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স রাখা হয়েছিল সেখানে এই নির্বাচনে অস্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোট দিতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। যার ফলে ভোট কারচুপির সমূহ সম্ভাবনাকে পূর্বেই জানিয়েছিল ছাত্রসংগঠনগুলো। তবে বিষয়টি আমলে না নিয়ে এক প্রকার জোরপূর্বক সেই ব্যালটেই ভোট দিতে বাধ্য করে প্রশাসন। তাছাড়া নির্বাচনের দিন এজেন্ট বের করে দেওয়া এবং অনুমতি না থাকা স্বত্তেও শিবিরের ভিপি প্রার্থীর ভোট কেন্দ্রের ভেতরে অবস্থান নিয়ে তীব্র ক্ষোভ দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
কেন্দ্রীয় ডাকসু ছাড়াও হলগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থী পরিচয় দিয়ে স্বতন্ত্র পরিচয়ে হল সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া প্রার্থীদের নিয়েও শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে ব্যাপক ক্ষোভ। কেননা তাঁরা সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দিয়ে সত্যিকারের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন বলে দাবি করেছেন অনেক শিক্ষার্থী।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ