মাদারীপুরে এসিল্যান্ড না থাকায় সেবা থেকে বঞ্চিত সেবাপ্রত্যাশীরা


মাদারীপুর সদর উপজেলা ভূমি অফিসে চার মাস ধরে নেই সহকারী কমিশনার (ভূমি)। এতে আটকে আছে দুই হাজারের বেশি নামজারি আবেদন ও শত শত মিসকেস। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হলেও কাঙ্ক্ষিত সেবা মিলছে না বলে অভিযোগ সেবাপ্রত্যাশীদের। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানানো হলেও এখনো সমাধান হয়নি।
সরেজমিনে সদর উপজেলার মধ্যচক গ্রামের নুরুল ইসলাম বেপারী এবং দক্ষিণ খাগছাড়া এলাকার শাহআলম ঠাকুর জানান, তারা বহুবার উপজেলা ভূমি অফিসে গিয়ে সেবা পাননি। আসা-যাওয়ায় অর্থ ব্যয় হলেও কাঙ্ক্ষিত কাজ হয়নি। তাদের মতো আরও অনেকে আবেদন করেও নির্ধারিত সময়ে নামজারি ও মিসকেসের সমাধান না পাওয়ায় পিছিয়ে যাচ্ছে অন্যান্য কার্যক্রমও।
জানা যায়, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফাতেমা তুজ জোহরা সানিয়া চার মাস আগে আইন প্রশিক্ষণের জন্য কর্মস্থল ত্যাগ করেন। এরপর ইউএনওকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হলেও দুটি দফতরের কাজ একসাথে সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এতে নামজারি, খাজনা আদায়, জমির পরিমাণ নির্ধারণ ও খতিয়ান সংশোধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। জমি ক্রয়-বিক্রয়ও কমে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকারি রাজস্ব।
বর্তমানে সদর উপজেলা ভূমি অফিসে দুই হাজার নামজারি ও ৩৫০ মিসকেসের আবেদন জমা রয়েছে। আগামী ৫ অক্টোবর নতুন এসিল্যান্ড যোগদানের কথা রয়েছে। পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি বা জমি ক্রয়ের পর নামজারি বাধ্যতামূলক। এজন্য ১ হাজার ১৭০ টাকার বিনিময়ে ২৮ কার্যদিবসের মধ্যে নামজারি সম্পন্ন হওয়ার কথা।
ভুক্তভোগী নুরুল ইসলাম বেপারী বলেন, কয়েক মাস ধরে নেই এসিল্যান্ড। তাই আমাদের কাঙ্ক্ষিত সেবাও মিলছে না। অফিসে গেলে বলে স্যার ট্রেনিং-এ গেছে। এজন্য আমাদের কাজও আটকে আছে।
শাহআলম ঠাকুর বলেন, আমি একটি মিসকেসের আবেদন করেছি ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে। এ নিয়ে পাঁচবার অফিসে এসেছি। কিন্তু কাজটি আজও হয়নি। কবে হবে তাও জানি না।
লিটন শেখ নামের এক সেবাপ্রত্যাশী বলেন, আমি কয়েক মাস ধরে মিউটেশনের জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু কোনো সুফল পাইনি। অফিসে গেলেই বলে এসিল্যান্ড নেই। আমরা এখন কোথায় যাবো?
মেহেদি হাসান নামের আরেক ভুক্তভোগী বলেন, এসিল্যান্ড না থাকার কারণে আমাদের কোনো কাজই হচ্ছে না। আমরা চরম বিপদে আছি। দ্রুত এসিল্যান্ড চাই।
ইউপি সদস্য জাফর দেওয়ান বলেন, আমার একটি মিউটেশন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এসিল্যান্ড না থাকায় কাজটি হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে ঘুরছি, আসি আর যাই, কোনো কাজই এগোচ্ছে না।
তবে কাজের ধীরগতি অস্বীকার করে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াদিয়া শাবাব বলেন, সাধ্যমতো সেবা দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনিক দফতরের কাজ শেষে ফাঁকে ফাঁকে এসিল্যান্ড অফিসের কাজ করা হয়। কিছুটা বিলম্ব হলেও কাগজপত্র যাচাই করে নামজারি ও মিসকেসের সমাধান করা হচ্ছে।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন আক্তার বলেন, নতুন করে এসিল্যান্ড নিয়োগ দিতে মন্ত্রণালয়ে বলা হলেও পদশূন্য না হওয়া এবং বেতন জটিলতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। শুধু মাদারীপুর সদর নয়, জেলার পাঁচটি উপজেলার মধ্যে তিনটিতে নেই সহকারী কমিশনার (ভূমি)। আগামী ৫ অক্টোবর দুই উপজেলায় এসিল্যান্ড যোগদান করবেন। তখন এ সমস্যা অনেকটাই কেটে যাবে।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ