বাংলাদেশে নির্বাচন ব্যবস্থা
পিআর পদ্ধতি এবং আওয়ামী লীগের ফিরে আসা


নির্বাচনী ব্যবস্থা হলো সাংবিধানিক নিয়ম অনুসরণ করে জনগণের মতামত জানাবার ব্যবস্থা। ভোট একটি দেশের জনগণের অন্যতম গণতান্ত্রিক অধিকার। এর মাধ্যমে জনগণ কোন ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় আসার জন্য নির্বাচিত করে।
বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত নির্বাচনী ব্যবস্থাগুলোর মধ্যেঃ
(১) সংখ্যাগরিষ্ঠ ভিত্তিক ব্যবস্থা ( Majoritarian systems) বা FPTP ( First past the post)
(২) আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা ( PR - Proportional Representation) এবং
(৩) মিশ্র বা সমন্বিত ব্যবস্থা ( Mixed systems) অন্যতম।
সম্প্রতি আমাদের দেশে নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। বিশেষ করে পিআর পদ্ধতি নিয়ে। বর্তমানে বিশ্বের মোট ১৯৫ টি দেশের মধ্যে ইউরোপ, আফ্রিকার অনেকগুলো দেশে এবংদক্ষিণ এশিয়ার ৩ টি দেশে PR পদ্ধতি আংশিক কিম্বা পুরোপুরি চালু আছে। কিন্তু বাংলাদেশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া,পাকিস্তান,কানাডা, ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভিত্তিক ব্যবস্থা বা Majoritarian systems পদ্ধতি বা FPTP ( First past the post) চালু আছে।
সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা PR পদ্ধতির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এর মধ্য দিয়ে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের যথাযথ প্রতিফলন থাকে, যেখানে ভোটারের প্রতিটি ভোট প্রার্থী বা দল হেরে গেলেও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
পিআর হলো এমন একটি নির্বাচন পদ্ধতি যেখানে জনগণ সরাসরি পার্থীকে নয় বরং দলকে ভোট দেয়। তারপর যেই দল মোট যত শতাংশ ভোট পায়, সেই দল সংসদের ঠিক তত শতাংশ আসন পায়।
কিন্তু FPTP ব্যবস্থায় সেটি থাকে না। এই পদ্ধতিতে ভোটাররা নিজেদের পছন্দের একজন মাত্র পার্থীকে ভোট দিতে পারেন। পার্থীদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পান, তিনিই বিজয়ী হন। এভাবে যেই দল ৫০% এর বেশি আসন পায় তারাই সরকার গঠন করে।
এ কারণেই ছোট দলগুলোর জন্য পিআর পদ্ধতি একটি কার্যকর ব্যবস্থা বলে মনে করা হয়। তবে এখানে প্রশ্ন হলো, এটা বাস্তবায়নের জন্য যে রাষ্ট্রকাঠামো ও সাংবিধানিক ব্যবস্থা প্রয়োজন, সেই অবকাঠামো কি বাংলাদেশের আছে?
তাত্ত্বিকভাবে বিশ্লেষণ করলে মনে হবে, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কার্যকর একটি পদ্ধতি। অনেক দেশেই এই পদ্ধতি বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখছে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো একটি দেশের প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতায়, হুট করে আবেগের বশবর্তী হয়ে PR পদ্ধতি নামের একটি নতুন ব্যবস্থার প্রচলন বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে ভয়ংকর পরিণতি বয়ে নিয়ে আসতে পারে।
বাংলাদেশে যদি বর্তমানে পিআর সিস্টেম চালু হয়, তাহলে আওয়ামী লীগের ফিরে আসার সম্ভাবনা কতটুকু?
আমি মনেকরি, PR পদ্ধতিতে আওয়ামী লীগের ফিরে আসার সম্ভাবনা অত্যন্ত প্রবল। কেননা, আমরা বাংলাদেশের সকল মানুষ বাঙালি এবং মুসলিম হলেও আওয়ামী লীগের সকল নেতা - কর্মীর DNA সম্পূর্ণ ভিন্ন। তারা সম্পূর্ণরুপে শেখ মুজিব এবং শেখ হাসিনার চরিত্রের ধারক এবং বাহক।
আওয়ামী লীগের চরিত্র বুঝতে হলে আমাদের মানব শরীরে DNA এর ভূমিকা সম্বন্ধে সামান্য জ্ঞান থাকা পরয়োজন।
DNA এর একটি অংশ হচ্ছে জিন (Gene) ; যা ক্রোমোজোমের মধ্যে থাকে এবং বংশগতির ধারক এবং বাহক। কেননা DNA এর মাধ্যমে জিন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সঞ্চারিত হয় এবং জীবের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করে অর্থাৎ আমাদের পূর্বপুরুষদের থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত হয়। আর তাই, শেখ মুজিব, শেখ হাসিনা এবং তার দলের সকল স্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের DNA এক এবং অভিন্ন।
আওয়ামী লীগ অর্থাৎ শেখ হাসিনা তৃতীয় দফায় ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠন করেন এবং ২০২৪ সালের ৫ ই আগষ্ট পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন। মোট সময়কাল ১৫ বছর ৭ মাস। এই দীর্ঘ সময়ে আওয়ামী লীগের নেতা - কর্মীরা বিশেষ সুবিধা ভোগ করেছে এবং পাশাপাশি একটি বিশাল সুবিধাভোগী শ্রেণী তৈরি হয়েছে। এরা সবাই মনেপ্রাণে চায় আওয়ামী লীগ আবারও ফিরে আসুক এবং তারজন্য তারা যেকোনো ধরনের ত্যাগ স্বীকারেও প্রস্তুত। আর তাই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলেও শেখ হাসিনা যে কোন Form - এ, যে কোন Formate - এ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবেই। যেহেতু আমাদের দেশের জনগণের একটি অংশ শেখ হাসিনাকে পূতপবিত্র মনে করে সেহেতু তারা শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থীকেই ভোট দিবে। এখন যদি PR পদ্ধতিতে নির্বাচন হয় এবং তারা যদি সংখ্যায় ১০% হয় কিম্বা ২০% হয়, তাহলে সংসদের ৩০০ আসেনর মধ্যে আওয়ামী লীগ অর্থাৎ শেখ হাসিনা পাবে যথাক্রমে ৩০ টি কিম্বা ৬০ টি আসন ; যা জুলাই - আগষ্ট গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে আমাদের দেশ ও জনগণের জন্য অশনিসংকেত এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব পুনরায় হুমকির মুখে পড়বে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে FPTP (First Past The Post) ব্যবস্থায় নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ বা আওয়ামী লীগের যেকোনো প্রতিনিধি কোনভাবেই কোনো নির্দিষ্ট আসনে এককভাবে জয়লাভ করার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীন থেকে ক্ষীনতর হওয়ায় তারা আর কোনোভাবেই সংসদে ফিরে আসতে পারবে না।
সুতরাং, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সহ যে সমস্ত দল পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক মাঠে সোচ্চার আছেন এবং পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দেওয়ার জন্য সরকার এবং বিএনপিকে বাধ্য করতে চাচ্ছেন, তারা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে, আওয়ামী লীগ যে পুনরায় নিশ্চিতভাবে ফিরে আসবে, সেই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভেবে দেখবেন কি?
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ