পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন, ওসিসহ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা নির্দেশ

মাদকসহ তিন যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়ায় মাদারীপুরের রাজৈর থানার পরিদর্শক তদন্ত সঞ্জয় কুমার ঘোষসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে পুলিশ সুপারকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশও দেয়া হয়েছে।

বিষয়টি জানাজানি হলে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে রিভিশন দাখিল করেছেন অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা। এ নিয়ে আগামী মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত।

এ দিকে এ ঘটনায় রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) তদন্তপূর্বক দোষীদের বিচার দাবি করেছে ভুক্তভোগীর পরিবার।

এর আগে গত ২৫ সেপ্টেম্বর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. এলিয়াম হোসেন অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দেন।

জানা যায়, গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১১টার দিকে মাদারীপুরের রাজৈর পৌরসভার স্বমঙ্গল এলাকায় মাদক উদ্ধার অভিযানে যায় থানা পুলিশ। এর নেতৃত্ব দেন রাজৈর থানার পরিদর্শক সঞ্জয় কুমার ঘোষ। এ সময় থানার এসআই তরিকুল ইসলাম, এসআই এ এইচ এম কামরুজ্জামান, এএসআই জাহিদুল ইসলামসহ সঙ্গীয় সদস্যরা ভ্রাম্যমাণ ফল বিক্রেতা ইলিয়াস খালাসি, দুবাই প্রবাসী সুজন মোল্লা ও স-মিলের শ্রমিক সুমন খাঁকে আটক করে।

তাদের তল্লাশি করে ৫০ পিচ ইয়াবা উদ্ধারের দাবি করে পুলিশ। এ ঘটনায় পরদিন এসআই এ এইচ এম কামরুজ্জামান বাদী হয়ে রাজৈর থানায় আটকদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা করেন। পরে আদালতে হাজির করা হলে তাদের বিচারক কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

তবে আসামিপক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়, গ্রেপ্তার তিনজনকে থানায় নিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে পুলিশ। এরমধ্যে ইলিয়াস খালাসির বাম হাতের কব্জি থেকে কনুই পর্যন্ত পিস্তলের বাট দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। আর বাম পায়ের উরুতে বুটের লাথি মারা হয়েছে। এ সময় বিচারক আসামির শরীরের দৃশ্যমান জখম দেখতে পান। তাৎক্ষণিক জেলার সিভিল সার্জনকে আসামির চিকিৎসা ও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেডিকেল রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দেন বিচারক।

সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শরিফুল আবেদীন কমল আসামিকে নির্যাতনের সত্যতা পাওয়ায় মেডিকেল রিপোর্ট ১৯ সেপ্টেম্বর আদালতে পাঠান। 

এরইপ্রেক্ষিতে গত ২৫ সেপ্টেম্বর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. এলিয়াম হোসেন অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দেন। বিষয়টি জানাজানি হলে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে রিভিশন দাখিল করেছেন অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা। যা আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত।

ইলিয়াস খালাসির ভাবী তানজিলা বেগম বলেন, আমার দেবরসহ তিনজনকে থানায় নিয়ে বেদম মারধর করেছে পুলিশ। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত তৈরি করেছে। এ ব্যাপারে আমরা ন্যায় বিচার আশা করছি।

ইলিয়াস খালাসির স্ত্রী শাহিদা আক্তার বলেন, পুলিশ আমার স্বামীসহ তিনজনকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় এক দফা মেরেছে। আবার থানায় নিয়ে গিয়ে দ্বিতীয় দফায় বাম হাতের কব্জি থেকে কনুই পর্যন্ত পিস্তলের বাট দিয়ে আঘাত করেছে। আর বাম পায়ের উরুতে বুটের লাথি মারা হয়েছে। এই ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মফিজুর রহমান বলেন, পুলিশের হেফাজতে নিয়ে আসামিদের নির্যাতনের কোনো এখতিয়ারের সুযোগ নেই। পুলিশ যেটা করেছে সেটি অন্যায় করেছে। ভিকটিমের জবানবন্দি শুনে আদালত অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দিয়েছেন। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে রিভিশন দাখিলও হয়েছে। আশা করছি জেলা ও দায়রা জজ আদালত সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন। এতে আমরা ন্যায় বিচার পাবো।

মাদারীপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত এর পেশকার মাইনুল ইসলাম জানান, বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত যে আদেশ দিয়েছেন তা সঠিকই ছিল। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি রিভিশন করা হয়। যার শুনানি ৩০ সেপ্টেম্বর হবে। ওইদিনই আদালত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।

প্রসঙ্গত, আইন অনুযায়ী গ্রেপ্তার আসামির শরীরে দৃশ্যমান জখম থাকলে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকের মাধ্যমে পরীক্ষা ও চিকিৎসা দেয়ার নিয়ম থাকলেও তা অনুসরণ করা হয়নি। এদিকে পুলিশের দায়ের করা মাদক মামলায় তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় থানার এসআই মোস্তফা কামালকে।

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ