খাগড়াছড়ি-গুইমারার সহিংসতা নিয়ে সেনাবাহিনীর বিবৃতি


পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল জাতিগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনাবাহিনী যে কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ অধিদপ্তর (আইএসপিআর)।
রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে সেনাবাহিনীর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় সাম্প্রতিক সহিংসতা প্রসঙ্গে এ তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে মোটরসাইকেল চালক মামুন হত্যার পর থেকেই ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো এলাকায় অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে আসছে। ওই ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে তিনজন নিহত ও অনেকে আহত হয়। এক বছর পূর্তিতে এ বছর সংগঠনটি পুনরায় বিক্ষোভ, মিছিল ও হরতালের ডাক দিয়ে একই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করে।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির সিঙ্গিনালা এলাকায় এক স্কুলছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে সন্দেহভাজন শয়ন শীলকে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় পুলিশ গ্রেপ্তার করে। যদিও এ মামলা এখনও তদন্তাধীন, ইউপিডিএফ অঙ্গসংগঠন পিসিপি এ ঘটনায় আন্দোলনের ডাক দেয়।
২৪ থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও অবরোধ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। এ সময় দেশি-বিদেশি কিছু ব্লগার এবং প্রবাসী ব্যক্তির অনলাইনে উসকানিমূলক বক্তব্যও সহিংসতা বাড়িয়ে তোলে। ২৬ সেপ্টেম্বর অবরোধ চলাকালে ইউপিডিএফ কর্মীদের প্ররোচনায় উশৃঙ্খল লোকজন টহলরত সেনাদলের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে তিন সেনা সদস্য আহত হলেও সেনারা ধৈর্য্য ও সংযম প্রদর্শন করে বলপ্রয়োগ থেকে বিরত থাকে।
২৭ সেপ্টেম্বর পুনরায় দাঙ্গার চেষ্টা হলে ইউপিডিএফ কর্মীরা সাধারণ মানুষের ওপর গুলি, ভাঙচুর ও অ্যাম্বুলেন্সে হামলা চালায়। ফলে খাগড়াছড়ি পৌর এলাকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিস্থিতি তৈরি হয়। বিকেল নাগাদ জেলা প্রশাসন খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় ১৪৪ ধারা জারি করে। রাতভর সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ যৌথভাবে কাজ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
২৮ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে ইউপিডিএফ গুইমারার রামসু বাজার এলাকায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে অবরোধ শুরু করে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাদের সঙ্গে স্থানীয় বাঙালি জনগোষ্ঠীর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। সেনারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গেলে ইউপিডিএফ কর্মীরা দেশীয় অস্ত্র, ইটপাটকেল, লাঠিসোটা নিয়ে সেনাদের ওপর হামলা চালায়। এতে তিন কর্মকর্তা ও সাত সেনা সদস্য আহত হন। একই সময়ে বিজিবির গাড়িও ভাঙচুর করা হয়।
১১টার দিকে পাশের পাহাড় থেকে ইউপিডিএফের সশস্ত্র দল প্রায় ১০০-১৫০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এতে সংঘর্ষে জড়িয়ে থাকা স্থানীয় মানুষজনও গুলিবিদ্ধ হয়। সেনারা দ্রুত অভিযানে গেলে সশস্ত্র দল পালিয়ে যায়।
এ সময় বহিরাগত দুষ্কৃতকারীরা রামসু বাজার ও আশপাশের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
বিবৃতিতে সেনাবাহিনী জানায়, ইউপিডিএফ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো পরিকল্পিতভাবে নারী ও স্কুলগামী শিশুদের নাশকতায় জড়াতে বাধ্য করছে। একইসঙ্গে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রসহ এলাকায় প্রবেশ করানোর প্রমাণও পাওয়া গেছে। বিজিবি কাপ্তাই ব্যাটালিয়নের চেকপোস্টে সম্প্রতি ইউপিডিএফের পরিবহিত বিপুল পরিমাণ অস্ত্রও জব্দ করা হয়।
আইএসপিআর আরও জানায়, ১৯ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ধারাবাহিক সহিংসতা পার্বত্যাঞ্চল অস্থিতিশীল করার বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ। এ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রমাণ নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
সেনাবাহিনী বিবৃতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ মানুষকে সংযত থাকার আহ্বান জানায়। একই সঙ্গে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সেনা, বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানানো হয়।
শেষে বলা হয়, সকল অপপ্রচার, উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড সত্ত্বেও সেনাবাহিনী বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য এই অংশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
ভিওডি বাংলা/জা