দুর্গাপুরের একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হাঁটু পানি, দুর্ভোগে শিক্ষার্থীরা


অতি ভারি কিংবা মাঝারি মাত্রায় বৃষ্টি হলেই বিদ্যালয় মাঠে জমে হাঁটু সমান পানি। এতে করে শিক্ষার্থীসহ দুর্ভোগ পোহাতে হয় শিক্ষকদেরও। ফলে বিদ্যালয়ে যাতায়াতে বিড়ম্বনা সৃষ্টি সহ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এ কারণে এই সময়টাতে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও তুলনামূলক কম।
বিদ্যালয় মাঠে জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ মাঠ নিচু হওয়া ও পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাব রয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও এই উপজেলায় ফসলি জমি ও খাল-নালা দখল করে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খননের কারণে বৃষ্টি কিংবা বন্যার পানি সমতলে নামতে পারেনা। এটিও জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন শিক্ষানুরাগী সচেতন মহল। রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে উপজেলার জয়কৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় বিদ্যালয়ের মাঠে হাঁটু সমান পানি। পানি মাড়িয়েই বিদ্যালয়ে এসেছেন শিক্ষার্থীরা। জলাবদ্ধতার এই সমস্যা এবারই প্রথম এমনটি নয়, এই সমস্যা দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে। বিদ্যালয়ের মাঠ সংস্কারের জন্য প্রকল্প নেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়না। জলাবদ্ধতা নিরসনেও নেয়া হয়না কোনো পদক্ষেপ। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই হাঁটু পানি মাড়িয়ে ক্লাসে আসতে হয় এই বিদ্যালয়ের অন্তত শতাধিক শিক্ষার্থীকে।
চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাবিয়া খাতুন বলেন, ‘বৃষ্টি হলেই আমাদের স্কুল মাঠে হাঁটু সমান পানি জমে যায়। সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে কোনো রকমে ক্লাসে পৌঁছেছি। অনেক সময় পানিতে পড়ে গিয়ে আমাদের বই, জামা-কাপড় নষ্ট হয়ে যায়।’
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাফিউল আলম সোহাগ বলেন, ‘বর্ষাকালে আমাদের স্কুলের খেলার মাঠে হাঁটু পর্যন্ত পানি জমে। পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। আমরা খেলাধুলা করতে পারি না। অনেক সময় পানির মধ্যে দিয়ে চলাচলের কারণে খোসপাঁচড়া, চুলকানি সহ নানান রোগ দেখা দেয়। এ জন্য আমাদের ক্লাসের অনেকেই ঠিকমতো স্কুলে আসতে চায় না।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেলসাদ আলী জানান, ‘প্রতিবছর বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার কারণে আমাদের বেশ বেগ পেতে হয়। শিক্ষার্থীরা এই সময়টাতে নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসতে চায় না। পানি বাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। এ কারণে শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতি কম থাকে। এ নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে একাধিকবার মৌখিক ভাবে জানিয়ে কিংবা লিখিত আবেদন করেও কোনো প্রতিকার পাইনি।’
এই চিত্র যে শুধু জয় কৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের তা নয়। উপজেলার ভাংগীর পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোলাবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আলীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, কয়ামাজমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পৌর সদরে অবস্থিত দেবিপুর বিএম কলেজ মাঠে গিয়েও একই চিত্র দেখা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক অভিযোগ করেন, বিদ্যালয়ের মাঠ সংস্কারের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দ দেয়া হলেও সেটি কেবল কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে। বাস্তবে কাজ না করেই বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ করেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির লোকজন ও কতিপয় শিক্ষকরা। জলাবদ্ধতা নিরসনে দীর্ঘমেয়াদি কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হয় না। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই বিদ্যালয় মাঠে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
এদিকে, জলাবদ্ধতার কারণ অনুসন্ধানে বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ওইসব এলাকায় সরকারি খাল-নালা দখল করে এমনকি তিন ফসলি জমিতে অপরিকল্পিত ভাবে পুকুর খনন করা হয়েছে। ফলে অতি ভারি কিংবা মাঝারি বৃষ্টিপাত হলেই বন্যা বা জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। গ্রামাঞ্চলে নিচু এলাকা ডুবে জলমগ্ন হয়। মানুষের বসতবাড়ি ডুবে যায়। নিচু এলাকায় অবস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
দুর্গাপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার আসাদুজ্জামান বলেন, ‘অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে বিদ্যালয় মাঠে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। তবে খরা মৌসুমে মাটি ভরাট করে মাঠ উঁচু করার মাধ্যমে সমস্যাটি নিরসনের উদ্যোগ নেয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবরিনা শারমিন বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে জলাবদ্ধতার সমস্যা দেখা দেয়। তাৎক্ষণিকভাবে যেসব বিদ্যালয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব, সেগুলো আমরা সমাধানের চেষ্টা করি। তবে কিছু বিদ্যালয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প গ্রহণের প্রয়োজন হয়। ইতোমধ্যে এমন কিছু বিদ্যালয়ের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ধাপে ধাপে সেসব প্রতিষ্ঠানের জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ করা হবে।’
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ