দুর্নীতিতে জর্জরিত মধুপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস


টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা সাবরেজিষ্ট্রি অফিস এখন অনিয়ম, দুর্নীতি ও ভোগান্তির কেন্দ্রস্থলে পরিনত হয়েছে। সাবরেজিষ্টারের নাম নিয়ে অফিস স্টাফ এবং এক শ্রেণীর দলিল লেখক প্রকাশ্যে ঘুষ আদায় করছেন। ফলে জমি কেনাবেচার জন্য আসা মানুষ চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
জানা যায়, জমির দলিল সম্পাদনের ক্ষেত্রে জমি বিক্রেতার স্বত্ব নিশ্চিত করার জন্য পর্চা, খাজনা-খারিজ, এনআইডি, ছবিসহ আনুসঙ্গিক কাগজপত্র নিশ্চিত হওয়ার পর সরকারি রেজিস্ট্রেশন ফি ১ হাজার একশ টাকা ও ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষেত্রে দলিল মূল্যের সাড়ে ৭ ভাগ ও পৌর এলাকায় সাড়ে ৯ভাগ হারে কর জমা দিতে হয়। তারপরই একটি দলিল সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের কথা। কিন্তু সেই নিয়ম অনেক সময় মানা হয়না।
কোন কাগজের ফটোকপি থাকলে ১০ হাজার, একই দাতার একাধিক দলিল হলে ৩ হাজার, হেবা দলিলের ক্ষেত্রে ৩ হাজার, হেবার ঘোষণাপত্র এবং দানপত্রে আয়কর বা টিন সার্টিফিকেট না থাকলে ৫ হাজার, বিক্রেতার জমির পর্চায় বাবা, মার নাম থাকলে ৫ হাজার, দাদা, দাদি, নানা, নানির নামে পর্চা থাকলে ১০ হাজার, নামের সাথে ডাক নাম যুক্ত থাকলে ৫ হাজার, বন্টন নামা দলিল ও রেজিস্ট্রি বায়নার ক্ষেত্রে ৫ হাজার টাকা অবৈধভাবে আদায় করা হয়।
গত রবিবার ২৮ সেপ্টেম্বর আয়েজউদ্দীন আজাদ নামক একজন জমি ক্রেতা মধুপুর সাবরেজিষ্ট্রি অফিসে জমি ক্রয়ের দলিল করতে গিয়ে চরম হয়রানির শিকার হন।
টাঙ্গাইল জেলা রেজিষ্ট্রারের নিকট লিখিত অভিযোগে তিনি জানান, মধুপুর পৌরশহরের মালাউড়ি মৌজার মুহাম্মদ আব্দুল মজিদের ৬ শতাংশ জমি কেনার জন্য নিয়মানুযায়ী সকল সরকারি ফি ব্যাংকে জমার পর দলিল প্রস্তুত করে নিবন্ধনের জন্য সাবরেজিষ্ট্রারের নিকট কাগজপত্র জমা দেন। দলিল দাতা ৮১ বছর বয়সী আব্দুল মজিদ শারিরীকভাবে অসুস্থ হওয়ায় হুইল চেয়ারে করে দুপুর ১২টায় অফিসে নিয়ে আসা হয়। সাবরেজিষ্ট্রার অঞ্জনা রাণী দেবনাথকে দলিল সম্পাদনের বিষয়ে অবহিত করলে তিনি অফিসের নকলনবীস জসিম উদ্দীনকে দাতার শরিরীক অবস্থা পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জমিদাতা আব্দুল মজিদ হুইল চেয়ারে বসে নকলনবীস জসিম উদ্দীনের নিকট জমি বিক্রির বিষয়ে হা সূচক জবাব দেন। কিন্তু নকলনবীস জসিম উদ্দীন সাবরেজিষ্ট্রার অঞ্জনা রাণী দেবনাথের সাথে শলা পরামর্শ করে এসে দলিল লেখক আব্দুস সামাদ ও জমি ক্রেতা আয়েজউদ্দীন আজাদকে জানান, দাতা শারিরীকভাবে যেহুতে খুব একটা সুস্থ নয়। তাই দলিল সম্পাদন করতে সাবরেজিষ্ট্রারকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হবে।
জমি দাতা ঘুষ দিতে অস্বীকার করলে সাবরেজিষ্ট্রার জমি নিবন্ধন করা যাবেনা বলে দাতাকে সাফ জনিয়ে দেন। শুধু ঘুষ না দেয়ায় তার দলিল সম্পাদন হয়নি বলে অভিযোগ তুলে তিনি তদন্ত ও প্রতিকার দাবি করেন। নকলনবিস মো. জসিম উদ্দিন কোন বক্তব্য দিতে অস্বীকার করেন। দলিল লেখক আব্দুস সামাদ জানান, যা বলার জমির ক্রেতাকে বলেছি। সংবাদকর্মীদের কিছু বলার নেই।
সাবরেজিষ্ট্রার অঞ্জনা রাণী দেবনাথ জানান, দাতা আব্দুস মজিদ শারীরিকভাবে অসুস্থ বলে তিনি এক কর্মচারির মাধ্যমে শুনেছেন। তাই দলিলটি করা হয়নি। অফিসে কেউ ঘুষ নেয়না। কোন অনিয়মও নেই। কেউ এমনটি করে থাকলে ব্যবস্থা নিবেন।
জেলা রেজিষ্ট্রার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ