সহিংসতায় বিপর্যস্ত সাজেক-খাগড়াছড়ির পর্যটন


সম্প্রতি পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে জাতিগত উত্তেজনা ও সহিংসতার কারণে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে খাগড়াছি ও সাজেকভিত্তিক পর্যটন শিল্প। গত ২৩ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর সহিংস পরিস্থিতির কারণে এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক, যার প্রভাব পড়েছে পর্যটননির্ভর অর্থনীতিতে। বন্ধ হয়ে গেছে সাজেকের প্রায় ৩০০ হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টের বুকিং। পর্যটকদের পদচারণা একেবারেই নেই, থেমে গেছে শতাধিক পর্যটকবাহী গাড়ির চাকা।
সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুবর্ণ দেব বর্মণ বলেন, বর্তমানে সাজেকে কোনো পর্যটক নেই। মঙ্গলবার পর্যন্ত যেসব অগ্রিম বুকিং ছিল, তা সবই বাতিল হয়েছে এবং পর্যটকদের টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, ১ থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত কিছু বুকিং এখনও বাতিল হয়নি, তবে পর্যটকদের অনুপস্থিতি পরিস্থিতির ভয়াবহতা স্পষ্ট করে তুলেছে।
প্রশাসনের সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ সেপ্টেম্বর নিরাপত্তা পরিস্থিতি খারাপ হলে সাজেক থেকে প্রায় ২ হাজার পর্যটককে নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তায় খাগড়াছড়ি সদরে ফিরিয়ে আনা হয়। সাম্প্রতিক সহিংসতার জেরে খাগড়াছড়ি ও সাজেক ছেড়ে গেছেন প্রায় ৪ হাজার পর্যটক।
একসময় পর্যটকে মুখরিত সাজেক এখন নীরব। হোটেল-মোটেল বন্ধ, দোকান-রেস্তোরাঁ তালাবদ্ধ। পর্যটন খাতে জড়িত প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক, গাড়িচালক, হোটেল কর্মচারী এখন কর্মহীন। মালিকরা লোকসানে পড়লেও শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে গিয়ে আর্থিক সংকটে পড়ছেন।
খাগড়াছি রিজিয়নের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. হাসান মাহমুদ বলেন, জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। ১৪৪ ধারা প্রত্যাহারের কার্যক্রম চলমান এবং সাজেকসহ সব পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেয়া হয়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, পর্যটকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও আস্থা ফিরে আসতে সময় লাগবে।
সংঘাত ও সহিংসতার কারণে পর্যটকদের অনুপস্থিতি শুধু তাৎক্ষণিক নয়, দীর্ঘমেয়াদে এই অঞ্চলের পর্যটন শিল্পকে হুমকির মুখে ফেলবে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
প্রবীণ সাংবাদিক চৌধুরী আতাউর রহমান বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অস্থিরতা, অবরোধ এবং সহিংসতার কারণে সাজেক ভ্যালির মতো জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলো পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে। এতে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ।
পূজার ছুটিতে সাজেক-খাগড়াছড়িতে হাজারো বুকিং বাতিল হয়েছে। পর্যটন নির্ভর পরিবারগুলো আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের মতে, এই আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘ সময় লাগবে।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ