• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১
টপ নিউজ
ছনুয়া ইউনিয়নে নিজ উদ্যোগে রাস্তাঘাট মেরামত কিশোরগঞ্জে দূর্গামন্ডপ পরিদর্শন করলেন সাবেক এমপি বিলকিস ইসলাম পুলপাড় রায়ের বাজার মন্দির পরিদর্শনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম মালদ্বীপে রফিকুল আলম মজনুকে সংবর্ধনা শারদীয় দুর্গাপূঁজা উপলক্ষে ঢাকেশ্বরী মন্দির পূঁজা মন্ডপ পরিদর্শনে বিএনপি চীফ প্রসিকিউটর বনাম শেখ হাসিনার মামলার ৫৪তম সাক্ষ্যগ্রহণ আজ মেধা কাজে লাগালে বিশ্বে স্বনামধন্য হওয়া যায় - আবদুস সালাম হোয়াটসঅ্যাপের নতুন চমক ‘শিডিউল কল’ ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের পূজা প্রস্তুতি পরিদর্শন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের দায়িত্ব রাষ্ট্র নেবে: আমিনুল হক

৪০ লাখ টাকার মাছ নিয়ে বাড়ি ফিরলেন জেলেরা

হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি    ৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:১১ পি.এম.
ছবি-ভিওডি বাংলা

প্রায় চার মাস সাগরে মাছ শিকারের জীবনযুদ্ধে লড়াই করেছেন নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার এমভি আহাদ-২ ট্রলারের ২১ জন জেলে। উত্তাল তরঙ্গ আর ঘূর্ণিঝড়ের ভয়কে জয় করে তারা সংগ্রহ করেছেন প্রায় ৪০ লাখ টাকার মাছ। খরচ বাদে প্রতিজনের ভাগে এসেছে গড়ে ৪০ হাজার টাকা। 

ট্রলার নিয়ে তারা ফিরেছেন আপন ভিটেমাটিতে। তবে এবারের ফেরা একেবারেই ভিন্ন আঙ্গিকে। পুরো ট্রলার সাজিয়ে, একরকম পোশাক পরে, গান-বাজনা আর নেচে-গেয়ে উৎসবের আমেজে ঘরে ফিরেছেন তারা।

সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৩ অক্টোবর থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। এই আইন অমান্য করলে মৎস্য আইনে রয়েছে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডের বিধান। তাই এ সময়টুকু পরিবারের সঙ্গে কাটানোর জন্য ঘরে ফিরেছেন জেলেরা।

চেয়ারম্যান ঘাটে সরেজমিনে দেখা যায়, এমভি আহাদ-২ ট্রলারটিকে নানাভাবে সজ্জিত করে ফিরছেন জেলেরা। তাদের সবার গায়ে একরঙা পোশাক, মুখে হাসি আর চোখে ফেরার আনন্দ। দৃশ্যটি দেখতে ভিড় করেছেন অসংখ্য মানুষ। গত কয়েক বছর ধরে সরকারি নিষেধাজ্ঞার এই বিরতিকে জেলেরা উৎসবে পরিণত করেছেন।

জেলে মো. রাফুল বলেন, আমাদের সবার বাড়ি হাতিয়া উপজেলায়। প্রায় চার মাস আমরা সাগরে মাছ শিকার করেছি। সাগরের ভেতরে কেমন সময় কাটিয়েছি, তা আল্লাহ আর আমরা ছাড়া কেউ জানে না। ঘূর্ণিঝড়ের সময় তো মনে হয়েছিল- হয়তো আর কেউই বাঁচব না, উদ্ধার হওয়ারও কোনো আশা ছিল না। তাই আজ ঘরে ফেরার আনন্দ আমাদের ভেতরে অন্যরকম অনুভূতি জাগিয়েছে। সেই আনন্দকে ভাগাভাগি করতেই আমরা ট্রলার সাজিয়েছি, একই রকম পোশাক পরেছি।

মো. মামুন নামের এক জেলে বলেন, মাছ ধরতে আমার ভালোই লাগে। চার মাস সাগরে থেকে মাছ শিকার করে হাতে এসেছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। এই টাকায় নতুন একটি জায়গা কিনেছি। নদী ভাঙনে আমাদের আগের বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে, তাই নতুন জায়গা কেনা ছাড়া উপায় ছিল না। সরকার যদি হাতিয়ার নদীভাঙন রোধে উদ্যোগ নিত, তবে আমাদের মতো জেলেদের জীবন অনেক সহজ হতো।

ট্রলারের মাঝি শুভ চন্দ্র দাস বলেন, আমি প্রায় এক দশক ধরে সাগরে মাছ ধরছি। আমাদের এমভি আহাদ-২ ট্রলারটির বয়স মাত্র চার বছর। এখানে আমরা ২১ জন জেলে মিলে রুজিরোজগারের সংগ্রাম চালাই। এই ট্রলারটিই আমাদের জীবনের ভরসা। শেষ দিনের ফেরা স্মরণীয় করে রাখতে বাড়ি ফেরার আগে আমরা পুরো ট্রলারটি সাজিয়েছি। সবাই একই ধরনের পোশাক পরেছি, যেন উৎসবের আবহ তৈরি হয়। আমাদের মালিক আরিফ মাঝিকেও কৃতজ্ঞতা স্বরূপ পাঞ্জাবি উপহার দিয়েছি। এ আয়োজনের সব খরচ আমি নিজেই বহন করেছি।

ট্রলারের মালিক মো. আরিফ মাঝি বলেন, আমি ট্রলারের মালিক হলেও একই সঙ্গে মাঝিও। দীর্ঘদিন ধরে আমরা এই জেলে পেশার সঙ্গেই আছি। আমাদের ২১ জন যেন এক পরিবারের মতো। সব সময় একে অন্যের পাশে থাকি। এ বছর চার মাস সাগরে থেকে পেয়েছি প্রায় ৪০ লাখ টাকার মাছ। যদিও গত বছর এই অঙ্ক ছিল প্রায় ৭০ লাখ। এবারে খরচ হয়েছে প্রায় ১৮ লাখ টাকা। খরচ বাদে প্রতিজনের ভাগে আসবে গড়ে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। তারা সবাই খুশি হয়েছে, আর সেই আনন্দের প্রকাশেই আমরা ট্রলারটিকে সাজিয়েছি।

ব্যবসায়ী মো. আকবর হোসেন বলেন, আজ জেলেদের বিদায়ের উৎসব, আর আগামীকাল থেকেই শুরু হবে ব্যবসায়ী ও দোকানদারদের হালখাতা উৎসব। সাগর ফেরা জেলেরা অবসরের প্রথম চার-পাঁচ দিন ঘরে বসেই কাটান, কোনো কাজকর্ম করেন না। তবে কয়েক দিনের মধ্যেই তারা জাল ও নৌকা মেরামতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, পাশাপাশি সামলান সংসারের অন্যান্য কাজও। এই সময় আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যাওয়া হয়, আবার অনেকে সুযোগটি কাজে লাগিয়ে বিয়েশাদির আয়োজনও করেন।

চেয়ারম্যান ঘাটের আড়ৎদার মাহবুবুল আলম ইউসুফ বলেন, আগে প্রচলিত ছিল, দীর্ঘসময় সাগরে মাছ শিকারের পর জেলেরা বাড়ি ফেরার পথে নৌকা বা ট্রলার সাজিয়ে ঘরে ফিরতেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মাছের পরিমাণ কমে যাওয়ায় সেই রেওয়াজ আজ অনেকটাই হারিয়ে গেছে। তবে এবার সেই ঐতিহ্য আবারও জীবন্ত করে তুলেছে এমভি আহাদ-২ ট্রলার। তাদের সাজসজ্জা দেখতে চেয়ারম্যান ঘাটে উপচে পড়েছে জনতার ভিড়। এমন রঙিন সাজে সজ্জিত ট্রলার দেখতে সত্যিই এক অন্যরকম আনন্দের অনুভূতি জাগে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, ৩ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত মা ইলিশ রক্ষায় নদীতে কঠোর নজরদারি থাকবে। মৎস্য বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে অভিযান চালাবে। আশা করি নিষেধাজ্ঞা সফল হলে প্রচুর পরিমাণ মাছ পাওয়া যাবে। মাছ পেলে জেলে ও সংশ্লিষ্টরা উপকৃত হবে।

ভিওডি বাংলা/জা

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
সাতক্ষীরায় অনুষ্ঠিত হয়েছে ১১তম জাতীয় বিজ্ঞান বিতর্ক উৎসব
সাতক্ষীরায় অনুষ্ঠিত হয়েছে ১১তম জাতীয় বিজ্ঞান বিতর্ক উৎসব
ছনুয়া ইউনিয়নে নিজ উদ্যোগে রাস্তাঘাট মেরামত
ছনুয়া ইউনিয়নে নিজ উদ্যোগে রাস্তাঘাট মেরামত
বিমানবন্দরে আটক চাঁদপুরের যুবলীগ নেতা শাহীন
বিমানবন্দরে আটক চাঁদপুরের যুবলীগ নেতা শাহীন